রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

কোটা আন্দোলন ও বৃষ্টিতে বিপাকে ব্যবসায়ীরা

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ১৫ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩০ পিএম

শেয়ার করুন:

কোটা আন্দোলন ও বৃষ্টিতে বিপাকে ব্যবসায়ীরা

রোববার সারাদিনেও একটি কাপড় বিক্রি করতে পারেননি রাজধানীর নিউমার্কেটের বিপরীত পাশে অবস্থিত ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের শোভা জামদানি কুটিরের কর্মচারীরা। পাশেই জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান ‘তাঁত ঘর’। প্রতিষ্ঠানটির কর্মী পিন্টু বলেন, সকাল থেকে বসে আছি। এখন সন্ধ্যা ৭টা বাজে। কিছুক্ষণ পর দোকান বন্ধ করব। কিন্তু বিসমিল্লাহ করতে পারিনি। মাসুদ নামে আরেকজন বলেন, সকাল থেকে কোনো ক্রেতা নেই, ফলে তারা বসে আছেন।

সারাদেশে চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনের সাথে গত শুক্রবারের প্রবল বৃষ্টির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়েছে ঢাকার নিউমার্কেট এলাকার আশপাশে থাকা ৩০টি মার্কেটের ওপর। বিক্রি কমে গেছে।


বিজ্ঞাপন


শুক্রবারের সকাল থেকে চলা একটানা বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন দোকানীরা, যা পুষিয়ে নিতে কিছুদিন সময় লাগবে বলে মনে করছেন তারা।

নিউমার্কেটের পাশে চন্দ্রিমা মার্কেটের নিচে রুমাল, আন্ডারওয়্যার, মাস্ক ও গেঞ্জির ছোট একটি দোকান চালান রুবেল সরকার। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, একে তো আন্দোলনে গত সাতদিন থাইক্যা দোকান চালাইবার পারি নাই, তার ওপর বৃষ্টির বাগড়া। গত সপ্তাহ ছাত্রদের কোটা আন্দোলন চলাকালে প্রতিদিন দেড় থেকে ২ হাজার টাকা বিক্রি করছি মাত্র। অন্যান্য দিন ৮-১০ হাজার টাকা বিক্রি করি। আমাগো কষ্টের কথা কার কাছে কমু।

পাশেই ব্যবসা করেন সুমন। তিনিও একই কথা জানালেন। সংসার চালানোর পাশাপাশি একটি সমিতির কিস্তি চালান তিনি। বিক্রি কম হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিনিও।

Imrul_Business-----Inner--01


বিজ্ঞাপন


শুধু রুবেল নয়, তার মতো এই এলাকায় যারা ভাসমান ও অল্প পুঁজির ছোট ব্যবসা করেন তাদের অবস্থা বেশ নাজুক। তারা জানান, আন্দোলন ও বৃষ্টিতে তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তাদের সময় লাগবে।

খুচরা বিক্রেতারা টুকটাক কিছু বিক্রি করতে পারলেও বড় দোকানীরা সেটাও পারেননি।

গত শুক্রবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটির বেশিরভাগ এলাকা ডুবে যায়। তার মধ্যে নিউমার্কেট ছিল অন্যতম।

নিউমার্কেটের বিপরীত পাশের ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের প্রতিটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মার্কেটটি সড়ক থেকে খানিকটা নিচু হওয়ায় পানি ঢুকে প্রতিটি দোকানের বসার গদি ডুবে যায়। পানির নিচে ডুবে ছিল পুরো মার্কেটটি। তবে নিউমার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট ও ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট পানিতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

রোববার বিকেলে সরেজমিন দেখা গেছে, এখনো জমে ওঠেনি মার্কেট। দুই একজন ক্রেতা আসলেও বিক্রি নেই। হতাশ হয়ে বসে আছেন দোকানিরা।

দোকানীরা জানান, বৃষ্টিতে প্রতিটি দোকানের কাপড় ভিজে গেছে। অন্য মার্কেটের চেয়ে এই মার্কেটের কাপড়ের মান ভালো হওয়ায় দাম বেশি। দামি কাপড়গুলো সাধারণত নিচের দিকে রাখা হয়। আর সেই কাপড়গুলোই বেশি ভিজেছে। অধিকাংশ দোকানে রোববারও কোনো বিক্রি হয়নি।

এছাড়া আশপাশের রাস্তা ও ফুটপাতে ভাসমান কাপড়ের সব দোকানই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলমান কোটা আন্দোলনে ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত।

গাউছিয়া মার্কেটের বিপরীত পাশে রাস্তার ভাসমান কাপড়ের ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন, আমরা গরিব মানুষ। তার আন্দোলন করবে ভালো কথা, কিন্তু গাড়ি-ঘোড়া বন্ধ করে কেন? তারা এক বেলা আন্দোলন করলে আমাদের সেদিন আর রোজগার হয় না।

রোববার বিকেলে নিউমার্কেটের পূর্বমুখী গেটের সামনের রাস্তার ফুটপাতে বসে শিশুদের কাপড় বিক্রি করেন তমিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রায় দুই সপ্তাহ বিক্রি নাই। সংসার চালাবো কেমনে? কাপড় কেনার মানুষ পাই না।

Imrul_Business-----Inner--02

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নুরানী মার্কেট দোকান মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ ওয়াসিম ফারুক ঢাকা মেইলকে বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের যখন নাভিশ্বাস তখন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য না কিনে কাপড়-প্রসাধনী কেন কিনবে? এর মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনে রাস্তাঘাট বন্ধ করে রাখা ও বৃষ্টির কারণে ক্রেতারা তেমন আর মার্কেটে আসছেন না। তাই আমাদের মার্কেট প্রায় ক্রেতা শূন্য। আমরা হতাশ।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বিক্রি নেই বললেই চলে। আমার প্রতিদিনই লোকসান দিয়ে আসছি। কোনোদিন এক পিস বিক্রি হয়৷ আবার কোনোদিন হয় না। এবার রোজা ও কোরবানির ঈদেও আমরা ব্যবসা করতে পারি নাই। তাই সারাদিন গালে হাত দিয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কোনো পথ নাই। তার সাথে সামান্য বৃষ্টিতেই আমাদের এই এলাকা পনিতে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। দোকানে বৃষ্টির ময়লা পনি ঢুকে আমাদের পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাতেও আমাদের প্রচুর লোকসান গুনতে হচ্ছে। সবমিলে আমরা শুধুই লোকসানের মধ্যে আছি। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের মতো সাধারণ ব্যবসায়ীদের পুঁজি শেষ করে বাড়ি ফেরা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।

এমআইকে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর