রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাকারীদের শনাক্ত করে শিগগিরই আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) নরসিংদী জেলা কারাগার পরিদর্শন শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একটি স্বার্থন্বেষী মহল, সন্ত্রাসী দল ও যারা স্বাধীনতাবিরোধী-সরকার পতন করার জন্যই শুধু নরসিংদী নয় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ করেছে। যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপনারা দেখেছেন, সেতু ভবনকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে শেষ করে দিয়েছে। যে সেতু ভবনে পদ্মা সেতু ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসের ডাটা রিজার্ভ ছিল। ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় অধিদফতরের ভবনটিও পুড়িয়ে দিয়েছে। এ ভবনের ওপর ইন্টারনেটের অফিসগুলো ছিল। সেগুলো পুড়িয়ে দেওয়ায় ইন্টারনেটের এ বিপর্যয়। বিটিভি ভবন-যেখানে স্বাধীনতার আগে থেকে বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য ধারণ করে রেখেছিল, সে আর্কাইভগুলো তারা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে শেষ করে দিয়েছে। মেট্রোরেলে আক্রমণ করেছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কন্ট্রোল রুমগুলোতে আগুন দিয়েছে।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এখানেই শেষ নয়। তারা নরসিংদীর কারগার ভাঙচুর করেছে, আগুন দিয়েছে, অস্ত্রাগার লুট করেছে। যেসব জঙ্গি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল, আমাদের পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দীর্ঘদিন তাদের ফলো করে আটক করেছিল। এ কারাগারে ৯ জঙ্গি ছিল। তাদের তারা মুক্ত করে নিয়ে গেছে।
এটা ক্লিয়ার, দেশকে একটি বিপর্যস্ত পর্যায়ে নেওয়ার জন্য ও এগিয়ে যাওয়া দেশকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য তারা আক্রমণ করেছে। আমরা এসব কার্যকলাপের নিন্দা করছি। যারা এ কাজগুলো করেছে, তাদের খুঁজে বের করে আমরা আইনে সোপর্দ করব। তাদের বিরুদ্ধে যা যা করার সবই করব ইনশাআল্লাহ। আমরা যতটুকু খবর পেয়েছি, কারাগারে ৮২৬ জন বন্দি ছিল। এদের মধ্যে দুজন মহিলাসহ ৯ জঙ্গি ছিল। এরা যে কত ভয়ংকর তা আপনারা হয়তো অনেকে জানেন না। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীসহ যারা এগুলো দেখেছি, আমরা জানি তারা কতটা ভয়ংকর।
মন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ আজকে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে, সেটাকে শেষ করে দেওয়ার জন্য এ হামলা চালিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এ ঘটনায় কারও গাফিলতি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র সচিবকে প্রধান করে ছয় সদস্য বিশিষ্ট আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের আগামী ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তারা তদন্ত করবে এ ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষের কারও গাফিলতি ছিল কি না। আমরা তাদেরও আইনের আওতায় আনব।
‘আমরা অবশ্যই দুষ্কৃতকারীদের, রাষ্ট্রদ্রোহী ব্যক্তিদের এবং যারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তাদের শনাক্ত করে এবং শান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হলে আমরা সবকিছু আবার প্রত্যাহার করব। এ পর্যন্ত ৯৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের চিরুনী অভিযান চলছে। আর্মি, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড, আনসার এবং এ দেশের জনগণ সবাই মিলে আমরা তাদের প্রতিহত করব। এছাড়া হামলাকারীরা লুটে নেওয়া অস্ত্র দিয়েই আমাদের পুলিশ, বিজিবি ও আর্মিদের ওপর গুলি ছুড়েছে। যথেষ্ট পরিমাণ পুলিশ আহত হয়েছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী অত্যন্ত চৌকস। তারা দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নরসিংদী সদরের সংসদ সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (বীরপ্রতিক), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব জাহাঙ্গীর আলম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব মশিউর রহমান, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত আইজিপি (হাইওয়ে) ও নরসিংদীর সাবেক পুলিশ সুপার সাহাব উদ্দিন খান, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম প্রমুখ।
এমআর