চলমান শ্রমিক আন্দোলনের অস্থিরতা, নৈরাজ্য ও সংকট নিরসনে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।
রোববার (১৩ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তারা এ আহ্বান জানান। ‘পোশাক ও ওষুধ শিল্পে চলমান অস্থিরতা ও নৈরাজ্য বন্ধে করণীয়’ বিষয়ে এ মতবিনিময় সভা করে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন। এতে সভাপতিত্ব করেন এবং স্বাগত বক্তব্য দেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আ ন ম শামসুল ইসলাম।
বিজ্ঞাপন
বক্তারা বলেন, নানাভাবে দেশে অশান্তি সৃষ্টির তৎপরতা শুরু হয়েছে। আনসার আন্দোলনের পর এখন দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড তৈরিপোশাক ও ওষুধ শিল্পে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। আমরা যদি দ্বিতীয় স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখতে চাই তাহলে শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
সাভার, গাজীপুর, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জে শ্রমিক আন্দোলন চলছে। তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, চাকরি স্থায়ীকরণ, ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন এবং একটি জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে সমস্যার সমাধান করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা।
শ্রমিক নেতারা বলেন, কিছু দুষ্কৃতকারী শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে আন্দোলনে নামায়। বিভিন্ন গোষ্ঠী শ্রমিক আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করে ভিন্ন দিকে প্রবাহের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
তারা অভিযোগ করেন, অনেক সময় টাকার বিনিময়ে লোক ভাড়া করা হয়। কিছু তথাকথিত শ্রমিক নেতা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য পতিত সরকারের কথামতো এ কাজ করেন। অবিলম্বে তাদের আটক করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
কারখানা মালিকদেরও দায় আছে উল্লেখ করে শ্রমিক নেতারা বলেন, অনেক কারখানা মালিক শ্রমিকদের বকেয়া বেতন নিয়ে নানান টালবাহানা করেন। কোনো কোনো কারখানায় তিন থেকে চার মাসের বেতন বকেয়া। শ্রমিকের পেটে ভাত না থাকলে সে তো আন্দোলন করবেই।
এসময় শ্রমিকদের রেশনিং, বাসস্থান, চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকার আদায়ে সব শ্রমিক নেতাকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান বক্তারা।
সভায় সরকারের কাছে ৫ দফা দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো—
১. পোশাক ও ওষুধ শিল্পে নৈরাজ্য যারা উসকে দিচ্ছেন তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
২.সব শিল্পে মালিক নিয়ন্ত্রিত ট্রেড ইউনিয়ন ও পিসি কমিটি ভেঙে দিতে হবে এবং শ্রমিকদের দিয়ে কমিটি গঠন করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
৩. শ্রম আইন সংশোধন করতে হবে শ্রমিক নেতাদের পরামর্শের আলোকে ও অন্য কারও মতামত প্রাধান্য দেওয়া যাবে না।
৪. দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। গার্মেন্টস শিল্পের ৪০ লাখ শ্রমিকের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. শিল্প এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং শ্রমঘন এলাকায় বিনামূল্যে শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শ্রমিক অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সভাপতি মাহাতাব উদ্দীন শহীদ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ প্রগতিশীল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুন নাহার ও বাংলাদেশ সংযুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ফেরদৌসী বেগম, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক খাদিজা আক্তার, সম্মিলিত শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুল হাসান নয়ন।
এছাড়াও গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার-আশুলিয়ার বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতারা বক্তব্য রাখেন।
এমএইচটি

