মহাকালের আবর্তে বিলীন হয়ে গেল আরও একটি খ্রিষ্টীয় বর্ষ। দেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা ঘটনায় স্মরণীয় হয়ে থাকা ২০২৪ সাল বিদায় নিয়েছে। সব দুঃখ-বেদনা ভুলে মধ্যরাতে নতুন স্বপ্ন ও নতুন আশা নিয়ে দেশবাসী বরণ করে নিচ্ছে ২০২৫ সালকে। বিশ্বজুড়ে এবারও কোটি কোটি মানুষ স্বাগত জানাচ্ছে নতুন বছরকে।
বিদায়ি বছরটি রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছিল ঘটনাবহুল। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে টানা প্রায় সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটেছে। জাতীয় জীবনে অভূতপূর্ব এই আন্দোলনই ছিল সবচেয়ে আলোচিত। এছাড়াও আরও নানা ঘটনার কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে ২০২৪।
বিজ্ঞাপন
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বাংলাদেশ নতুন করে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, সেই পথেও নানা বাধা-বিপত্তি মাথাচাড়া দিচ্ছে। নতুন বছরে সব বিপত্তি এড়িয়ে বাংলাদেশ সুখী-সমৃদ্ধশালী জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিত হওয়ার পথে একধাপ এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা সবার। ২০২৫ সালের শেষ দিকে কিংবা ২০২৬ সালের শুরুতে দেশে একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সেই নির্বাচনটি সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ-নিরপেক্ষ হবে বলে প্রত্যাশা করছে দেশবাসী। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে সত্যিকারের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি দেশের কর্তৃত্ব গ্রহণ করবে এমন প্রত্যাশা সবার।
খ্রিষ্টীয় নববর্ষ-২০২৫ উপলক্ষে দেশে ও প্রবাসে বসবাসকারী সকল বাংলাদেশিসহ বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারাও দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
থার্টি ফার্স্ট নাইটে ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে দুর্ঘটনারোধে বাসাবাড়ির ছাদ ও বাসভবন, উন্মুক্ত স্থান কিংবা পার্কে আতশবাজি, পটকা ফোটানো বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পুলিশের পক্ষ থেকেও জারি করা হয়েছে নানা বিধি-নিষেধ। দেশজুড়ে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শব্দদূষণ ঠেকাতে মাঠে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে বিধি-নিষেধ সত্ত্বেও নানা স্থানে ঘড়ির কাঁটা বারোটার ঘরে প্রবেশের আগ থেকেই পটকা ফোটানোর শব্দ ভেসে আসছে। নানা স্থানে আতশবাজির প্রস্তুতিও চোখে পড়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
বর্ষবরণের নামে পরিবেশ দূষণের মতো কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানানো হয়েছে নানা মহল থেকে। বিশিষ্টজনেরা বলছেন, বর্ষবরণ অবশ্যই আনন্দের উপলক্ষ। তবে আপনার আনন্দ উদযাপন যেন কারও যন্ত্রণা কিংবা ক্ষতির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া প্রতি বছর বর্ষবরণে আতশবাজির সময় প্রচুর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারেও সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।
প্রসঙ্গত, জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে শুরু হয় নতুন বছর আধুনিক গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ও জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী। খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দে ইংরেজি নতুন বছর উদ্যাপনের ধারণাটি আসে, তখন মেসোপটেমিয় সভ্যতার (বর্তমান ইরাক) লোকেরা নতুন বছর উদ্যাপন শুরু করে। তারা তাদের নিজস্ব গণনা বছরের প্রথম দিন নববর্ষ উদ্যাপন করত।
খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৩ সালে রোমে নতুন বছর পালনের প্রচলন শুরু হয়। পরে খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সম্রাট জুলিয়াস সিজার একটি নতুন বর্ষপঞ্জিকার প্রচলন করেন। যা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। রোমে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের অন্তর্গত বছরের প্রথম দিনটি জানুস দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। জানুস প্রবেশপথ বা সূচনার দেবতা। তার নাম অনুসারেই বছরের প্রথম মাসের নাম জানুয়ারি করা হয়।
জেবি