সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলতেন। সেই চাঁদার টাকা কামরুল হাসান জুয়েল নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে সৌদি আরবে পাচার করতেন তিনি। এছাড়াও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন প্রধান হারুন অর রশিদ অবৈধভাবে যে টাকা আয় করতেন সেই টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করতেন এই জুয়েল। জুয়েল ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ডিবি প্রধানের টাকা পাচারের অন্যতম সহায়তাকারী।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের হল রুমে (ক্র্যাব) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন মডেল ও অভিনেত্রী রোমানা স্বর্ণা।
বিজ্ঞাপন
বিষয়গুলো এতদিন গোপন থাকলেও এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন এই অভিনেত্রী। তার দাবি, তিনি কামরুল হাসান জুয়েল নামের সেই ব্যক্তির দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন। জুয়েল তাকে ২০১৯ সালে বিয়ে করলেও নিজ বাসায় কখনও তোলেনি। বাধ্য হয়ে তিনি মায়ের বাড়িতে থাকতেন। পারিবারিক অশান্তি এবং স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার ফলে তিনি তাকে তালাক দেন। জুয়েল বিবাহিত জেনে তিনি তাকে প্রথমবার তালাক দিতে গেলে ডিবি হারুন ২০২১ সালে তাকে গ্রেফতার করে নানা নাটক সাজায়। এরপর আবারও তিনি জুয়েলকে তালাক দেন। এবার সাবেক স্বামী জুয়েল তার নামে মিথ্যা মামলা দেন এবং তিনি দেড় মাস জেল খাটেন। জুয়েলকে তালাকের নোটিশ প্রত্যাহারের শর্তে মুক্তি মিলে তার। এরপর বিষয়টি তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি সেই জুয়েল ও হারুনের বিরুদ্ধে।
তিনি আরও বলেন, ডিবি হারুন তাকে গ্রেফতারের পর প্রচার করে, তিনি বহুবিবাহ করেছেন। তিনি বিয়ে করে বিভিন্ন পুরুষকে ফাঁসিয়েছেন। কিন্তু বিষয়টির স্বপক্ষে গত কয়েক বছরে তিনি ভয়ে কোনো কথা বলতে পারেননি।
কামরুল ইসলাম জুয়েল আওয়ামী লীগ সমর্থক হওয়ার কারণে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো তিনি এতদিন প্রকাশ করতে পারেননি। জুয়েল তাকে বিয়ের আগে কথা দিয়েছিল অভিনয় করাবেন। কিন্তু বিয়ের পর তাকে আর কোনো অভিনয় করতে দেওয়া হয়নি।
বিজ্ঞাপন
রোমানা স্বর্ণা লিখিত বক্তব্য বলেন, জুয়েল আমার দ্বিতীয় স্বামী। তবে আমার নামে মামলাসহ ২৮টি বিয়ে করার কথা রটানো হয়েছিল, যেগুলো ভিত্তিহীন। এই বিয়েগুলোর প্রমাণ আজও দিতে পারেনি এবং আমাকে যেভাবে মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল তারও প্রমাণ দিতে পারেনি। মূলত আমাকে সম্মানহানি করার জন্যই এসব ভিত্তিহীন তথ্য ছড়ানো হয়। বিভিন্ন সময়ে সাবেক ডিবি প্রধান হারুন জুয়েলের পক্ষ নিয়ে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে হয়রানি করত। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিষয়টি জানালেও কাজ হয়নি। যার কারেণে সবকিছু মুখ বুঝে মেনে নিতে হয়েছিল। অপরাধ না করেও অপরাধী হয়েছিলাম।
তিনি আরও বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জুয়েলকে সহযোগিতা করার কারণ হচ্ছে, আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলত। সেই টাকা জুয়েলের মাধ্যমে সৌদি পাচার করত। এসব কথা আমাকে বলেছিল যখন সম্পর্ক ভালো ছিল। তার কাছে অনেক মেয়ে পাঠাত। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অবৈধ কাজে সহযোগিতা করত। বিনিময় পেত মোটা অংকের টাকা। জুয়েল মূলত হুন্ডির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও হারুনের টাকা বিদেশে পাচার হতো জুয়েলের মাধ্যমে। জুয়েল অর্থ পাচার একই সঙ্গে জমি দখল করে দিতো এবং দখল নিশ্চিত করতে বিভিন্ন মানুষের নামে মিথ্যা হয়রানি মূলক মামলা দিতো। জুয়েল নিজ স্ত্রীকে অনৈতিক সম্পর্কে বাধ্য করতেন এবং অমানবিক নির্যাতন করতেন। সাধারণ মানুষের নামে মিথ্যা মামলার জন্য বাসায় আনা এবং তা নিয়ে বাধা প্রদান করলে আমার ওপর অমানবিক অত্যাচার হতো।
রোমানা স্বর্ণা বলেন, আমাদের ডিভোর্স চলাকালীন ভয়ভীতি দেখিয়ে নতুন করে কাবিন ছাড়াই বাসায় এসে থাকত জুয়েল। দেড় বছর গৃহবন্দি করে রাখে। সারাক্ষণ সন্তান পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দিতো। পরিবারের কথা ভেবে সবকিছু মুখ বুঝে এতদিন সহ্য করেছি। জামিনে বেরিয়ে আসার পর জুয়েল সৌদি যায়। আমি তখনও গৃহবন্দি। দেড় বছরের মতো এভাবে ছিলাম। তখন জুয়েলের প্রথম স্ত্রীও ওখানে যায়। তখন আমাদের যোগাযোগ একটু কম হতো। সেই সুযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা আবেদন করে আমি সেখানে চলে যাই। তার আগে পড়াশোনার জন্য ছেলেকে পাঠাই। যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছি জানতে পেরে জুয়েল নানাভাবে আমাকে হুমকি দেয়। দেশে আমার পরিবার থাকায় তাদের নানাভাবে হুমকি দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও রেহাই পাইনি।
এমআইকে/এমএইচএম