বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

পদ্মা সেতুতে যে ৫ কাজ বাকি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৭ মে ২০২২, ১১:৫৩ এএম

শেয়ার করুন:

পদ্মা সেতুতে যে ৫ কাজ বাকি

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নপূরণ হতে আর বেশি দেরি নেই। মে মাস পেরোলেই সেতু চালুর অপেক্ষায় থাকবেন মানুষ। ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটি উদ্বোধন করবেন। এরপর সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে প্রমত্তা পদ্মার বুকে নির্মিত দেশের দীর্ঘতম সেতুটি। ঘোষিত সময়ে সেতু চালু করতে এখন চলছে শেষ মুর্হূতের কাজ। যে কাজগুলো বড় না হলেও গুরুত্বপূর্ণ। এসব কাজকে ফিনিশিং টাচ বললেও ভুল হয় না।

যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত করতে সেতুতে এখন পাঁচটি কাজ চলমান। এগুলো হলো-সেতুতে রোড মার্কিং করা ও রোড সাইন বসানো, ল্যাম্পপোস্টে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া, প্যারাপেট ওয়ালে অ্যালুমিনিয়ামের রেলিং বসানো এবং সেতুর এক্সপানশন জয়েন্টে দুই পাশে কভার প্লেট বসানোর কাজ। এছাড়াও সেতুর উদ্বোধনী আয়োজনের জন্য নির্মিত হচ্ছে ফলক। উভয় পাশে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজও চলমান রয়েছে। যান চলাচল উপযোগী করে তুলতে সেতুতে পিচ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়েছিল গত বছরের ১০ নভেম্বর। পাঁচ মাস ১৯ দিনের মাথায় গত ২৯ এপ্রিল মূল সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার অংশে সে কাজ শেষ হয়। এরপরই সমানতালে শুরু হয় দুই পাড়ের সংযোগ সড়কের পিচ ঢালাই। কিন্তু তখনও বাকি থাকে সেতুতে ওঠা-নামার ভায়াডাক্টের অংশের পিচ ঢালাইয়ের কাজ।


বিজ্ঞাপন


১৯ মে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের সংযোগ সড়কের পিচ ঢালাই ও ভায়াডাক্ট পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়। ২৩ মে জাজিরা প্রান্তের সংযোগ সড়কের পিচ ঢালাই ও ভায়াডাক্টের কাজ শেষ হয়। রোড মার্কিং ও রোড সাইন সেতুতে পিচ ঢালাইয়ের পর রোড মার্কিং ও রোড সাইন দেওয়ার তোরজোর শুরু হয়। মূল সেতুতে রোড মার্কিং করা ও রোড সাইন স্থাপনের আগে ট্রায়াল দেওয়া হয়।

২৯ এপ্রিল জাজিরা প্রান্তের সারফেস সড়কে মার্কিং দেওয়া হয়। ওই দিনের ট্রায়াল সফল হয়। এরপর ১৯ মে থেকে মূল সেতুতে রোড মার্কিং ও রোড সাইন বাসানোর কাজ শুরু। সেতুর ১৩ নম্বর খুঁটির থেকে এই মার্কিং শুরু হয়। মার্কিং করে এখন ৭ নম্বর খুঁটির দিকে এগুচ্ছে। সেতুর ২ নম্বর মডিউলে মার্কিং করা হয়েছে। মার্কিংয়ের কাজ পুরোদমে চলছে। জুন মাসের প্রথম দিকেই এই কাজ শেষ হবে বলে পদ্মা সেতুর প্রকৌশলীরা আশা করছেন।

padma-2২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর ভায়াডাক্টে প্রথম ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজ শুরু হয়েছিল। পরে জাজিরা প্রান্তের ৪০ নম্বর পিলার থেকে মূল সেতুতে ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজ শুরু হয় ৯ মার্চ। ২০ এপ্রিল শেষ হয় সবগুলো ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজ। পুরো সেতুজুড়ে বসেছে ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্ট। এর মধ্যে মূল সেতুতে ৩২৮টি এবং দুই প্রান্ত মাওয়া ও জাজিরা ভায়াডাক্টে ৮৭টি ল্যাম্পপোস্ট রয়েছে। একটি থেকে আরেকটি ল্যাম্পপোস্টের দূরত্ব প্রায় ৩৮ মিটার।

ল্যাম্পপোস্টগুলো চীনের তৈরি। প্রতি ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হলেও এসব ল্যাম্পপোস্টের কোনো ক্ষতি হবে না। প্রতিটি পোস্টের ওজন ২৭৫ কেজি ও দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ২ মিটার। প্রতিটি ল্যাম্পপোস্টে বসানো হয়েছে ১৭৫ ওয়াটের এলইডি লাইট। এসব লাইট জ্বালানোর জন্য ইতিমধ্যে সবগুলো পোস্টে বিদ্যুতের তার টেনে নেওয়া হয়েছে। এখন তার ল্যাম্পপোস্টের সুইচগুলোতে সংযুক্ত করার কাজ চলছে, যা শেষের পথে। জুনের প্রথম সপ্তাহেই সবগুলো ল্যাম্পপোস্টে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে বলে আশাবাদী এই কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি।


বিজ্ঞাপন


সেতু আলোকিত করার জন্য ট্রায়ালও দেওয়া হবে। প্যারাপেট ওয়ালে অ্যালুমিনিয়ামের রেলিং পদ্মা সেতুতে চলাচলকারী যানবাহনের নিরাপত্তার জন্য সেতুর উভয় পাশে প্যারাপেট ওয়াল বসানোর কাজ শেষ হয়েছে বহু আগে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬১৫০ মিটার। সেতুর উভয় পাশে প্যারাপেট ওয়াল বসানো হয়েছে ৮২০০টি। এর মধ্যে লাইটিং ব্লিস্টার সেগমেন্ট ৩২৮টি। এছাড়াও প্রি-কাস্ট প্যারাপেট ওয়াল স্থাপন করা হয়েছে ৭৮৭২টি।

১৮ এপ্রিল পদ্মা সেতুতে প্রথম রেলিং বসানো হয়। সেতুর মাওয়া প্রান্তের যানবাহন উঠার লেনে এবং জাজিরা প্রান্তে যানবাহন নামার লেনে পরীক্ষামূলকভাবে এই রেলিং স্থাপন করা হয়। এরপর বাকি রেলিংগুলোর স্থাপনের কাজ শুরু হয়। অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি প্রতিটি ৬ মিটার করে দীর্ঘ এই রেলিংগুলো আনা হয়েছে ব্রিটেন থেকে। আর রেলিং পোস্ট আনা হয়ে দুবাই থেকে। এক্সপানশন জয়েন্টে কভার প্লেট গরমে প্রসারণ ও শীতে সংকোচনে ফলে সেতুর যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য পদ্মা সেতুতে ৮টি এক্সপানশন জয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে। এক্সপানশন জয়েন্টকে মুভমেন্ট জয়েন্টও বলা হয়। এগুলো স্থাপনের পর উভয় পাশে ঢালাই করা হয়। এখন জয়েন্টে দুই মাথায় এক্সপানশন জয়েন্টের খালি অংশে স্টিলের কভার প্লেট বসানোর কাজ চলছে। এই কভার প্লেট বসানোর জন্য এক্সপানশন জয়েন্টের দুই পাশে প্যারাপেট ওয়াল বসানো হয়নি। এতদিন ফাঁকা ছিল।

padma-3এবার সেখানে মরিচারোধী স্টিলের কভার প্লেট বসানো হচ্ছে। উদ্বোধনী ফলক ও সৌন্দর্যবর্ধন সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের জন্য ম্যুরাল ও ফলক নির্মাণের কাজ চলছে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মিত হচ্ছে। দুটি ম্যুরালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি থাকবে। এছাড়াও উদ্বোধনী ফলককে ঘিরে সেখানে পার্ক, ফোয়ারাসহ সৌন্দর্যবধনের নানা কাজ চলমান রয়েছে, যা ২৫ জুনের মধ্যে শেষ হবে।

নদীতে ৬.১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতু। আর দুই পাশের সড়ক মিলিয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার লম্বা এই সেতু। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর একে একে ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর।

মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হয়েছে এ সেতুর কাঠামো।

এজেড/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর