দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত যে সকল কমিটি ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রয়েছে তাদের কাছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক তালিকা থাকা প্রয়োজন। যাতে দুর্যোগকালীন সময়ে তাদের সময়মতো উদ্ধারে সহায়তা করা যায়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তাদের ঝুঁকির মাত্রা অনেক কমে আসবে।
অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন যৌথভাবে ডিজএ্যাবল্ড চাইল্ড ফাউন্ডেশন, কারিতাস বাংলাদেশ এবং নবলোক পরিষদের সঙ্গে সিবিএম গ্লোবাল’র সহযোগিতায় সাতক্ষীরায় ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অন্তর্ভুক্তিমূলক দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন বিষয়ক অ্যাডভোকেসি কৌশল প্রণয়ন’ বিষয়ক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লা বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় প্রায় ৫৬ হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে। দুর্যোগে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়টি যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তাদের ঝুঁকির মাত্রা অনেক কমে আসবে।
তিনি আরও বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত যে সকল কমিটি ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রয়েছে তাদের নিকট প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক তালিকা থাকা প্রয়োজন যেন দুর্যোগকালীন সময়ে তাদের সময়মতো উদ্ধারে সহায়তা করতে পারে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জলবায়ু সহনশীল জীবিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। কাজের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, একটা বস্তায় আদা চাষ করে প্রায় ১৪০০ গ্রাম আদা ফলানো সম্ভব। যে কাজটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সহজে পরিচালনা করতে পারে। উপকূলীয় অঞ্চলে খাবার পানির সংকট রয়েছে, তারপরও দৈনন্দিন রান্নার সময় চাউল ধোয়ার পানি, তরকারি ধোয়ার পানি দিয়ে একটা লাউ গাছ বা যেকোনো ধরনের সবজিতে ব্যবহার করা যায়।
তিনি আরও বলেন, যে সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কাজ করতে পারবেন তাদের তালিকা দপ্তরে জমা দিলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সেবা প্রদান করা হবে।
বিজ্ঞাপন
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এস এম মাহবুবুর রহমান বলেন, আমার দপ্তর থেকে প্রতিটি উপজেলার মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়া হয়। যে সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল পালন বা ছোট পরিসরে খামার পরিচালনা করছে বা কেউ যদি খামার করতে উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হবে।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোছা. এছমত আরা বেগম বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যেন পিছিয়ে না পড়ে সেজন্য তাদের সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দুর্যোগের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি থাকে। বিভিন্ন দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের সাবলম্বী করা গেলে ঝুঁকির মাত্রা কমে আসবে।
প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকার থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য যে সকল সহায়ক উপকরণ প্রদান করা হয় তার মধ্যে হুইল চেয়ার যেন ডিজিটালাইজ করে সেজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে সুপারিশ করবেন।
দিনব্যাপী কর্মশালায় ২৩টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনের প্রতিনিধি ও অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও মতামতের ভিত্তিতে উঠে আসা সুপারিশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অন্তর্ভুক্তিমূলক দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন বিষয়ক অ্যাডভোকেসি কৌশল প্রণয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে অংশগ্রহণকারীগণ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এই উদ্যোগ সাতক্ষীরা ও খুলনায় বাস্তবায়িত দু’টি চলমান প্রকল্পের অংশ।
সঞ্চালক আলবার্ট মোল্লা উল্লেখ করেন, স্টাবলিশিং ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্ট কমিউনিটিস ইন সাতক্ষীরা প্রকল্পের মাধ্যমে কর্ম এলাকার ২০০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে জলবায়ু সহনশীল জীবিকা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রথমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে এবং এই ২০০ জনকে মোট ৫০ লাখ টাকা নগদ প্রদান করা হবে।
বিইউ/এফএ

