দেশে 'অজ্ঞাত' আসামি করে মামলার সংখ্যা বাড়ছে, যা মানুষের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। যখন কোনো এলাকায় অপরাধ ঘটে, তখন বেশিরভাগ আসামির নাম 'অজ্ঞাত' তালিকায় চলে যায়, যদিও কিছু অভিযুক্তের নাম উল্লেখ করা হয়। এতে অপরাধে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও অনেক মানুষ আতঙ্কে পড়েন।
বর্তমানে কোটার সংস্কার আন্দোলনের কারণে নতুন করে এই সমস্যা বেড়ে গেছে। আন্দোলনকারীদের দমন করতে বা ক্ষয়ক্ষতি কমাতে, সরকার গত এক মাসে বিভিন্ন থানায় অনেক মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলায় কয়েকজনের নাম উল্লেখ হলেও হাজার হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর, রাজধানীসহ বিভিন্ন থানায় নতুন মামলার ঢল নেমেছে। এসব মামলায়ও উল্লেখযোগ্য আসামিদের নামের পাশাপাশি হাজার হাজার অজ্ঞাতনামা আসামির নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য মানুষ মামলার শিকার হয়ে ঘরছাড়া হয়ে পড়ছেন।
কোটার আন্দোলনের সহিংসতার ঘটনায় সাভার ও আশুলিয়া থানায় ১১টি মামলা হয়েছে, যেখানে অজ্ঞাতনামা প্রায় সাড়ে ৫ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। কাফরুল থানায় ৪ থেকে ৫ হাজার এবং সাভার মডেল থানায় প্রায় পাঁচ হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায়ও অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা চার থেকে পাঁচ হাজার।
মানবাধিকার সংগঠন এমএসএফের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকার পতনের পর শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রী-এমপি ও দলের নেতাদের নামে ২৬৮টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় নাম উল্লেখ করা হয়েছে ২৬ হাজার ২৬৪ জনের এবং অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫৫৫ জনকে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এসব মামলায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হাজার হাজার মানুষকে অজ্ঞাতনামা করে গ্রেফতার করা হচ্ছে, যা পুলিশের হাতে নতুন বাণিজ্যের সুযোগ করে দিচ্ছে। অনেকেই এসব মামলায় নাম অন্তর্ভুক্তির ভয়ে ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন বলেন, অজ্ঞাতনামা আসামি করার প্রক্রিয়া আইনসঙ্গত নয়। তিনি জানান, মানুষের ক্ষোভ ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে এবং আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক হবে।
মানবাধিকার কর্মী জেড আই খান পান্না মনে করেন, এসব মামলা প্রথম ধাপে টিকবে না এবং মানুষের হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি এটিকে একটি ট্রেন্ড হিসেবে দেখেন, যা বন্ধ করার চেষ্টা করবেন।
এছাড়া, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, এখন অনেকেই আগাম জামিন পাচ্ছেন এবং আইনিভাবে মামলাগুলো মোকাবিলা করতে পারবেন। আইনশৃঙ্খলা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এইউ

