শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫, ঢাকা

নির্বাচনে নিরপেক্ষতায় সংস্কার কমিশন, বাড়ছে প্রত্যাশা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:২৯ এএম

শেয়ার করুন:

নতুন কমিশন, নতুন প্রত্যাশা: নির্বাচনে নিরপেক্ষতা আনার চেষ্টা

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে। এই সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ নিরপেক্ষ নির্বাচন দেওয়া এবং টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরী করা। এই উদ্দেশ্যে সরকার ছয়টি কমিশন গঠন করে। যা নিয়ে রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি ভোটারদের মধ্যে বেড়েছে প্রত্যাশা। 

এর মধ্যে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের নেতৃত্বে রয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি জানিয়েছেন, যে সব জায়গায় সংস্কার করা দরকার, সেসব ক্ষেত্রে কাজ করবে কমিশন। তবে পরিবর্তনগুলো চূড়ান্ত করবে পূর্ণাঙ্গ কমিশন।


বিজ্ঞাপন


অবশ্য দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় সংস্কারের দাবি অনেক পুরনো। বিশেষ করে ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর নানা প্রশ্ন উঠেছে। তাই নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে সবার আগে পঞ্চদশ সংশোধনী কিংবা এ বিষয়ে সংবিধান সংশোধন কমিটি কী সিদ্ধান্ত নেয়, সে দিকেই তাকিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।

অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ একজন নির্বাচন বিশ্লেষক। তিনি বলছেন, “সংবিধানের বিষয়টি মৌলিক। এটি সংস্কার করা হলে অন্য কাজগুলো তার ওপর ভিত্তি করেই করা যাবে।” কমিশন ইতোমধ্যে সংস্কারের জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে শুরু করেছে এবং নির্বাচনী আইন, নির্বাচন পদ্ধতি ও কমিশনে নিয়োগের বিধানগুলোর দিকে নজর দেওয়ার ধারণা করা হচ্ছে।

গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ছয়টি সংস্কার কমিশনের ঘোষণা দেন। বদিউল আলম মজুমদারকে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু এখনও কমিটির অন্য সদস্যরা চূড়ান্ত হয়নি। তবে বদিউল আলম মজুমদার একাই ইতোমধ্যে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা শুরু করেছেন।


বিজ্ঞাপন


কমিটির সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ আট থেকে দশজন হতে পারে। তিনি জানান, “আমরা এখনো এটি চূড়ান্ত করিনি। আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।” আগামী ১ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করবে এই কমিশন এবং আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।

২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। গত তিনটি সাধারণ নির্বাচনে একতরফা নির্বাচন, ভোট কারচুপি এবং ‘ডামি প্রার্থী’ নিয়ে অভিযোগ ওঠেছে। বিশ্লেষকরা এখন সংবিধানে পরিবর্তন আনার ওপর জোর দিচ্ছেন।

অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলছেন, যদি পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল না করা হয়, তাহলে সংস্কারের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। নির্বাচনী আইন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও সংস্কার, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, ও পর্যবেক্ষক নিয়োগের মতো বিষয়গুলো পর্যালোচনা করবে কমিশন।

নির্বাচন বিশ্লেষক ড. আব্দুল আলীমের মতে— নির্বাচনের আইনি কাঠামো সংস্কার করা খুব জরুরি। পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে পুনরায় মূল্যায়ন করতে হবে।

কমিশন চেয়ারম্যান বদিউল আলম মজুমদার জানিয়েছেন, “এখনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। পর্যালোচনা ও কাজ শুরু করতে হবে।” নির্বাচনের আইনি কাঠামো সম্পর্কিত সমস্যা, কমিশনের স্বাধীনতা এবং নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হলে সংস্কার প্রস্তাবনায় গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করবে।

গত বছর আরপিও সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করার অভিযোগ উঠেছিল। নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতার বিষয়টিও সব সময় বিতর্কিত। তাই আগামী নির্বাচনে গ্রহণযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হলে এই সংস্কারগুলো অপরিহার্য।

দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার একটি বৃহৎ কর্মযজ্ঞ। বিশ্লেষকরা মনে করছেন— এই কাজ দ্রুত বাস্তবায়িত হবে না, তবে নির্বাচিত সরকারের কাছে সুপারিশ করে কিছু অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ শুরু করা যেতে পারে। নতুন কমিশনের কার্যক্রম নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ও জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর