মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

প্রস্তুত যৌথ বাহিনী, যেভাবে চলবে অভিযান

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৯ পিএম

শেয়ার করুন:

প্রস্তুত যৌথ বাহিনী, যেভাবে চলবে অভিযান
প্রতীকী ছবি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে শুরু হচ্ছে যৌথ বাহিনীর অভিযান। মাদক ও অবৈধ অস্ত্র ছাড়াও চিহ্নিত অপরাধীদের ধরা হবে এই অভিযানে। আজ মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া এই অভিযান কেমন হবে, কীভাবে চলবে কার্যক্রম সেটা নিয়ে জনমনে রয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। এবারের অভিযান ২০০৭ সালের মতো করে চালানো হবে নাকি নতুনত্ব কিছু থাকবে, সেই প্রশ্নও আছে কারও কারও।  

জানা গেছে, যৌথ এই অভিযানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, কোস্টগার্ড এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‍্যাব অংশ নেবে। সব বাহিনী সমন্বয় করে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে। কোনো অপরাধী যেন ছাড় না পায় সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখা হবে।


বিজ্ঞাপন


মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে অভিযান শুরু হবে। অভিযানে মূল ফোকাস থাকবে অবৈধ অস্ত্র। বিশেষ করে সম্প্রতি বিভিন্ন থানা থেকে যেসব অস্ত্র লুট হয়েছে সেগুলো যাদের কাছে পাওয়া যাবে তাদেরই গ্রেফতার করবে যৌথ বাহিনী। এছাড়া গত ১৫ বছরে বৈধ অস্ত্রের যারা লাইসেন্স নিয়েছিলেন তাদের বেশির ভাগই জমা দেননি। অথচ গত ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছিল, যারা বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছেন তাদের ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অস্ত্র জমা দিতে হবে। সম্প্রতি থানাগুলো থেকে ‍লুট হওয়া অস্ত্রও বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে মঙ্গলবারের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে বেশির ভাগ অস্ত্র জমা পড়েনি বলে সূত্রে জানা গেছে।

আরও পড়ুন

অস্ত্র উদ্ধার অভিযান কেন, কীভাবে পরিচালিত হবে?

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স যারা নিয়েছিলেন তাদের অনেকে জমা দেননি। অভিযানে তাদের ধরা হবে। এছাড়া সম্প্রতি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যারা অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার করেছেন সেই অস্ত্রধারীদেরও ধরবে যৌথ বাহিনী। এ নিয়ে ইতোমধ্যে তালিকাও হয়েছে। এলাকাভিত্তিক তালিকা ধরে এই অভিযান চলবে। প্রত্যেক এলাকার সন্ত্রাসীদের নাম সেই তালিকায় স্থান পেয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।

Arms2


বিজ্ঞাপন


সূত্র আরও জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধি ও কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি করেছেন। তাদের গুলিতে অনেকে মারা গেছেন। সেই সব গুলির ভিডিও এখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে। সেই ভিডিওগুলোর সূত্র ধরে অস্ত্রধারীদের চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যৌথ বাহিনীর অভিযানে তাদের ধরা হবে। 

ডিএমপির একটি সূত্র জানায়, যৌথ বাহিনীর কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণের জন্য ডিএমপিতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) ডিএমপি সদর দফতরে কমিশনার মো. মাইনুল হাসানের সভাপতিত্বে এই সমন্বয় সভায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও বাংলাদেশ আনসারের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন ডিসি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের যত ডিসি আছেন তাদের সবাইকে নিয়ে মিটিং হয়েছে। সেখানে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া সন্ধ্যায়ও ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মিটিংয়ে বসেছেন। যৌথ অভিযান কীভাবে পরিচালনা করা হবে এবং কাদের বিরুদ্ধে এই অভিযান চলবে, এসব সেখানে ঠিক করা হচ্ছে। মধ্যরাত থেকে অভিযান শুরু হতে পারে। এজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সব ইউনিটকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। 

আরও পড়ুন

পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্র ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা না দিলে ব্যবস্থা

র‌্যাব-১০ এর সিইও মহিবুল ইসলাম খান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি চলছে। অভিযানে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। মাদক এবং অস্ত্রবিরোধী এই অভিযান চলবে। এখন পর্যন্ত কোন এলাকায় কীভাবে অভিযান চালানো হবে তার ব্যাপারে নির্দেশনা আসেনি। এ ব্যাপারে মিটিং চলছে।’

গাজীপুরের পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ ঢাকা মেইলকে জানান, তারা যৌথ বাহিনীর অভিযান কীভাবে চলবে এ নিয়ে মিটিং করছেন। তবে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়নি কীভাবে এ অভিযান তারা শুরু করবেন।  

Police4

বিভিন্ন বাহিনী ছাড়াও জেলা প্রশাসকদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা নিজ নিজ জেলার এবিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

রংপুর জেলা প্রশাসক মোছা. শাহনাজ বেগম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রংপুরে রাত থেকে অভিযান শুরু হচ্ছে। এই অভিযানে অস্ত্র মামলার আসামি, বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারকারী, অবৈধ অস্ত্রের কারবারি ও ব্যবহারকারীদের গ্রেফতার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন

লুট হওয়া অস্ত্র সেনা ক্যাম্পে জমা দেওয়ার অনুরোধ

মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আজ (মঙ্গলবার) সব বৈধ এবং অবৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। রাত ১২টা থেকে আমাদের যৌথবাহিনীর অপারেশন শুরু হবে হাতিয়ার কালেকশনের জন্য। আমরা যেন অবৈধ অস্ত্রগুলো সংগ্রহ করতে পারি। আমি এ ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা চাই।

উপদেষ্টা বলেন, মাদক আমাদের বড় সমস্যা। আমরা কীভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ আমাদের জন্য খুবই জরুরি। আমরা কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। মাদকের গডফাদারদের আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ করছি।

এমআইকে/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর