শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

সার্বজনীন পেনশন চালুতে তাড়াহুড়ো না করার পরামর্শ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১ জুন ২০২২, ০২:২৭ পিএম

শেয়ার করুন:

সার্বজনীন পেনশন চালুতে তাড়াহুড়ো না করার পরামর্শ

সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো না করতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সরকারের শেষ বছরে সর্বস্তরের মানুষের জন্য ও আর্থিক বিষয় জড়িত এমন উদ্যোগ নেওয়া ঠিক হবে না। যা নতুন কোনো সরকার আসলে তাদের জন্য বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে যাবে। তাই সার্বজনীন পেনশন আইন করার আগে সবার মতামত নিতে হবে। এছাড়াও সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা বাস্তবেই যাতে সবার জন্য হয় সে জন্য সামগ্রিক চিন্তা ভাবনা করে এটি শুরু করতে হবে। এর জন্য কর দাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে। 

তাদের ভাষ্য, ১৮ থেকে ৫০ বছরের নাগরিকদের যে পরিমাণ প্রিমিয়াম জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে তা সবার দেওয়া সম্ভব হবে না। 


বিজ্ঞাপন


বুধবার (১ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবে  সার্বজনীন পেনশন ও কর ন্যায্যতা শীর্ষক প্রাক বাজেট আলোচনায় তারা এসব কথা বলেন। কোস্ট ফাউন্ডেশন আয়োজিত এই প্রাক বাজেট আলোচনায় উঠে আসে কর দেওয়ার ক্ষেত্রে নাগরিকদের অনীহা, কর ব্যবস্থাপনার দুর্বল দিকগুলো। 

এতে বক্তব্য রাখেন— পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জমান আহমেদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী প্রমুখ।

ড. কাজী খলিকুজ্জমান সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো না করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আমরা চাই দ্রুত হোক কিন্তু সুন্দর হোক। নির্দিষ্ট একটা সময় নির্ধারণ করা হোক যে এই সময়ের মধ্যে আইনটি করা হবে। এইসময়ের মধ্যে সবার পরামর্শের ভিত্তিতে যা যা করা দরকার তা করা হবে। কারণ আমরা দেখেছি শিক্ষানীতি ২০১০ সালে করা হলেও এটি এখনো শুরু হয়নি। 

তিনি বলেন, সার্বজনীন পেনশনের ক্ষেত্রে সার্বজনীনতা নিশ্চিত করতে হবে। ১৮ থেকে ৫০ বছরের যারা চাঁদা দেবে তারা পেনশন পাবেন কিন্তু যারা চাঁদা দিতে পারবেন না তাদেরও আওতাভুক্ত কিভাবে করা যায় সেটাও ভাবতে হবে। 


বিজ্ঞাপন


সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় জোর দিয়ে খলিকুজ্জমান বলেন, এটা শুরু হলে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। আইন এমনভাবে হতে হবে যাতে পিকে হালদার তৈরি না হয়। ব্যবস্থাপনা যাতে সুন্দর হয় সেটা দেখতে হবে। 

সবার মতামতের ভিত্তিতে সার্বজনীন পেনশন আইন না করা হলে সমস্যার তৈরি হবে বলে মনে করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ। তিনি বলেন, সরকার ২০১২ সালে আইএএফের চাপে তাড়াহুড়ো করে ভ্যাট আইন করলেও সেটা বাস্তবায়ন করতে সময় লেগেছে। আবার সরকারের শেষ বছরে করলে যদি নতুন সরকার আসে তাদের জন্য এটি বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। তাই তিনি সরকারের প্রথম বছরে এটি চালু করার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, আমাদের ট্যাক্স নেট বাড়াতে হবে। কিন্তু ট্যাক্স দিয়ে নাগরিকরা যেন সেবা পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ উন্নত বিশ্বে নাগরিকরা ট্যাক্স দেন, রাষ্ট্র তাদের সেবা দেয়। কিন্তু আমাদের এখানে ট্যাক্স দেওয়ার পর সেবা পাবে কিনা তা নিশ্চিত না। কারণ ট্যাক্সও দিচ্ছে আবার সন্তানের স্কুলের টিউশন ফিও এখানে দিতে হচ্ছে। ট্যাক্স দেওয়ার পর ডাক্তার দেখানোর পর তাকে ক্লিনিকে যাওয়ার জন্য বলা হয়। 

১০ বছর ধরে ট্যাক্স দেওয়া ষাটোর্ধ্বদের প্রতীকীভাবে হলেও পেনশন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ। 

কর ব্যবস্থার সঙ্গে পেনশনকে যুক্ত করা হলে দেশে করদাতার সংখ্যা জ্যামিতিকহারে বাড়বে এমন দাবি করে তিনি বলেন, পেনশন পাওয়ার গ্যারান্টি থাকলে দেশে করের ভিত্তি শক্তিশালী হবে। প্রত্যেক করদাতার নামে পেনশন হিসাব স্বয়ংক্রিয়ভাবে খোলা যেতে পারে এবং করদাতার প্রদত্ত একটি অংশ (৫-১০ শতাংশ) পেনশন হিসেবে জমা হবে। 

তিনি বলেন, আগামী অর্থবছর থেকে করের অর্থ থেকে পেনশন তহবিল গঠন শুরু হোক। প্রতিবছর সরকার প্রাপ্ত ভ্যাটের ৫ থেকে ১০ শতাংশ সরকার পেনশন তহবিলে জমা দেবে। এটা এনবিআর সংরক্ষণ করবে। সরকার এই টাকা বিনিয়োগ করবে এবং মুনাফার অর্থ পেনশন তহবিলে জমা হবে। 

তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, সার্বজনীন পেনশন একটি জটিল প্রক্রিয়া। তাই সুনির্দিষ্ট কিছু ধাপ স্থির করে অন্তত ৫ বছর সময় নিয়ে একটি রোডম্যাপ করা উচিত। এখানে টেকসই তহবিল, ভালো আইনি কাঠামো ও দক্ষ প্রশাসনিক সংগঠন প্রয়োজন।

বিইউ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর