ফেসবুকে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে ওএসডির পর এবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম উর্মিকে। তার বিরুদ্ধে চাকরিবিধি অনুযায়ী প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
সোমবার (৭ অক্টোবর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এর আগে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদ সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে ফেসবুকে বিতর্কিত পোস্ট দেওয়ায় তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। পরে তাকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং গ্রেফতারে আলটিমেটাম দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
গত শনিবার (৫ অক্টোবর) তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি ফেসবুক পোস্টে লেখেন- ‘মানে কত বড় বোকার স্বর্গে আছি এইটা শুধু চিন্তা করি। আবু সাইদ! বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী, সন্ত্রাসী একটা ছেলে যে কী না বিশৃংখলা করতে গিয়ে নিজের দলের লোকের হাতেই মারা পড়লো সে নাকি শহীদ! এটাও এখন মানা লাগবে! আর এই আইন ভঙ্গকারী সন্ত্রাসী র জন্য দেশের অথর্ব অতি প্রগতিশীল সমাজ কেঁদেকেটে বুক ভাসিয়েছে। তখন যাকেই বলার চেষ্টা করেছি পুরো ঘটনা তদন্তসাপেক্ষ, সেই দশটা কথা শুনিয়ে দিয়েছে। প্রশাসনে থেকে সরকারের দা লাল হয়ে গিয়েছি একথা বুঝানোর তো বাকিই রাখনি।’
বিজ্ঞাপন
এছাড়াও সমালোচিত এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধেও ফেসবুকে লেখালেখি করেন। এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘সাংবিধানিক ভিত্তিহীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রিসেট বাটনে পুশ করা হয়েছে। অতীত মুছে গেছে। রিসেট বাটনে ক্লিক করে দেশের সব অতীত ইতিহাস মুছে ফেলেছেন তিনি। এতই সহজ! কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে আপনার, মহাশয়।’
ওএসডি হওয়ার পর সোমবার একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি বলেন, ‘আই্ম নট এ হিপোক্রিট। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে যেকোনো জায়গা থেকে বলা যায়। এ জন্য যদি চাকরি চলে যায়, এতে আমার কোনো সমস্যা নাই।’
এদিকে সরকারি এই কর্মকর্তার ফেসবুক পোস্ট সম্পর্কে জানাজানি হওয়ার পর দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিশেষ করে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন তারা বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি কীভাবে এখনো সরকারি চাকরি করছেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
সোমবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাকে স্থায়ী বহিষ্কার ও গ্রেফতারে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওই ম্যাজিস্ট্রেটকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার এবং গ্রেফতার করা না হলে উত্তরবঙ্গ ব্লকেড এবং লংমার্চ টু রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কর্মসূচি পালন করা হবে।
দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু সাঈদ গেটে (১নং গেট) শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তারা ‘শহীদদের নামে মিথ্যাচার চলবে না, ঊর্মির বহিষ্কার করতে হবে হবে’, ‘সাঈদ ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘হাসিনার দোসররা হুঁশিয়ার সাবধান’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের বীর শহীদ আবু সাঈদসহ শহীদদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট যে কটূক্তি করেছেন আমরা তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। আমরা জানান দিতে চাই, আবু সাঈদ শহীদ হলেও তার সহযোদ্ধারা এখনো বাংলার মাটিতে আছে। তাকে নিয়ে কটূক্তি করলে সেটি আমরা সেটি মেনে নেব না। আমরা তার স্থায়ী বহিষ্কার চাই। নতুবা আমরা কঠোর অবস্থান নেব।
জেবি