শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

প্রশংসায় ভাসছেন অদম্য বেলায়েত শেখ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২১ মে ২০২২, ০৪:০১ পিএম

শেয়ার করুন:

প্রশংসায় ভাসছেন অদম্য বেলায়েত শেখ

যে বয়সে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার কথা, সেই বয়সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্নে বিভোর বেলায়েত শেখ। অদম্য ইচ্ছার কারণে আগামী ১১ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব বেলায়েত।

যদিও এই পর্যন্ত চলার পথটা খুব একটা সহজ ছিল না তার জন্য। ক্লাস করতে হয়েছে সন্তানের বয়সী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তবে প্রতিষ্ঠানে কখনো তাকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি। কিন্তু আশপাশের কিছু মানুষের অনেক হাসি-ঠাট্টা সহ্য করতে হয়েছে তাকে।


বিজ্ঞাপন


দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার চেষ্টায় যখন এগিয়ে যাচ্ছেন, তখন চারিদিকে চেনা-অচেনা মানুষ তাকে বাহবা দিচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ছবি দিয়ে অনেকেই প্রশংসা করছেন। শেষ পর্যন্ত যেন তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নপূরণ হয় সেজন্য শুভকামনা জানাচ্ছেন অনেক নেটিজেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার সুযোগ পেতে সবার দোয়া চেয়েছেন বেলায়েত শেখ।

কেন এই বয়সে পড়াশোনায় মনোযোগ দিয়েছেন আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন ভর্তির চেষ্টা করছেন আলাপকালে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেন গাজীপুরের শ্রীপুরের এই ব্যবসায়ী।

বেলায়েত শেখ জানান, ১৯৮৩ সালে তার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাবার অসুস্থতার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে পরিবারের হাল ধরতে হয়েছিল। তাই উচ্চশিক্ষার সুযোগ হারাতে হয়। কিন্তু নিজে স্বপ্নপূরণ করতে না পারলেও ভাই ও সন্তানদের নিয়ে স্বপ্নপূরণের চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেনি। তাতেও দমে যাননি বেলায়েত। এবার নিজেই নেমে পড়েছেন স্বপ্নপূরণের জন্য। সেজন্য ৫০ বছর বয়সে ২০১৭ সালে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ২০১৯ সালে রাজধানী ঢাকার বাসাবো এলাকায় অবস্থিত দারুল ইসলাম আলিম মাদ্রাসা থেকে ৪ দশমিক ৪৩ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন রামপুরায় অবস্থিত মহানগর কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে। সেখানে থেকে ২০২১ সালে ৪ দশমিক ৫৮ জিপিএ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন।


বিজ্ঞাপন


এরপর শুরু করেও নিজের স্বপ্নপূরণের সিঁড়িতে উঠতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নপূরণে প্রস্তুতি নিতে গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছেন। নিয়মিত পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার চেষ্টা করছেন দিনভর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পাসের নির্দিষ্ট সালের শর্ত থাকলেও বয়সের কোনো শর্ত নেই। যেটা বেলায়েত শেখের জন্য সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে এসেছে।

তিন সন্তানের জনক বেলায়েত শেখের বিবাহিত বড় ছেলে ব্যবসা করছেন। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়েছে ২০১৭ সালে আর ছোট ছেলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। দৈনিক করোতোয়া পত্রিকার শ্রীপুর প্রতিনিধি বেলায়েত শেখ।

৫০ বছরে পা রাখার পর ফের পড়াশোনা শুরু করে অনেকের ‘হাসি-ঠাট্টার’ শিকার হতে হয়েছে বলে জানান বেলায়েত। গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, শুরুর দিকে এটি আমার জন্য কিছুটা কঠিনই ছিল। কারণ, তখন কাছের মানুষেরাও আমাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতেন। যদিও একটা পর্যায়ে গিয়ে সেটি ঠিক হয়ে যায়। যাদের সঙ্গে ক্লাস করেছি, তাদের কাছ থেকে কোনো বাজে অভিজ্ঞতার শিকার হইনি। ক্লাসের মেয়েরা আমাকে আঙ্কেল বলে ডাকত, অন্যদিকে আমি তাদের আম্মু বলে ডাকতাম।

নিজেকে সবসময় তরুণ মনে হয় এমন দাবি করে বেলায়েত বলেন, নিজেকে আমার বয়স্ক বলে মনে হয় না, তরুণদের মতোই মনে হয়। সংসার চালিয়ে এবং কাজ করেও যে লেখাপড়া করা যায়, আমি সেটি বর্তমান প্রজন্মকে দেখাতে চাই।

বিইউ/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর