মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

হেলিকপ্টার থেকে করা গুলি লাগে মনিরের দুই পায়ে

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৩০ পিএম

শেয়ার করুন:

হেলিকপ্টার থেকে করা গুলি লাগে মনিরের দুই পায়ে
ছবি: ঢাকা মেইল

মনির হোসেন (২২), গাজীপুরের একটি গার্মেন্টসে লাইনম্যান হিসেবে কাজ করতেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় তার জীবনে এসে দাঁড়ায় এক কালো অধ্যায়। ২০ জুলাই গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় আন্দোলনে অংশগ্রহণের সময়, যখন আকাশে তিনটি হেলিকপ্টার উড়ছিল, তখন একটি হেলিকপ্টার থেকে তার পায়ে গুলি করা হয়। সেই থেকেই তার জীবনটা বদলে যায়।

সকাল ১১টা। শহরের বিক্ষোভকারীদের ওপর একটি হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো হয়। সেই মুহূর্তে মনিরের মাথার উপরে ছিল তিনটি হেলিকপ্টার, দুটি কালো এবং একটি বিজিবির পোশাকের রঙ ধারণ করা। সেই বিজিবি হেলিকপ্টার থেকেই গুলি চলে মনিরের দুই পায়ে। ‘প্রথমে আমি বুঝতেই পারিনি। পরে লক্ষ্য করি, গুলি আকাশ থেকে আসছে’, বলেন মনির। গুলির পাশাপাশি হেলিকপ্টার থেকে টিয়ারশেল এবং সাউন্ড গ্রেনেডও নিক্ষেপ করা হয়।


বিজ্ঞাপন


মনির পটুয়াখালীর ধুমকি উপজেলার আলমগীর হাওলাদারের ছেলে। গাজীপুরের ময়মনসিংহ রোডে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে তার পরিবার ছিল। তিনি ছিলেন একমাত্র উপার্জনকারী। এখন তার ঠিকানা হাসপাতালে বিছানা। গত মাসে গার্মেন্টস থেকে তার শেষ বেতন দেওয়া হয়েছে, কিন্তু চলতি মাসে সংসার চলবে কীভাবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

মনির সেই দিনটির কথা স্মরণ করে বলেন, "গার্মেন্টসের ছুটি ছিল, আমরা সবাই আন্দোলনে ছিলাম। হঠাৎ আমার পায়ে গুলি লাগে। প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে দেখি, আকাশের হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হচ্ছে। আমি মাটিতে পড়ে যাই, আমার দুই পা দিয়ে রক্ত ঝরছে। পাশে থাকা কলিগ আমাকে ধরে সিটি হাসপাতালে নিয়ে যায়।"

সিটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে, ২১ জুলাই তিনি জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) আসেন। পথে, পুলিশের, বিজিবির এবং সরকারের পক্ষের সন্ত্রাসীদের হামলার মাঝে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় পৌঁছান।

বর্তমানে, নিটোরে চিকিৎসাধীন মনিরের পায়ের গতি ফিরে পেতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগবে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এই দীর্ঘ সময় ধরে তার সংসার কীভাবে চলবে, চিকিৎসার খরচ কীভাবে যোগাবে—এই চিন্তায় মনিরের ঘুম আসে না।


বিজ্ঞাপন


মনিরের এই কষ্টের কাহিনী একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরে, যা আমাদের সমাজের অসঙ্গতি এবং মানবিকতার প্রয়োজনীয়তার দিকে ইঙ্গিত দেয়।

এমআইকে 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর