সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা সদরের মাদরাসা মোড়ের বাসিন্দা এনামুল কাওসার (৩২)। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে দেশজুড়ে চলা আন্দোলনের মধ্যে গত ৪ আগস্ট বিকেল তিনটায় সলঙ্গায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলছিল। বাইরে গোলাগুলির শব্দ শুনে তিনি বাসা থেকে বের হন। দাঁড়িয়ে ছিলেন বাসার সামনের রাস্তায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি গুলি এসে লাগে তার পায়ে। মাত্র ২০ থেকে ৩০ ফুট দূরত্বে ছিল পুলিশ। দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও পুলিশ তার পায়ে গুলি ছোঁড়ে। তার একটি গুলি লাগে এনামুলের পায়ে। মাটিতে পড়েন এনামুল। শুরু হয় রক্তক্ষরণ। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। পরে এলাকার লোকজন ধরে তাকে হাসপাতালে নেন। এরপর কয়েক হাসপাতাল ঘুরে সর্বশেষ আসেন ঢাকায়। কিন্তু সেই গুলি লাগা পা আর রক্ষা করতে পারেননি এনামুল। কেটে ফেলতে হয়।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুর্নবাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) বিছানায় শুয়ে ঢাকা মেইলের কাছে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা করছিলেন এনামুল।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, গুলিতে আহত হওয়ার পর তিনি যান সিরাজগঞ্জের আরেক উপজেলা উল্লাপাড়ায়। সেখানকার পূর্নিমাগাতিতে একটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। পরে যান বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজে। সেখানেও ভালো চিকিৎসা পাননি। পরে সেই রাতে ঢাকায় আসার ইচ্ছা থাকলেও পরিস্থিতিও ভালো ছিল না। তাছাড়া অ্যাম্বুলেন্স সংকটও ছিল চরমে। কোন গাড়িও আসতে চাইছিল না। এরপর আটদিন বিনা চিকিৎসায় বাড়িতে কাটান। সবশেষ গত ১১ আগস্ট ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে আসেন তিনি। কিন্তু ততক্ষণে পায়ের অবস্থা অনেক নাজুক হয়েছে। হাসপাতালে টানা ১৪ দিন থাকলেও পায়ের কোনো উন্নতি হয়নি। শেষমেষ চিকিৎসকরা তার পা কেটে ফেলতে বাধ্য হন।
এনামুল বলেন, ‘৪ আগস্ট আমি গোসল কইরা বাসার বাইরে দাঁড়ায় আছিলাম। ওখানে সবাই গ্যাছে, আমরাও গেছি। কতজন চইলা আইছে, কিছুজন ছিল। আমাকে গুলিটা করছে পুলিশ। তাদের থাকি আমি ২০ থাকি ৩০ ফুট দূরত্বে দাড়ায় আছিলাম।’
গুলি লাগার পরের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ’রক্ত বন্ধ হয় না। সেখান থাকি গেছিলাম উল্লাপাড়ার পূর্নিমাগাতি। তারা সাধারণ ট্রিটমেন্ট দিয়ে কইল সিরাজগঞ্জ যান। সেখানেও তারা চিকিৎসা দিল না। সেখান থাকি সিরাজগঞ্জ হাসপাতালে গেলাম। তারা কিছু ব্যান্ডেজ ও এক্সেরে করাইল। তারপর কইল রগের সমস্যা হইছে। পরে গেলাম বগুড়ায়। ঢাকা আসতেই চাইছি কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স পাইনি। ওখান থাকি ভালো ট্রিটমেন্ট পাইনি। এরপর ভাবছি চইলা যাব। কিন্তু গত ১১ আগস্ট ঢাকায় আইছি। গত ২৫ আগস্ট পা টা কাইটা ফেলাইল।’
বিজ্ঞাপন
এনামুল আরও জানান, তার পায়ে একটি গুলি লাগলেও সেটি হাঁটুর নিচে লাগায় পায়ের অবস্থা ভালো ছিল না। হাঁটুর চাকতি ভেঙে গুড়ো হয়ে যাওয়া পায়ের অবস্থা খারাপ ছিল। ফলে চিকিৎসকরা পা টি কেটে ফেলেন।
এনামুলের তিন বছর ও ১৫ মাসের দুটি সন্তান আছে। গ্রামে তেমন কিছু করতেন না। সামনে কীভাবে সংসার চলবে এখন সেই চিন্তা ভর করেছে তার।
এমআইকে/এমআর