সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মাদক কারবার নিয়ে দ্বন্দ্ব, ট্রাকচালককে শ্বাসরোধে হত্যা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০২:৫২ পিএম

শেয়ার করুন:

মাদক কারবার নিয়ে দ্বন্দ্ব, ট্রাকচালককে শ্বাসরোধে হত্যা

ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জে ট্রাংকের ভেতরে তোশক মোড়ানো দীপঙ্কর হাওলাদার ওরফে দিপু হাওলাদার ওরফে মো. সুমন (৩৪) নামে এক ট্রাকচালকের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যার কারণ উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে র‌্যাব। সেই সাথে এ ঘটনায় জড়িত আল আমিন (২৫) নামে প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০। 

নিহত দীপঙ্কর হাওলাদার আনুমানিক পাঁচ বছর পূর্বে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেন ও মো. সুমন নাম দিয়ে সুবর্ণা ওরফে পারভিনকে ইসলামী শরীয়ত মতে বিয়ে করেন। গত ১৮ জুন থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরে তার লাশ উদ্ধার করে র‌্যাব ও পুলিশ। 


বিজ্ঞাপন


সুমনকে হত্যার নেপথ্যের কারণ খুঁজে পেয়েছে র‌্যাব। মূলত মাদক কারবারের টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব বাধে সুমনের সাথে। এর জেরে তাকে ডেকে নিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়। হত্যার পর লাশ গুম করতেই ট্যাংকের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলে দিয়েছিল হত্যাকারীরা।

এ ঘটনায় আল আমিনকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। এর আগে বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

শুক্রবার দুপুরে এ বিষয়ে র‌্যাব-১০ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) ও সহকারী পুলিশ সুপার এম. জে. সোহেল জানান, গত ২৩ জুন সকালে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের জাজিরা বোট সংলগ্ন ব্রীজের নিচে একটি বড় ট্রাংক স্থানীয় লোকজন দেখতে পেলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে থানায় অবহিত করেন। পরে থানা পুলিশ সেখানে আসলে ট্রাংকটি উদ্ধার করে খুললে তোশক দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মৃতদেহ পায়। তখন ধারণা করা হয় ২২ জুন রাত ৮টা থেকে ১২টার মধ্যে যেকোনো সময় অজ্ঞাত সেই ব্যক্তিকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করে তাকে তোশক দিয়ে মুড়িয়ে ট্রাংক ভর্তি করে বর্ণিত স্থানে ফেলে দিয়ে গেছেন।

লাশটি উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় র‌্যাব। ইতোমধ্যে পুলিশ ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে লাশ শনাক্ত করতে সক্ষম হয় এবং নিশ্চিত হয় যে মৃতদেহটি পটুয়াখালী জেলার বাউফলের মৃত দেবেন্দ্র হাওলাদারের পুত্র দীপঙ্কর হাওলাদার ওরফে দিপু হাওলাদার ওরফে মো. সুমন (৩৪)-এর। এ ঘটনায় মা মিনতি হাওলাদার বাদী হয়ে আসামি অজ্ঞাত উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলা হলে সন্দেহভাজন আসামি ও হত্যাকাণ্ডের কারণ শনাক্তকরণে কাজ শুরু করা হয়। এরপর সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় কয়েকজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে সক্ষ্যম হয় র‌্যাব।


বিজ্ঞাপন


এঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে মোহাম্মদপুরের পালপাড় বটতলা এলাকায় একটি অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন মো. আল আমিনকে গ্রেফতার করা হয়।  

র‌্যাব জানায়, র‌্যাব-১০ ঘটনার অনুসন্ধান শুরু করে জানতে পারে যে, নিহত সুমন বিয়ের পর হতে সুমন ছেলে ও তার স্ত্রী আলাদাভাবে বসবাস শুরু করেন। পরিবারের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ হয়ে যায় তার। সুমনের মা তার স্ত্রীর মাধ্যমে জানতে পারেন যে, আরিফ ও বাবু নামে দুই ব্যক্তির সাথে সুমনের পরিচয় হয় এবং তাদের বাসায় যাতায়াত করতেন। গত ১৮ জুন সুমন তার দুই বন্ধু আরিফ ও বাবুর সাথে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। পরদিন ১৯ জুন সুমন তার স্ত্রীর নম্বরে ফোন করে ঢাকায় পৌঁছানোর সংবাদ দেন। পরে সুমনের স্ত্রী তার স্বামীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও যোগাযোগ করতে পারেনি। 

সুমনকে যে কারণে হত্যা করা হয় 

আল-আমিনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে র‌্যাব জানতে পারে যে, আরিফ, বাবু এবং সুমন সবাই পেশায় ট্রাক ড্রাইভার। এ পেশার আড়ালে তারা সবাই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। তারা প্রায় ৭-৮ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে অবৈধ পন্থায় চোরাচালানের মাধ্যমে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করেন। পরে সেই মাদক বহন করে পটুয়াখালী, ঢাকার কেরানীগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করতেন। মাদক বিক্রির সিন্ডিকেট এবং টাকার ভাগাভাগি নিয়ে সুমনের সাথে আল-আমিন, আরিফ ও বাবু বিরোধের সৃষ্টি হয়। এই বিরোধের জের ধরে আল-আমিন, আরিফ ও বাবু সুমনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী আল-আমিন, আরিফ ও বাবু সুমনকে পটুয়াখালী থেকে ঢাকায় নিয়ে আসে। অতঃপর ঢাকার কেরানীগঞ্জে গ্রেফতারকৃত আল-আমিনের ভাড়া বাসায় নিয়ে গিয়ে রাত আনুমানিক ৯ থেকে ১১টার মধ্যে আল-আমিন, আরিফ ও বাবু মিলে সুমনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। হত্যার পর সুমনের লাশটি গুম করার উদ্দেশে লাশ তোশক দিয়ে মুড়িয়ে একটি ট্রাংকে ভরে একটি ট্রাকে করে নিয়ে গিয়ে আনুমানিক ৯টার দিকে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের জাজিরা বোটঘাট ব্রীজ সংলগ্ন একটি রাস্তার পাশে ফেলে রেখে চলে যান এবং এ ঘটনার পর তারা আত্মগোপনে চলে যান। তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

এমআইকে/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর