ভিডিও বার্তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কর্মসূচি প্রত্যাহার ঘোষণা দিয়েছেন ডিবি পুলিশের হেফাজতে থাকা ছয় সমন্বয়ক। রোববার (২৮ জুলাই) রাতে ডিবি হেফাজতে থাকা সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন নাহিদ ইসলাম।
কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তদন্ত করে বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা। এ সময় সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দিতে আহ্বান জানান সমন্বয়কারীরা।
বিজ্ঞাপন
এর আগে শুক্রবার (২৬ জুলাই) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়। একদিন পর শনিবার (২৭ জুলাই) রাতে সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকেও ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
এদিকে ডিবি হেফাজতে থাকা সমন্বয়কদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন বাইরে থাকা অন্য সমন্বয়করা। তাদেরই একজন আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, সমন্বয়কদের জিম্মি করে স্টেটমেন্ট দেওয়া হয়েছে। সমন্বয়করা ভয়ভীতির মুখে গোয়েন্দা সংস্থার লিখে দেওয়া বক্তব্য রিডিং পড়েছে, আমরা সেই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি এবং জোরপূর্বক বক্তব্য আদায় করার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমাদের আন্দোলন চলবে।
আরেক সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, ডিবি কার্যালয়ে সমন্বয়কদের ব্ল্যাকমেইল করে লিখিত বক্তব্য পাঠ করানো হয়েছে। এই বিবৃতি ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না।
সহ-সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, তারা কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল আমরা জানি না। এমন সিদ্ধান্ত শোনার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না।
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা আগে ফিরুক। যেহেতু তারাই এই আন্দোলনের মূল শক্তি। তাদের সঙ্গে সবাই বসে আমরা জানতে পারব কী কারণ ছিল এর পেছনে। এরপর আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব।
এর আগে কোটা সংস্কার চেয়ে ১ জুলাই থেকে আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে প্রায় সারাদেশে। পরদিন থেকে এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, সংঘর্ষ, সহিংসতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে।
সহিংসতায় এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক প্রাণহানির খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও সরকারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন ১৪৭ জনের মৃত্যুর কথা। সরকারি হিসাবে ছাত্র যারা নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন হাসপাতাল, বিভিন্ন জেলা এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা যে তথ্য পেয়েছেন, তার সংখ্যা এটি (১৪৭ জন)। এই তথ্যটি আজ রোববার পর্যন্ত পাওয়া হিসাব বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, আরও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আরও খবর পাওয়া গেলে তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এখনো তারা অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। এরপর যদি মৃত্যুর প্রকৃত তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে সংখ্যাটি বাড়তে পারে।
উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে সরকারি চাকরিতে প্রথম কোটা ব্যবস্থা চালু করা হয়। ১৯৭৬ সালে কোটায় পরিবর্তন আনা হয়। ১৯৮৫ সালে আবারও পরিবর্তন আনা হয় কোটা ব্যবস্থায়। ১৯৯৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য কোটা বৃদ্ধি করা হয়। ২০১২ সালে কোটা ব্যবস্থায় সংশোধনী আনা হয়। ২০১৮ সালে কোটা ব্যবস্থায় সংস্কার চেয়ে দেশব্যাপী বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। তারই পরিপ্রেক্ষিতে একই বছর কোটা ব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে সেই মর্মে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
চলতি বছরের ৫ জুন এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ছয়জন। একই দিন কোটা বাতিল সংক্রান্ত ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এরপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। পরে সরকারের আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের আদেশের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দেন। গত ২১ জুলাই দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই সংক্রান্ত রায় ঘোষণা করেন।
এইউ

