শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

সবাই যেন আরেকটি ট্রাজেডির জন্য অপেক্ষায়…

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
প্রকাশিত: ০৩ জুন ২০২২, ০৭:১৮ পিএম

শেয়ার করুন:

সবাই যেন আরেকটি ট্রাজেডির জন্য অপেক্ষায়…

এক যুগ আগে সংঘটিত রাজধানীর নিমতলী ট্রাজেডি আজও কাঁদায় সেই এলাকার মানুষকে। ভয়াবহ সেই ট্রাজেডির পর চুড়িহাট্টাসহ আরও অনেকগুলো আগুনের ঘটনা ঘটে পুরান ঢাকায়। প্রতিটি ঘটনার পর অতি ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরানোর জোর দাবি ওঠে। সরকারের পক্ষ থেকে সেই উদ্যোগ শুরু হলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। বরং সেই এলাকায় রাসায়নিক গুদামের বিস্তৃতি গত কয়েক বছরে আরও বেড়েছে।

২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ রাসায়নিক আগুনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নারী, শিশুসহ ১২৫ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। ৬২ পরিবার হারায় তাদের স্বজনদের। বিভিন্ন সংগঠন প্রতি বছর দিনটিকে ‘নিমতলী ট্র্যাজেডি’ হিসেবে স্মরণ করে। এছাড়াও ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টায় আগুনে প্রাণহানির সংখ্যা ৭১। গত ১২ বছরে পুরান ঢাকায় ছোট-বড় আরও অনেক রাসায়নিকের আগুনের ঘটনা ঘটেছে।

শুক্রবার (৩ জুন) নিমতলী ট্রাজেডির যুগ পূর্তির দিনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানটি ঘিরে রাসায়নিক ব্যবসা কমেনি, বরং বেড়েছে। এলাকাবাসী জানান, আগুনের ঘটনা যতবার ঘটেছে, পরপরই আরও পোক্ত করে বসেছে দোকান। বেড়েছে পরিধি। অনেকেই সময়ের সাথে সাথে বাসা বাড়ির নিচে করেছেন গোডাউন। যাদের হাতেগোনা কয়েকজনের রয়েছে অনুমোদন (লাইসেন্স)। সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের পরও বেড়ে উঠা ব্যবসা পরিধি নিয়ে স্থানীয়দের মনে বিরাজ করছে আতঙ্ক। যদিও অনেক ব্যবসায়ী স্থানান্তর প্রক্রিয়াকেই দায়ী করছেন।

নিমতলী আগুনের ঘটনার পর সরকারি এক অভিযানে উঠে আসে, পুরান ঢাকায় প্রায় এক হাজার রাসায়নিক পদার্থের গুদাম বা কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে লাইসেন্স পাওয়া যায় মাত্র ১২৭টির। এসব দোকান সরাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত হয় টাস্কফোর্স। যদিও ১২ বছরেও তা কাজে আসেনি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে পুরান ঢাকায় রাসায়নিকের গুদাম ও দোকান রয়েছে প্রায় ২২ হাজার। অনুমোদন বা লাইসেন্স আছে মাত্র ৮০০টি গুদামের। বিভিন্ন বাসাবাড়িতেও আছে কেমিক্যাল ও পারফিউমের গুদাম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী বলছেন, আমাদের সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়। সিটি করপোরেশন থেকে সার্ভে করা হয়। নানা চিঠি দেওয়া হয় সরে যেতে। কিন্তু এ তো কোনো সমাধান নয়। এখানে শত কোটি টাকার ব্যবসা। চাইলেই সরে যাওয়া যাবে না। উপযুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন। সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের ইচ্ছে রয়েছে।  


বিজ্ঞাপন


নিমতলীর ঘটনা যে ভবনে ঘটে এর পাশের ভবনের ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘স্থানটি এখন দিবসকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। পত্রিকার পাতায় দেখা মেলে দিবসে। এরপর আর কেউই মনে রাখে না। যেন সবাই আরও একটি ঘটনার জন্য অপেক্ষা করছে। আবার পোড়া লাশের গন্ধ বাতাসে ঘুরবে। আহ্... আর মনে করতে চাই না সে দিনগুলো।’

পুরান ঢাকা পড়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতায়। নগরীতে এমন ব্যবসা পরিচালনায় নিতে হয় সংস্থাটির অনুমতি। যদিও এ নিয়ে দায় নিতে নারাজ খোদ সিটি করপোরেশন।

ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা এখানে কোনো ধরনের বাণিজ্যের অনুমতি দিইনি। সেই সাথে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এখানে বাণিজ্য অনুমোদন দেবো না। অনুমোদন না থাকার পরও ব্যবসা থাকায় দীর্ঘদিন রাজস্ব থেকে বঞ্চিত সিটি করপোরেশন। তারা বেআইনিভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এখনও সেখানে কেমিক্যাল গুদামজাত করছে।  

এ নিয়ে সিটি করপোরেশনের ভূমিকা জানতে চাইলে মেয়র তাপস বলেন, ‘আমি এসে দায়িত্ব নেওয়ার পরে এ বিষয়টি তুলে ধরেছিলাম এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম। শিল্প মন্ত্রণালয়ে সভা করেছি। মন্ত্রিপরিষদে বিষয়টি আলোচনা হয়েছিল। তারা আমাদের বলেছিলেন, তালিকা করে দিতে। আমরা চিরুনি অভিযান করি। পূর্ণাঙ্গ সার্ভে করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দিয়েছি। সেখান থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসছে না। ব্যবসায়ীদেরও স্থানান্তর করা হচ্ছে না।’

মেয়র বলেন, শীত মৌসুম এলে প্রায়ই এখানে আগুন ধরে যায়। হতাহত হয়। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুতরাং আমরা কর্তৃপক্ষকে আবারও বলতে চাই, তাদের অনুরোধ করতে চাই, এটার দ্রুত ব্যবস্থা করুন। শিল্প মন্ত্রণালয় বলেছিল, ২০২২ সালের জুন মাসে তাদের প্রকল্প সম্পন্ন হবে কেরানীগঞ্জে। আমাদের ধারণা, তারা তা শেষ করতে পারবে না। কবে নাগাদ শেষ করতে পারবে তাও অনিশ্চিত। এটার দ্রুত অপসারণ করা একান্ত প্রয়োজন। না হলে আমরা চিরুনি অভিযান কররো। আমরা চেষ্টা করবো এগুলো বন্ধ করে দিতে। কিন্তু এটা সমাধান নয়। এটার স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।

ডিএইচডি/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর