ভারতীয় কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকে ভারতের হস্তক্ষেপ এবং উস্কানিমূলক কার্যকলাপের কারণে দেশে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন— ভারতীয় প্রচারণা ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বারবার তাদের হস্তক্ষেপ দেশের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
বিশেষ করে, সোমবার (২ ডিসেম্বর) আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার পর দেশজুড়ে এই ক্ষোভ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। স্থানীয় আরএসএস কর্মী ও হিন্দু সংগঠনগুলোর বিক্ষোভের কারণে বাংলাদেশের জনগণ বিচলিত হয়ে পড়ে। ভারতীয় সরকার হামলার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেও, অতীতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের আগ্রাসী হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে, যা আরও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
বিজ্ঞাপন
এদিন, ভারতের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে বাংলাদেশের সরকার ও সংস্কৃতি বিরুদ্ধে প্রচারিত সংবাদ এবং সাংস্কৃতিকবিরোধী অনুষ্ঠানগুলো বিশেষ করে তরুণ সমাজের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়। একাধিক নাগরিক সমাজ সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলগুলো এসব কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। সম্প্রতি, হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়েছে, যাতে ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে। রিটে বলা হয়েছে, এসব চ্যানেলে বাংলাদেশের সংস্কৃতিবিরোধী অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে, যা যুবসমাজের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো, বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং হেফাজতে ইসলাম, আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ আয়োজন করছে। ২ ডিসেম্বর, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব সাজিদুর রহমান, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব এবং ছাত্র নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ এই প্রতিবাদ কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন।
বাংলাদেশের নাগরিক সমাজও ভারতের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে একত্রিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও সম্প্রীতিকে নষ্ট করতে পারে, এবং এর ফল ভয়াবহ হতে পারে। দেশের জনগণ এখন একত্রিত হয়ে ভারতের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিবাদ গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো সোমবার রাতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ আয়োজন করেছে। শিক্ষার্থীরা ‘গোলামী না আজাদি’, ‘ভারতীয় আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’সহ নানা স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেছেন, "আমাদের এখন দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ করতে হবে: একদিকে আওয়ামী লীগের দোসরদের বিরুদ্ধে এবং অন্যদিকে ভারতের উগ্রবাদী হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে।"
বিজ্ঞাপন
এদিকে, আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও জাতীয় পতাকা পোড়ানোর ঘটনায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামলাটি পূর্ব পরিকল্পিত ছিল এবং এটি কূটনৈতিক সম্পর্কবিষয়ক ভিয়েনা সনদের লঙ্ঘন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারত সরকারকে অবিলম্বে তদন্ত করতে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছে।
কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও অ্যাক্টিভিস্ট জাহিদ আহসান বলেন, আগরতলায় হাইকমিশনে হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই, ভারতের সঙ্গে খেলা হবে সমানে সমান। কোনো রাজা-প্রজার সম্পর্ক থাকবে না। শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতে আমরা ভারতের আধিপত্য মেনে নেব না।
জনপ্রিয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কাফি সমাবেশে বলেন, "আমরা সবেমাত্র গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এখনো অনেকের চোখ নেই, পা নেই, অনেকে কবরে শুয়ে আছে। কিন্তু তাদের মায়াকান্না হয় না, তাদের মায়াকান্না হয় হাসিনার ক্ষমতার জন্য। আমরা তাদেরকে আর কখনোই ক্ষমতার স্বাদ পুনরায় নিতে দেব না। দিল্লির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক হবে চোখে চোখ রেখে।"
এইউ