শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

নেই চাঁদাবাজদের উৎপাত, গাবতলী বাস টার্মিনালে স্বস্তি

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৫ পিএম

শেয়ার করুন:

নেই চাঁদাবাজদের উৎপাত, গাবতলী বাস টার্মিনালে স্বস্তি
চাঁদাবাজদের উৎপাত নেই গাবতলী বাস টার্মিনালে। ছবি: ঢাকা মেইল

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বদলে গেছে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালের চিত্র। আগে যেখানে প্রতি বাস, ট্রাক, সিএনজি এমনকি অটোরিকশা ও লেগুনা চালাতে নিয়মিত চাঁদা দিতে হতো, এখন সেটি বন্ধ। ফলে স্বস্তি ফিরেছে এখানকার পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও চালকদের মাঝে।

বাস টার্মিনাল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগে যেখানে প্রতি যানবাহন থেকে চাঁদা আদায় করতো ক্ষমতাসীন দলের চাঁদাবাজরা, এখন সে চিত্র নেই। তবে সিটি করপোরেশন নির্ধারিত ৫০ ও ১০ টাকা চাঁদা এখনো দিতে হয়। সেটা শুধু আন্তঃজেলা ও লোকাল বাসের জন্য ৫০ টাকা। আর লেগুনা, সিএনজি ও পিকআপের জন্য ১০ টাকা। এই চাঁদা অবশ্য রশিদে কাটা হয়। এই চাঁদার বাইরে অন্য কোনো চাঁদা কাউকে না দিতে সতর্ক করে সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছে টার্মিনালজুড়ে।


বিজ্ঞাপন


সম্প্রতি গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে চালক, হেলপার ও কাউন্টার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

Gabtoli2

গ্রিন সেন্টমার্টিন এক্সপ্রেসের টিকিট বিক্রেতা জাহিদ বলছিলেন, এখন এই টার্মিনালে সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে গেছে। আগে বাস কাউন্টার ছাড়াও প্রতি বাস ছাড়ার সময় চাঁদা দিতে হতো। এগুলো ছিল অঘোষিত। সরকার পরিবর্তনের পর এখন আর সেগুলো দিতে হচ্ছে না।


বিজ্ঞাপন


তার কথার সত্যতা জানতে ঢাকা মেইলের পক্ষ থেকে টার্মিনালের ভেতরে-বাইরে অন্তত ৫০ জনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা সবাই জানিয়েছেন, গাবতলী বাস টার্মিনালে এখন কোনো ধরনের চাঁদা আদায় করছে না কেউ। তারা এখন নির্ভয়ে পরিবহন ব্যবসা চালাচ্ছেন।

আরও পড়ুন

জোর করে মামলা ও লুটপাট-চাঁদাবাজি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সতর্কতা

গাবতলী বাস টার্মিনালের পূর্ব পাশে থাকা তেল পাম্পের সামনে কথা হচ্ছিল জামিল নামে এক পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আগে মানিকগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়াগামী প্রতি বাসকে ১০০ টাকা করে দিতে হতো। এখন সেটা আর দিতে হচ্ছে না। এই চাঁদাটা আদায় করা হতো গরুর হাটের সামনে ট্রাফিক বক্সের সামনের রাস্তায়। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা এসব টাকা তুলতেন। পরে তারা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিতেন।

তার কথার সূত্র ধরে সেই ট্রাফিক বক্সের সামনের মোড়ে অন্তত এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো চাঁদাবাজির চিত্র পাওয়া যায়নি।

Gabtoli4

কথা হয় রাজশাহী যাওয়ার অপেক্ষায় গরু হাটের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ইউনিক রোড রয়েল পরিবহনের হেলপার নজরুলের সঙ্গে। তিনি স্বীকার করেছেন তাকেও আগে বাসপ্রতি ১০০ টাকা করে অঘোষিতভাবে চাঁদা দিতে হতো। সেটার জন্য রশিদ চাইলে আরও ১০০ টাকা অতিরিক্ত গুনতে হতো। এভাবে বছরের পর বছর তাদের সঙ্গে জোর-জবরদস্তি করা হয়েছে।

তার ভাষ্যমতে, এসবের কেউ প্রতিবাদ করলে গাড়ি গন্তব্যে ছাড়তে দেওয়া হতো না। নানা হয়রানি করা হতো। কিন্তু গত ৬ আগস্ট থেকে তাদের এমন ভোগান্তিতে আর পড়তে হচ্ছে না।

আরও পড়ুন

চাঁদাবাজির তথ্য সংগ্রহ করায় সাংবাদিকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা

সাভার ও আশুলিয়া রুটে চলাচলকারী ঠিকানা পরিবহনের হেলপার রবিউল জানান, তারা গাবতলী থেকে গরুর হাটের সামনে এসে বাস দাঁড় করালেই ৫০ টাকা গুনতে হতো। এখন সেই চাঁদা আর দিতে হচ্ছে না। কেন চাঁদা দিতে হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা এখানে চাঁদা আদায় করত সেই লোকগুলো এখন হাওয়া। তিনি বলেন, আগে সাভার রুটে বাস যেতে চাইলেই ৫০ টাকা করে দিতে হতো অঘোষিতভাবে। সেই টাকা এখন দিতে হচ্ছে না। ফলে আমাদেরে ইনকাম বেড়েছে।

Gabtoli3

গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের ভেতরে কয়েকশ বাসের কাউন্টার রয়েছে। যেগুলো থেকে দেশের ৬৩ জেলায় দূরপাল্লার বাসে যাতায়াত করেন যাত্রীরা। এসব বাস কাউন্টার থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করা হতো। তবে গত এক মাস ধরে কেউ কোনো চাঁদা নিতে আসছে না। বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের পরিবর্তে এখন বিএনপির লোকজন চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেলেও গাবতলীতে সেটা পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন

গাজীপুরে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিএনপি’র ২ নেতা বহিষ্কার 

এ বিষয়ে বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। পরে পরিবহন শ্রমিক নেতা জিএম সিরাজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, সরকার বদল হলেও এই টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণ এখনো আওয়ামী লীগের পরিবহন শ্রমিক নেতা রমেশ চন্দ্র ঘোষের হাতেই রয়েছে। তবে তিনি টার্মিনালে আসেন না। আছেন গা ঢাকা দিয়ে।

বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাক কাভার্ডভ্যান মিনি ট্রাক চালক ইউনিয়নের গাবতলী বালুঘাটের নেতা মুজিবুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘টার্মিনালে এখন আগের মতো কোনো চাঁদাবাজি হয় না। পরিবেশ বদলে গেছে।’

এমআইকে/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর