রাজধানীসহ দেশের সব সড়কে ‘বেপরোয়া গতি’তে ছুটে চলা ঝুঁকিপূর্ণ বাহন ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে৷ যদিও প্রতিদিন কত সংখ্যক ব্যাটারিচালিত নতুন রিকশা সড়কে নামছে তার হিসেব কারও কাছেই নেই, তবে সরেজমিনে দেখা গেছে ব্যাটারিচালিত নতুন রিকশা তৈরির হার ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর সড়ক ছেড়ে দেয় ট্রাফিক পুলিশ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিলম্বে হলেও সড়কে ফিরেছে ট্রাফিক। তবে দায়িত্ব পালনে এখন পর্যন্ত অনেকটাই গা ছাড়া ভাব। ফলে রাজধানীর মূল সড়কে বেপরোয়া গতিতে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা, যা এর আগে নগরীর অলিগলি দাপিয়ে বেড়াত।
বিজ্ঞাপন
ট্রাফিক পুলিশের বাধা না থাকায় নগরীর এমন কোনো সড়ক নেই যেখানে দেখা মিলছে না ব্যাটারিচালিত রিকশার। এমনকি উড়াল সড়কেও ঝড় তুলছে এই বাহন। বাধাহীনভাবে চলাচল করতে পারায় কদরও বেড়েছে এই পরিবহনের।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে বেশ কয়েক ধরনের ব্যাটারিচালিত রিকশা দেখা যায়। এরমধ্যে সাধারণ রিকশায় ব্যাটারি লাগিয়ে তা ব্যাটারিচালিত বানানো হয়, যার খরচ ৫০ হাজার টাকার কাছাকাছি। এর বাইরে পালকি ও নৌকা ডিজাইন নামে আরও দুটি ধরন রয়েছে৷
রায়েরবাজারের ব্যাটারিচালিত রিকশার গ্যারেজের ব্যবস্থাপক মো. সেলিম ঢাকা মেইলকে জানান, পালকি ও নৌকা ডিজাইনের একেকটি রিকশার দাম এখন ৮২ থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত৷ যা কিছু দিন আগেও ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যেত। মূল সড়কে যেতে পারার কারণে চাহিদা বেড়েছে এই রিকশার৷ একই সঙ্গে বেড়েছে দামও।
বিজ্ঞাপন
সেলিমের গ্যারেজ থেকে কেবল চালকদের কাছে রিকশা ভাড়ায় দেওয়া হয়। সাধারণ রিকশায় ব্যাটারি লাগিয়ে তা ব্যাটারিচারিত বানানো পর তা থেকে ভাড়া আদায় করা হয় ৩৫০ টাকা হারে। আর নৌকা কিংবা পালকি ডিজাইনের রিকশার জন্য ভাড়া আদায় করা হয় ৪০০ টাকা হারে।
এসব রিকশা তৈরির কারিগর আলাদা৷ যারা সাধারণ রিকশাকে ব্যাটারিচালিত রিকশায় রূপ দিতে খরচ নেন ১২ হাজার টাকা। এরপর ব্যাটারি ও অন্যান্য জিনিস সংযুক্ত করা হয়। বর্তমানে এ কাজে জড়িয়েছেন লোহার জিনিসপত্র তৈরি করা ওয়ার্কশপগুলো। এসব প্রতিষ্ঠানেই তৈরি হয় পালকি ও নৌকা ডিজাইনের রিকশার মূল আকার।
হাজারীবাগ এলাকার বাবা-মায়ের আশির্বাদ ম্যাটাল ওয়ার্কশপের মালিক শিমুল দাস এ কাজ করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, বর্তমানে ব্যাটারিচালিত রিকশার চাহিদা ব্যাপকহারে বেড়েছে। ফলে তার ব্যস্ততাও বেশি।
শিমুল বলেন, এখন চাহিদা বেশি। পায়ের রিকশাগুলো অনেকেই অটো বানাইতাছে। ওই কাজ করতাছি। পালকি মডেলের ফ্রেম বানাইতাছি৷
তিনি আরও বলেন, আমরা তো কমপ্লিট কাজটা করি না। খালি বডি বানাই। পরে তারা ব্যাটারি, মটর লাগাইয়া নেয়৷ আমগো হাতে এখন দিনে ১০-১২টা কাজ থাকে। যারা কমপ্লিট কাজ করে, বেড়িবাঁধে, তারাও দৈনিক ১২-১৫টা নতুন রিকশা বিক্রি করতাছে এখন।
শিমুলের ভাষ্য অনুযায়ী হাজারীবাগ বউবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একঝাঁক মানুষ নতুন রিকশা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
একই চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর কামরাঙ্গীর চর, সাইনবোর্ড, যাত্রাবাড়ী এলাকায়। ব্যাটারিচালিত রিকশা তৈরির তোড়জোড় দেখা গেছে উত্তরখান, দক্ষিণখান, ধউর এলাকাতেও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেপরোয়া চলাচলকারী এসব পরিবহনকে এখনি রুখে দিতে হবে। নতুবা ভবিষ্যতে তা কঠিন হবে৷
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ ব্যাটারিচালিত রিকশাকে ‘মহামারি’ আখ্যা দিয়েছেন।
এই দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞ ঢাকা মেইলকে বলেন, এই রিকশাগুলো প্রচুর পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ করছে৷ আরেকটা বড় ক্ষতি হচ্ছে, এই ব্যাটারিগুলো যখন নষ্ট হবে, সেগুলো ডিসপোজ করা৷ এটা পরিবেশের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতি।
তিনি বলেন, এখনই যদি পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে পরে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক সমস্যায় পড়তে হবে। এসব বাহন নিজেদের জন্যও যেমন ঝুঁকি, অন্যদের জন্যও ঝুঁকি। এটাকে ইমিডিয়েট বন্ধ করতে হবে।
কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ঢাকা শহরের মূল সড়ক থেকে যে কোনো ধরনের রিকশা সরাতে হবে। আপনি দেখেন, রিকশার পেছনে গাড়ি চলতেছে। রাস্তায় গাড়ির গতি কমে যাচ্ছে৷
ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা নির্ধারণেরও তাগিদ দেন এই বিশেষজ্ঞ। কোন এলাকায় কত সংখ্যক রিকশা চলবে তা নির্ধারণ করা, এলাকাভিত্তিক রিকশার রঙ নির্ধারণ করারও তাগিদ দেন তিনি।
কারই