দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধ, গণতন্ত্র, সুশাসন ও শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্র কাঠামোতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ৫৫টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে এসব ঘটনায় জড়িতদের সুষ্ঠ বিচার, ফ্যাসিবাদী সরকারের বিভিন্ন সময়ে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ঢেলে সাজানো, নির্বাচন কশিমনের সংস্কার, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমিয়ে আনা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফোরানো, বিভিন্ন সময়ে খুন ও গুমের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা, দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) শক্তিশালী করতে তার সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয় এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নানা সংস্কারের কথা তুলে ধরা হয়েছে এসব প্রস্তাবনায়।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
লিখিত বক্তব্য ছাড়াও তিনি সংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
পাচার হওয়া অর্থ কিভাবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব জানতে চাইলে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পাচার হওয়া অর্থ অবশ্যই ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ জন্য উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের কার্যকর জবাবদিহির অনুকরণীয় উদাহরণ স্থাপনে দুদক, বিএফআইইউ, এনবিআর, সিআইডি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে।
এ জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো যেসব দেশে অর্থ পাচার হয়েছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তথ্য-উপাত্ত বিনিময় করে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনবে। তারা এ জন্য আইন প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই কাজ করবে। যারা অর্থ পাচার করেছে তাদের ব্যাপারে জানা সম্ভব এবং যেসব অর্থ পাচার হয়েছে সেগুলো এই প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনাসহ জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, আমাদের আইনে যে অর্থ পাচার করেছে তার তিনগুণ জরিমানাসহ ১৪ বছর সাজা হবে। এসব আইনেই বলা আছে। সাবেক এক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে বিদেশে অর্থ পাচার করলে সেই অর্থ এমন সব প্রক্রিয়া মেনেই ফেরত আনা হয়েছিল।
তিনি মনে করেন, নতুন বাংলাদেশ, রাষ্ট্র সংস্কার ও রাজনৈতিক সমঝোতা হলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ম্যান্ডেট। এগুলো জনগণেরও ম্যান্ডেট বলে মনে করেন তিনি। এই কাজগুলো সরবরাহ করার জন্য যে সময় দরকার তা তাদের দেওয়া দরকার। তবে বাস্তবায়নে কতটুকু সময় লাগবে তা তারাই নির্ধারণ করবে।
এছাড়াও শান্তি-শৃঙ্খলা, জননিরাপত্তা ও প্রশাসনিক স্বাভাবিকতা নিশ্চিত করা, নজিরবিহীন প্রাণহানিসহ বহুমাত্রিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য সরাসরি ও হুকুমের অপরাধে দায়ী সকলকে জাতিসংঘের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বিচার প্রক্রিয়া যেন কোনোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, তা নিশ্চিতে যথাযথ আইনসম্মত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা এবং নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আশু পদক্ষেপ নেওয়া।
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি নিশ্চিত করা, আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম স্বাধীনভাবে পরিচালনার জন্য বিচার বিভাগের পরিপূর্ণ ক্ষমতায়িত নিজস্ব সচিবালয় স্থাপন ও কার্যকর করার প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
এসব প্রস্তাবনার পাশাপাশি জাতীয় বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করা, সকল প্রকার সরকারি ক্রয়, প্রকল্প পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে "ভ্যালু ফর মানি" অর্জনে অন্তরায় ও অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করে এমন আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা সমূহ চিহ্নিত করে সংস্কারের উদ্যেগ গ্রহণ, অর্থ পাচার রোধে যে সকল দেশে অর্থপাচার হয়েছে, সেই সকল দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পারস্পরিক আইনি সহায়তা (মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স) কার্যকর করা, আমদানি-রফতানি, হুন্ডি, আর্থিক খাতে জালিয়াতি ও বেনামি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কৃত সকল অর্থ পাচার বন্ধ করতে হবে। বিশেষ করে বিএফআইইউ, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, দুদক, সিআইডি, বাংলাদেশ পুলিশ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্ষমতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করে আমদানি- রফতানির আড়ালে যোগসাজশমূলক চালান জালিয়াতিনির্ভর অর্থপাচারের প্রক্রিয়া রুদ্ধ করা ও দেশে-বিদেশে সকল আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে "দ্য কমন রিপোটিং স্ট্যান্ডার্ড (সিআরএস)"-এর মাধ্যমে অনতিবিলম্বে আর্থিক লেনদেনের স্বয়ংক্রিয় তথা প্রাপ্তির সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করার প্রস্তাবও তুলে ধরেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
এমআইকে/এমএইচএম

