শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

প্রতি পিস লিচু ৪ টাকা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২০ মে ২০২২, ০৮:০১ পিএম

শেয়ার করুন:

প্রতি পিস লিচু ৪ টাকা
ছবি: ঢাকা মেইল

জ্যৈষ্ঠের অন্যতম মৌসুমি ফল লিচু। বাঁশের ঝুড়িতে সবুজ পাতার বিছানায় লাল-সবুজ রঙের থোকা থোকা লিচু নজর কাড়ছে ক্রেতাদের। অনেকের দেখেই যেন শান্তি! কারণ, লিচুর দাম। তাই লিচুর স্বাদ সবাই নিতে পারে না। নিম্নবিত্ততো বটেই, অনেকে মনে করেন মধ্যবিত্তেরও নাগালের বাইরে এর দাম।

বর্তমানে প্রতি পিস লিচুর দাম পড়ছে কমপক্ষে চার টাকা। অর্থাৎ, ১০০ লিচু চারশ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আরও বেশি মূল্যেও বিক্রি হতে দেখা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারগুলোয়। আর সর্বনিম্ন ৫০টির কমেও বিক্রি হয় না লিচু। এ কারণে অনেকেই দামাদামি করে চলে যাচ্ছেন খালি হাতে। তবে হঠাৎ কোথাও তিনশ’ থেকে ৩৫০ টাকা দরে একশ লিচুর দেখা মিললেও সে লিচু আকারে অনেক ছোট ও টক।


বিজ্ঞাপন


বিক্রেতাদের ভাষ্য- পাইকারিতে কেনা, কোনো উপায় নেই। আর ক্রেতাদের অভিযোগ- মৌসুমের কিছু ফল এখন খাওয়ার উপায় নেই। ইচ্ছে করেই দাম কমায় না ব্যবসায়ীরা।

শুক্রবার (২০ মে) রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের লিচু বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

গত কয়েক বছর আগেও একশ’ লিচু পাওয়া যেত ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। তবে গত তিন-চার বছর ধরে সেই লিচু তিন-চারশত টাকার নিচে পাওয়াই যায় না। কারওয়ান বাজারের লিচু বিক্রেতা সুলতান মিয়া বলেন, বেশ কিছুদিন হলো লিচু বাজারে এসেছে, সামনে আরও লিচু বাজারে আসবে, তখন হয়তো দাম কমবে।

Lichi


বিজ্ঞাপন


বাজার ঘুরে দেখা যায়- বোম্বাই, সোনারগাঁওয়ের কদমি লিচু, ঈশ্বরদী লিচুসহ বিভিন্ন প্রকারের লিচু বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দু’-একদিন ধরে বাজারে দিনাজপুরের লিচু আসছে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।

তবে কারওয়ান বাজারে এ দিন চায়না থ্রি লিচু দেখা যায়নি। আরও পরে আসবে বলে জানান একাধিক লিচু বিক্রেতা। শরিফ নামে একজন জানান, বোম্বে ভালো লিচু ৪০০ টাকা শ’। জিনিস ভালা, দামতো বেশি হইবোই। এ সময় কারওয়ান বাজারের ৭/৮টি দোকান ঘুরে কোনোখানেই চারশ’ টাকার নিচে মেলেনা একশ’ লিচুর দাম। তবে হাফিজ নামে এক বিক্রেতার দোকানে ৩০০ টাকা শ’ দরে বিক্রি হলেও তুলনামূলক ছোট সেই লিচু।

ইব্রাহিম হোসেন একজন ব্যাংকার। সকালে অন্যান্য বাজার করেন কারওয়ান বাজারে। পরে লিচু কিনতে এসে কয়েক দোকান ঘুরে বাধ্য হয়ে ৫০ পিস লিচু কেনেন ১৯০ টাকা দিয়ে। প্রতি পিসের দাম পরে তিন টাকার ওপরে।

আখতার হোসেন নামে আরেক ক্রেতা লিচুর দাম শুনে অনেকটা ক্ষোভ দেখিয়ে না কিনেই চলে যান। তবে আশরাফ হোসেন কয়েক দোকান ঘুরে অল্প লিচু কিনলেও আফসোস তার মনে। বলেন, মৌসুমি ফলের মধ্যে লিচু দ্রুতই শেষ হয়ে যায়। পর্যাপ্ত বাজারে থাকলেও দাম কমে না। এটি আমাদের মধ্যবিত্তদের কাছে এখন সৌখিনতা বলতে হয়।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, কদিন আগে তরমুজের যে দাম ছিল, এখন তরমুজ দাম কমে গেছে। আম আসতেছে, দামও সাধ্যের মধ্যে আছে, কিন্তু লিচুর পিস তিন টাকারও বেশি পরে ভাবতে পারেন?

তবে দাম বেশি নেওয়ার বিষয়ে বিক্রেতারা কোনো কথা বলতে চাননি। শুধু বলেন, এটিতো আমরা তৈরি করি না। বাজার থেকে কিনে আনি। একটু লাভ করি। আবার অনেকসময় পচা লিচুতে লোকসান হয়ে যায় আমাদের।

Lichi

মোহাম্মদপুরের টাউনহল বাজারেও লিচুর দাম সাড়ে তিনশ’ বা আরও বেশি হাঁকাতে দেখা গেছে। আর হাতিরপুল এলাকায় চারশ’ টাকার বেশি দামে লিচু বিক্রি করতে দেখা গেছে। লিচু বিক্রেতা আলামিন বলেন, লিচু অনেক সময় একশ’ আটি বাঁধলেও ঝড়ে যায়। ক্রেতারা গুণে নেন। অনেক লিচু পচে যায়। সবমিলে কিছু ঘাটতির হিসেবও মেলাতে হয়।

এই লিচু বিক্রেতা বলেন, লিচুর দাম নামতে শুরু করেছে, ক’দিন ধরেই ভালো বিক্রি হচ্ছে। সামনে আরও একটু দাম কমতে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসেবে দেশে প্রতি বছর গড়ে দুই লাখ টনের মতো লিচু উৎপাদন হয়। তবে এটি এ বছর কম হতে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ড. মেহেদি মাসুদ। আবহাওয়াসহ কিছু কারণে এবার লিচুর ফলন অন্তত ত্রিশ হাজার টন কম হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। দুটি জেলার কৃষি কর্মকর্তারাও আশঙ্কা করছেন কিছুটা উৎপাদন কম হতে পারে।

খামাড়বাড়ির এক কর্মকর্তা লিচুর মৌসুম নিয়ে বলেন, সাধারণত ধরা হয় এক মাস। মধ্য মে থেকে মধ্য জুন সময়ে বাহারি লিচুতে ভরে যায়। এখন বাজারে লিচু পাওয়া যাচ্ছে, আরেও কিছুদিন বেশ লিচু পাওয়া যাবে।

Lichi

এদিকে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যে জানা গেছে, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে ৩১ হাজার ২৬১ হেক্টর জমিতে দুই লাখ ১০ হাজার ৩২২ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদিত হয়। এবারও আবাদের লক্ষ্য বেড়েছে উৎপাদনের হিসেব মৌসুম শেষে পাওয়া যাবে।

দিনাজপুরের চাষিদের দাবি- এখানকার লিচুই স্বাদে সেরা। যদিও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, মোটামুটিভাবে দেশের প্রায় সব জেলাতেই লিচু উৎপাদন হয়। তবে অনুকূল আবহাওয়া ও মাটির উর্বরতার কারণে উত্তরের জেলাগুলোতে বিশেষ করে দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়সহ যশোর, কুষ্টিয়া ও সাতক্ষীরায় লিচু উৎপাদন হয়।

এছাড়া রংপুর বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে, দিনাজপুর ও রংপুর অঞ্চলের আট জেলায় প্রায় ৯ হাজার ১৯৭ হেক্টর জমিতে এ বছর লিচু উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে প্রায় ৪৭ হাজার টন।

বোম্বাই, মাদ্রাজি, বেদানা, কাঁঠালি ও চায়না-১, ২ ও ৩ জাতের লিচু এখানে আবাদ করা হয়। শাঁস বেশি এবং সুস্বাদু হওয়ায় বেদানা ও চায়না–৩ জাতের লিচুর দাম বেশি থাকে প্রতি বছরই। এ জাতের লিচু বাজারে প্রতি ১০০ পিস বিক্রি হয় ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায়। যা এখনও বাজারে আসেনি।

দিনাজপুর জেলা শহরের গোর-এ-শহীদ মাঠে বসে উত্তরাঞ্চলের লিচুর বড় পাইকারি বাজার। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়নি এখনও। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশপাশের বাজারগুলোতে লিচু বেশ ভালো বিক্রির খবর পাওয়া গেছে।

ডব্লিউএইচ/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর