মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

পদত্যাগের পর স্কুলে ফিরতে সাবেক প্রধান শিক্ষিকা ও তার ছেলের ‘অপচেষ্টা’

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৫১ পিএম

শেয়ার করুন:

পদত্যাগের পর স্কুলে ফিরতে সাবেক প্রধান শিক্ষিকা ও তার ছেলের ‘অপচেষ্টা’

বেশি বেতন আদায়, স্কুল প্রাঙ্গণকে রাজনৈতিক অফিস বানানো, দলীয় লোকজনকে প্রাধান্য দিয়ে চাকরি দেওয়া, ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের সাথে খারাপ আচরণসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মেহেরুন্নেসা সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। এতে খুশি প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তবে তিনি তার পদত্যাগপত্র বাতিল করতে নিজের ছেলেকে নিয়ে নানা অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর অংশ হিসেবে ছেলের বন্ধুদের দিয়ে স্কুলের শিক্ষার্থীদের মারধর ও হুমকি প্রদান, ফেসবুক গ্রুপ খুলে নিজের পক্ষে প্রচারণা, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দিয়ে প্রশাসনের সাথে লবিং, সাবেক ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যানের বাসায় মিটিংসহ নানাভাবে চেষ্টা করছেন। এতে আতঙ্কে ভুগছেন প্রতিষ্ঠানটির ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা।

গত বুধবার দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরা প্রধান শিক্ষিকার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় পরিস্থিতি বেগতিক দেখে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলেও বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য এখন মরিয়া হয়ে উঠেছেন। শুধু তাই নয়, রোববার ক্যাম্পাসটিতে তার লোকজন নিয়ে ফেরার ঘোষণাও দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অভিভাবক ও স্কুলটির ছাত্রছাত্রীরা।


বিজ্ঞাপন


শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় তাদেরকে নানাভাবে নির্যাতন করেছেন মেহেরুন্নেসা ও তার ছেলে সাকিব। যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলনে যেতেন তাদের ফোন চেক, ফেসবুক আইডি চেক এবং তাদেরকে নানাভাবে নজরদারির হুমকিও দিতেন তারা। পাশাপাশি আন্দোলন ঠেকাতে স্কুল বন্ধও ঘোষণা করেছিলেন মেহেরুন্নেসা। এসব কারণে ছাত্রছাত্রীরা তার ওপর ক্ষুদ্ধ ছিল। গত বুধবার তারা প্রধান শিক্ষিকার পদত্যাগের দাবিতে প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে প্রবেশ করলে কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে তার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সাকিব ইসলাম তার ছাত্রলীগের বন্ধু ও কর্মীদের নিয়ে আসেন। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের নানাভাবে বাধা দেয় এবং মারধর করে বলে অভিযোগ।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, এ সময় হাজারীবাগের ছাত্রলীগ নেতা সাকিব ইসলাম ও অন্যদের হাতে লাঠি-সোটা ছিল। তারা শিক্ষার্থীদেরকে মারধর করেছেন। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। এছাড়া ছাত্রীদের কয়েকটি কক্ষে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, যাতে তারা বিক্ষোভ করতে না পারে।

শিক্ষার্থীদের দাবি, এসব করা হয়েছিল মেহেরুন্নেসার ছেলে সাকিবের নির্দেশে। বিষয়টি মেহেরুন্নেসা জানলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি। ওইদিন সাকিব ইসলাম স্কুল ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন তা একাধিক সূত্রও নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে সাবেক প্রধান শিক্ষিকার ছেলে এবং হাজারীবাগ ছাত্রলীগ নেতা সাকিব ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।


বিজ্ঞাপন


Rayerbazar_High_School--02

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ’রায়েরবাজার হাই স্কুল (এক্স অ্যান্ড প্রেজেন্ট স্টুডেন্টস) অফিসিয়াল গ্রুপ’ রয়েছে, যার এডমিন সেই সাবেক প্রধান শিক্ষিকার ছেলে সাকিব ইসলাম। প্রধান শিক্ষিকার পদত্যাগের পর তার ছেলে সাকিব ওই গ্রুপে মায়ের পক্ষে সাফাই গেয়ে পোস্ট দিতে থাকেন। সেখানে যারা প্রধান শিক্ষিকার পদত্যাগের কারণ এবং তার বিরুদ্ধে লেখালেখি করেছেন তাদের কারো পোস্ট পাবলিশ করা হয়নি। বিরূপ মন্তব্য করলে সেই ব্যক্তিকে গ্রুপ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

তবে এ বিষয়ে স্কুলটির সাবেক প্রধান শিক্ষিকা মিসেস মেহেরুন্নেসা ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি পদত্যাগ করিনি। আমাকে বিএনপি-জামাতের লোকজন পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছেন।

তার ছেলে সাকিব ওইদিন বন্ধুদের নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ওপর হামলা করেছে এবং বাধা দিয়েছেন— এ অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার ছেলে সেখানে ছিল কিনা জানা নেই। আর ওই সময় তো আমি রুমে আটকা। ফেসবুকে আপনার পক্ষে পোস্ট দিয়েছে জানালে তিনি বলেন, আমার ছেলে কোনো ফেসবুক গ্রুপ চালায় না। স্কুল নিয়ে একাধিক ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে।

স্কুলে গন্ডগোলের সময় আপনি কেন ৯৯৯-এ ফোন করেননি— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা আমাকে মারধর করার উপক্রম হয়েছিল। তখন ফোন করার সময় ছিল না।

তিনি আরও জানান, আগামীকাল রোববার স্কুল ক্যাম্পাসে তিনি লোকজন নিয়ে আসবেন এবং বিষয়টি নিয়ে আবারও সবার সাথে কথা বলবেন।

এমআইকে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর