সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার সময় রাজধানীর বেশ কয়েকটি থানায় হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। ভাঙচুর-লুটপাট ছাড়াও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিশেষ করে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। পুলিশের স্থাপনা ঘিরে হামলা-ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন রাজধানীর ২২টি থানায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়। সেদিনের পর থেকে অনেক থানায় পুলিশি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলেও এখনো বেশ কিছু থানার কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। কাগজপত্র পুড়ে যাওয়ায় পুরোনো মামলায় আসামি ধরতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশকে।
বিজ্ঞাপন
৫ আগস্ট ঢাকা বিক্ষুব্ধ জনতার হামলার শিকার হয় মোহাম্মদপুর থানা। অগ্নিসংযোগ ছাড়াও লুটপাট করা হয় এই থানায়।
রোববার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিন মোহাম্মদপুর থানায় কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন নারী-পুরুষ এসেছেন তাদের জমি সংক্রান্ত বিরোধের অভিযোগ নিয়ে। আবার কেউ এসেছেন মোটরসাইকেল হারানো এবং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোয় জব্দ গাড়ি ফিরিয়ে নিতে। তবে আগের মতো ভিড় দেখা যায়নি থানায়। এখনো থানার ভেতরের কয়েকটি কক্ষ জনশূন্য। ওসি, তদন্ত ও অপারেশনের কক্ষগুলো বসার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। অথচ দুই মাস আগেও থানার ভেতরের দক্ষিণ পাশের মাঝের কক্ষটি সরগরম থাকতো। সারাক্ষণ ডিউটিরত পুলিশ সদস্যরা মানুষের অভিযোগ নেওয়াসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকতেন। কিন্তু রোববার সেই দৃশ্যে ভাটা পড়েছে। নীরব থানার ভেতর-বাহির।
প্রধান গেট হয়ে ঢুকতেই দক্ষিণ পাশে থাকা গ্যারেজের সামনে একজন নারী পুলিশ কনস্টেবল চেয়ার নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ডিউটি অফিসারের কক্ষে কয়েকজন নারী পুরুষের ভিড়। তাদের কেউ এসেছেন সাধারণ ডায়েরি করতে, আবার কেউ মামলা করতে এসেছেন। ডিউটি অফিসার জানান, জমি সংক্রান্ত বিষয়গুলো তারা দেখছেন না। কারণ এগুলো আদালতের বিষয়।
জমি সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে মোহাম্মদপুরের বটতলা থেকে আসা দুইজন নারী-পুরুষকে ডিউটি অফিসার আসাদ বলেন, এ বিষয়ে জিডি করলে হবে না। বিষয়টি আদালতের। তাই আপনারা আদালতের দারস্ত হন।
বিজ্ঞাপন
অভিযোগ নিয়ে আসা দুজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের সমস্যা জমি নয়, জমিতে অন্যজন দেওয়াল ঘেঁষে ঘর তুলেছেন। ফলে বিষয়টি এখন পুলিশও সমাধান দিতে পারছে না। পাশের কক্ষে নারী অভিযোগ কেন্দ্রে দুজন নারী অভিযোগ দেওয়ার জন্য বসে আছেন।
ডিউটি অফিসারের কক্ষ থেকে বেরিয়ে বাইরে অপেক্ষমাণ কয়েকজন যুবকের দেখা মিলল। তারা এসেছেন বিনা লাইসেন্সে চালানোর দায়ে জব্দ করা গাড়ি ছাড়াতে। তাদের একজন সিয়াম জানান, তারা কয়েকজন বন্ধু সাভার থেকে মাওয়া এলাকায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে গভীর রাত হয়ে যায়। রাত সাড়ে তিনটায় মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে এসে দাঁড়ান তারা। এরপর মোটরসাইকেলগুলো রাস্তায় রেখে নাস্তা করতে যান। এরমধ্যে পুলিশ এসে তাদের কাগজপত্র দেখতে চায়। কয়েকজন কাগজ দেখাতে পারলেও বাকিরা পারেননি। ফলে মোটরসাইকেলগুলো থানায় জব্দ করে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটি।
কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, থানায় এখন হত্যা, ছিনতাই মামলা হচ্ছে কম। তবে বেশিরভাগ হারানো জিডি। এছাড়াও কিছু পারিবারিক অভিযোগ এসেছে। তবে আগের মতো অভিযোগ নেই।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, থানার পুরোনো মামলার তদন্ত নিয়ে বেশি বিপাকে আছে পুলিশ সদস্যরা। কারণ নথিপত্রের বেশিরভাগই পুড়ে গেছে। ফলে সেসব পুরোনো ও পুড়ে যাওয়া কাগজের অংশ বিশেষ দিয়েই এখন মামলার তদন্ত চলছে। এছাড়াও পুলিশের থানার সার্ভারে মামলার যে তথ্য ছিল তা দিয়ে তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছেন। থানায় বেশির ভাগ পুলিশ সদস্য ঢাকার বাইরে থেকে আসায় তাদের মামলা তদন্তে বেশি বেগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া পর্যাপ্ত গাড়ি না থাকায় কোথাও থেকে অভিযোগ এলে দ্রুত যেতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসান ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের অধিকাংশ জিনিস পুড়ে ফেলানো হয়েছে। কিছু নথি উদ্ধার করা গেছে। সেগুলো এবং থানার সার্ভারে পাওয়া তথ্য দিয়েই আমরা মামলার তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছি। আর গাড়িরও সমস্যা আছে। আমরা এরপরও কয়েকটি লেগুনা নিয়ে কাজ করছি। থানার আটটি গাড়ির মধ্যে তিনটি পুড়ে গেছে। বাকিগুলো রিপেয়ার করে চালানো হচ্ছে।
এমআইকে/এমআর