সাইফুল ইসলাম শ্যামল নামে এক ব্যক্তিকে তেজগাঁও এলাকায় তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে পরে ফেরত দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছে গুম হওয়া পরিবারগুলোকে নিয়ে তাদের পক্ষে কাজ করা সংগঠন ‘মায়ের ডাক’। সেই সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করতে তিন দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি এই আল্টিমেটাম দেন।
বিজ্ঞাপন
এসময় তিনি তার ভাইকে তুলে নেওয়ার ঘটনা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে সেনাবাহিনীর পক্ষে আইএসপিআর এ ঘটনায় যে বক্তব্য দিয়েছে তা এককম মিথ্যাচার ও অগ্রহণযোগ্য বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি আইএসপিআর প্রধানেরও বিচার দাবি করেন তিনি। মায়ের ডাক এবং গুম হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে তাদের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
২০১৩ সালে একইভাবে গুম হয়েছিলেন সানজিদা ইসলাম তুলির আরেক বড়ভাই বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন। তাকে এখন পর্যন্ত ফেরত পায়নি পরিবার। মূলত সেই থেকেই গুম হওয়া পরিবারদের পক্ষে লড়াই করে আসছিলেন তুলি। তাদের নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন ‘মায়ের ডাক’ নামের এই সংগঠন। সানজিদা ইসলাম তুলি এবং তার বোন আফরোজা ইসলাম আঁখি দুইজনই মায়ের ডাকের সংগঠক।
লিখিত বক্তব্যে মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, গত ১২ বছর ধরে ৫৫৩ শাহীনবাগ, তেজগাঁও, ঢাকায় অবস্থিত মায়ের ডাকের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে আমাদের সমস্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ বাসায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘের প্রতিনিধিরাও আগমন করেছিলেন। কিন্তু সোমবার ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে হঠাৎ করেই সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে উপস্থিত হয়। তারা জিজ্ঞেস করতে থাকে, এটি কি সানজিদা ইসলাম তুলি ও আফরোজা ইসলাম আঁখির বাসা। তখন জাতীয় জাদুঘরে মায়ের ডাক আয়োজিত মাসব্যাপী ‘গুম: জান ও জবান’ আলোকচিত্র প্রদর্শনীর সমাপনী অনুষ্ঠান চলছিল। সমাপনী অনুষ্ঠানের মাঝেই খবর আসে, আমার বড় ভাই সাইফুল ইসলাম শ্যামলকে সেনাবাহিনী জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গেছে। তারা আমাকেও খোঁজাখুঁজি করেছে। একইসঙ্গে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মোবাইল ফোন জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
মায়ের ডাকের সমন্বয়ক আরও বলেন, শ্যামলকে তুলে নেওয়ার সময় ৭৫ বছর বয়সী হাজেরা খাতুন, যিনি মায়ের ডাকের প্রতিষ্ঠাতা, তাকে দ্বিতীয় তলায় আটকে রাখা হয়। সুমনের ছোট মেয়ে আরোয়ার সামনেই সেনা সদস্যরা অস্ত্র নিয়ে ঘুরতে থাকে, যা তাকে ভীত করে তোলে। জোর করে আরোয়াকে টেনেহিঁচড়ে অন্য রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সিসিটিভি ফুটেজ নষ্ট করার চেষ্টা করলেও তাতে সফল হয়নি। শ্যামলকে তেজগাঁও সেনা ক্যাম্পে নিয়ে মানসিক চাপ প্রয়োগ করে মিথ্যা অভিযোগে পরিপূর্ণ একটি কাগজে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তিনি স্বাক্ষর করেননি। সেনা হেফাজতে শ্যামলকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরকে কিভাবে চেনেন। পাশাপাশি মাদক, অস্ত্র ও চাঁদাবাজির সঙ্গে তাকে জড়িয়ে কাগজে স্বাক্ষর করতে বলা হয়। শ্যামল সব অভিযোগ অস্বীকার করে কাগজে লিখে দেন যে, তিনি নির্দোষ। সোশ্যাল মিডিয়ায় এক্টিভিস্ট এবং মিডিয়াকর্মীদের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ এবং তৎপরতায় চাপের মুখে পড়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সাইফুল ইসলাম শ্যামলকে বাসার সামনে নামিয়ে দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর মিডিয়া সংস্থা আইএসপিআরের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তুলি বলেন, আওয়ামী দুঃশাসন আমলে র্যাব যেমন কোনো প্রকার ওয়ারেন্ট ছাড়া তুলে নিয়ে বছরের পর বছর গুম করে রাখত, ঠিক একই স্টাইলে পুলিশ ও অন্য বাহিনী ছাড়া মায়ের ডাকের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান চলাকালে বিনা ওয়ারেন্টে কাদের ইশারায় ও যোগসাজশে সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্য এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার অবতারণা করল। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার সত্য উদঘাটন করে দেশবাসীকে জানাতে হবে। মায়ের ডাক মনে করে, আইএসপিআরের বিবৃতি সত্যকে আড়াল করতেই দেওয়া হয়েছে। এই বিবৃতি প্রত্যাহার করে সত্যকে সামনে এনে যারা দোষী তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং পেছনের কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। মায়ের ডাক আরো মনে করে, এই ঘটনা বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য করা হয়েছে এবং সেনাবাহিনী ও মায়ের ডাককে মুখোমুখি করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। শুধুমাত্র যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিএনপির আন্তর্জাতিক উইংয়ের তাবিথ আউয়াল, ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আক্তার হোসেন, ছাত্রঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ ও মানবাধিকারকর্মীরা।
এমআইকে/এমএইচটি