বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

পুলিশের গাড়ি পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়, আমি সেন্সলেস হয়ে যাই

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৫১ পিএম

শেয়ার করুন:

পুলিশের গাড়ি পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়, আমি সেন্সলেস হয়ে যাই

আব্দুল্লাহ আহমেদ (১৮)। মিরপুরের আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। গত ৪ আগস্ট ঢাকার মিরপুরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তিনিও মাঠে নেমে ছিলেন। সেদিন ছাত্রলীগ ও পুলিশ একসাথে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে ছাত্র-জনতা প্রতিরোধ গড়ে তুললে পুলিশ তাদের ওপর গাড়ি তুলে দেয়। পুলিশের একটি গাড়ি দ্রুতগতিতে পালাতে গিয়ে পেছনে থাকা লোকজনকে চাপা দিলে তার মাঝে পড়ে যান আব্দুল্লাহ। সেই গাড়িটি তার ডান পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়। মুহূর্তেই আব্দুল্লাহর হাঁটুর নিচ থেকে পায়ের হাড় ভেঙ্গে যায়। এক বছরেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন কিনা জানেন না আব্দুল্লাহ।

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (নিটোর) বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন এই তরুণ।


বিজ্ঞাপন


ঘটনার পর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতেও তাকে ও তার পরিবারকে বেগ সইতে হয়েছে। এক পর্যায়ে আহত হওয়ার বিষয়টি গোপন রাখতে মাদারীপুরে চলে যেতে হয়েছিল তার পুরো পরিবারকে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক সপ্তাহ পর পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা আসেন তিনি।

আবদুল্লাহ জানান, তার বাবা ছোটখাটো একটা ব্যবসা চালান। সেই টাকাতেই তাদের সংসার চলে। কিন্তু এখন তার পায়ের পেছনেই বাবার আয়ের সিংহভাগ চলে যাচ্ছে।

আরও জানান, তার পায়ের হাঁটুর চাকতি ভেঙ্গে আলাদা হয়ে গেছে। পাশাপাশি হাঁটুর নিচে সব হাড় ভেঙে গেছে। পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও কিছু ওষুধ এখনও বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে তাকে।

সম্প্রতি তার পায়ে অপারেশন হয়। পায়ে রিং বসানো হয়েছে। আবদুল্লাহ কখনও তার পা ভাঁজ করতে পারবেন কিনা তার ডাক্তাররাও বলতে পারছেন না। তবে মোটামুটি সেরে উঠতে এক বছরের বেশি সময় লাগবে জানিয়েছেন তারা।


বিজ্ঞাপন


ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে আব্দুল্লাহ বলেন, ছাত্রলীগ ও পুলিশ আমাদের ওপর হামলা করে বসলে আমরা তখন প্রতিরোধ গড়ে তুলি। কিন্তু পুলিশ তখন জান বাঁচাতে ফুল স্পিডে গাড়ি পেছন দিকে যেতে থাকে। এসময় অনেকের ওপর দিয়ে গাড়ি চলে যায়। আমি তখন পেছনে ছিলাম। আমার পায়ের ওপর দিয়ে গাড়ির চাকা চলে গেছে। তখন সাথে সাথে আমি সেন্সলেস (অজ্ঞান) হয়ে যাই। পরে আমার বন্ধুরা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। আমার পায়ের হাঁটু থেকে নিচ পর্যন্ত সব হাড় ভেঙে গেছে। হাঁটুর বাটিও ভেঙে গেছে। ডাক্তার বলেছে, সেরে উঠতে সাত থেকে আট মাস থেকে এক বছর সময় লাগবে, কিন্তু হাঁটু ভাঁজ করতে পারব না।

Imrul_Police_Car--Inner

তাকে চাপা দিয়ে যাওয়া গাড়িটি কাফরুল নাকি দারুসসালাম থানার সেটা আব্দুল্লাহ বলতে পারেননি।

ভয়ে গ্রামে চলে যায় পরিবার

আব্দুল্লাহকে চাপা দেওয়ার ঘটনা জানার পর তার পরিবার ভয়ে সেদিনই তাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে চলে যায়। মাদারীপুর শহরের একটি হাসপাতালে তিনদিন আইসিইউতে ছিলেন আব্দুল্লাহ। এরপর কিছুটা সুস্থ হলে ঢাকায় আসেন। দুর্ঘটনার পর আব্দুল্লাহর শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে তার শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ৩ শতাংশে নেমে এসেছিল। এটা পূরণ করতে তাকে একদিনে চার ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে।

হাসপাতালে আব্দুল্লাহ এই প্রতিবেদকে তার পায়ের বর্তমান অবস্থা দেখাচ্ছিলেন। বলেন, এখন প্রতিটি হাড় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে।

এমআইকে/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর