রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কাজী রফিকের স্মরণে ঢাকা মেইলে দোয়া মাহফিল

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:২৬ পিএম

শেয়ার করুন:

কাজী রফিকের স্মরণে ঢাকা মেইলে দোয়া মাহফিল
ছবি: ঢাকা মেইল

পেশাগত জীবনের বাইরেও ব্যক্তি হিসেবে সদ্য প্রয়াত কাজী রফিক কেমন ছিলেন তা নিয়ে চোখের জলে স্মৃতিচারণ করেছেন ঢাকা মেইলের সহকর্মীরা। ৩০ পেরোনোর আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরপারে পাড়ি জমানো তরুণ এই সাংবাদিকের চলে যাওয়া কোনোভাবেই যেন মেনে নিতে পারছেন তার সহযোদ্ধারা। রফিককে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ আসর বারিধারায় ঢাকা মেইলের কার্যালয়ে সদ্য প্রয়াত নিজস্ব প্রতিবেদক কাজী রফিকের স্মরণে দোয়া অনুষ্ঠানে তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন সহকর্মীরা।


বিজ্ঞাপন


রফিকের স্মরণে দোয়া অনুষ্ঠানকে ঘিরে ঢাকা মেইলে ছিল ভিন্ন আবহ। ঢাকা মেইল ও ঢাকা পোস্টের সাংবাদিকদের পাশাপাশি রফিকের শোকাহত পরিবারের সদস্যরাও অংশ নেন দোয়া অনুষ্ঠানে।

এসময় কাজী রফিকের পরিবারের সদস্যদের পাশে সবসময় থাকার আশ্বাস দেন ঢাকা মেইল কর্তৃপক্ষ।

সাত বছরের সাংবাদিকতার ক্যারিয়ারে কাজী রফিক ঢাকা মেইলের শুরু থেকেই রিপোর্টিং বিভাগে কাজ করেছেন। এর আগে ঢাকা টাইমস দিয়ে তার সাংবাদিকতার শুরু। রফিককে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন দুই প্রতিষ্ঠানে তার সঙ্গে কাজ করা একাধিক সহকর্মীও।

গত শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান কাজী রফিক। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ২৯ বছর। ওইদিন রাতে মোহাম্মদপুরের বাসার সামনে জানাজা শেষে পরদিন রায়েরবাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে রফিককে দাফন করা হয়।


বিজ্ঞাপন


স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে যা বললেন সহকর্মীরা

ঢাকা মেইলের সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার রফিকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বলেন, ঢাকা মেইল ও ঢাকা পোস্টের যাত্রা ‍শুরুর পর এই প্রথম আমরা কোনো সহকর্মীকে হারালাম। এমন দিন আর আমাদের মধ্যে না আসুক। মানুষের জীবন কত ক্ষণস্থায়ী, কাজী রফিকের মৃত্যু আমাদের আবার তা স্মরণ করিয়ে দিলো।

মহিউদ্দিন সরকার বলেন, রফিকের সঙ্গে আমার খুব একটা কথা না হলেও রিপোর্টিং মিটিংয়ে কথা হয়েছে অনেকবার। সে বিনয়ী ছিল। যে কাজ দেওয়া হতো সে তা করতো। কখনো কোনো কাজে তার ‘না’ ছিল না।

ঢাকা মেইল সম্পাদক বলেন, রফিকের হঠাৎ অসুস্থতার কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই ওর চিকিৎসার সার্বিক ব্যবস্থা করার জন্য বলা হয়েছিল। উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যেই তার মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃসংবাদ।

ঢাকা মেইলের পরিবার সবসময় কাজী রফিকের পরিবারের পাশে থাকবে বলেও জানান সম্পাদক।

ঢাকা মেইলের হেড অব নিউজ হারুন জামিল রফিককে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বলেন, কাজী রফিক আমাদের মধ্যে সবচেয়ে চঞ্চল একজন রিপোর্টার ছিল। তার মৃত্যু আমাদের জন্য খুবই অপ্রত্যাশিত। মৃত্যুর আগের শনিবার সাপ্তাহিক বৈঠকেও কাজী রফিক অনেক অ্যাকটিভ ছিল। আমরা যে কয়টি পরিকল্পনা নিয়েছি, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রফিককে দেওয়া হয়েছিল। আমরা গত মঙ্গলবার অনলাইন মিটিং করেছি। সেখানেও সে ছিল। শুক্রবার বাজার দরের রিপোর্টও দিয়েছে। অথচ বিকেলেই তার মৃত্যু হয়েছে।

Rafiq2

হারুন জামিল বলেন, রফিক খুবই চঞ্চল ও নিবেদিত প্রাণ রিপোর্টার ছিল। জেনেভা ক্যাম্পের ওপর সে অনেক রিপোর্ট করেছে। পাশাপাশি লাইভ রিপোর্টে ভালো ছিল। সে অত্যন্ত পরোপকারী ও সাংবাদিকদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল। যা তার জানাজায় ফুটে উঠেছে।

ঢাকা মেইলের হেড অব নিউজ বলেন, আমরা সাংবাদিকরা প্রচণ্ড মানসিক চাপ নিয়ে থাকি। সাংবাদিকরা ভালো কাজের জন্য কখনোই বাহাবা পায় না। ফলে আমাদের মধ্যে মানসিক একটা চাপ থাকে, কিন্তু আমরা কখনো বাইরের কাউকে তা বুঝতে দিই না। রফিক কোনো দিন আর আমাদের মধ্যে ফিরবে না। এটা ভাবলেই মনটা বিষাদে ভরে যায়। আমাদের এখন একটাই করণীয় তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।

রফিকের পরিবারের পাশে থাকার কথা জানিয়ে হারুন জামিল বলেন, সে তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল। তারা একটা বড় ধাক্কা খেয়েছে। আমরা তার পরিবারকে যথাসম্ভব সহায়তা করবো। ইউএস বাংলা গ্রুপের এমডি মহোদয়ও আমাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছেন।

ঢাকা মেইলের বার্তা সম্পাদক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, রফিক সাংবাদিকতা পেশার জন্য ছিল নিবেদিত প্রাণ। মৃত্যুর দিনেও বাজার দরের দুইটা রিপোর্ট দিয়েছে। তার কাজ ছিল অনুসন্ধানীমূলক। মৃত্যুর কোনো বয়স নেই, যেকোনো সময় আসতে পারে- রফিকের মৃত্যু আমাদের তা আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে। রফিক আমাদের অনেকের থেকে অনেক জুনিয়র। অথচ সে আমাদের সবার আগে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে। রফিকের জন্য এখন দোয়া করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই। আমরা তার জন্য দোয়া করবো। সে তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল। তার মৃত্যুতে তার পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা আমরা অফিস ও নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাদের পাশে দাঁড়াবো।

ঢাকা মেইলের প্রধান প্রতিবেদক বোরহান উদ্দিন রফিককে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বলেন, কোনো কাজ দিলে কখনো না করত না কাজী রফিক। সাধ্যের মধ্যে সবটুকু দিয়ে কাজ করত। পেশাগত কাজের জন্য অনেক ঝুঁকি জেনেও রিপোর্ট করেছে সে। এমন একজন সহকর্মী আজকে চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি। এটা মেনে নিতেই কষ্ট হচ্ছে।

ঢাকা পোস্টের প্রধান প্রতিবেদক আদনান রহমান রফিককে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘ঢাকা মেইলের বাইরেও রফিকের সঙ্গে কাজের প্রয়োজনে, পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বেশ চেনাজানা ছিল। অসম্ভব পরিশ্রমী ছিল। তরুণ সাংবাদিকদের মধ্যে রফিকের আলাদা গ্রহণযোগ্যতা ছিল। জেনেভা ক্যাম্প নিয়ে দুর্দান্ত কিছু নিউজ রফিক করেছে। যা অন্যান্য গণমাধ্যমও পরবর্তী সময়ে ফলোআপ করেছে। রফিকের জন্য আমাদের সবসময় দোয়া থাকবে। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন।’

এছাড়াও ঢাকা মেইলের সিনিয়র রিপোর্টার আমিনুল ইসলাম মল্লিক, ফিচার এডিটর আসাদুজ্জামান স্মৃতিচারণ করে কথা বলেন। পরে রফিকের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করেন বার্তা সম্পাদক জহির উদ্দিন বাবর।

বিইউ/জেবি  

 

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর