শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

গরমে সৈকতে পর্যটক কম, এক হাজারেই মিলছে হোটেল

ওয়াজেদ হীরা
প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২২, ০৭:৪৭ পিএম

শেয়ার করুন:

গরমে সৈকতে পর্যটক কম, এক হাজারেই মিলছে হোটেল
ছবি: ঢাকা মেইল

জ্যৈষ্ঠের দাবদাহ চলছে অনেক জেলায়। এর প্রভাব পড়েছে কক্সবাজারের পর্যটনেও। তাপমাত্রা বাড়ায় সীমান্তবর্তী এই জেলায় বেড়েছে গরমের দাপট। জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা। একই কারণে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কমেছে পর্যটকের সংখ্যাও। বিশ্বের দীর্ঘতম এই সৈকত বলতে গেলে প্রায় ফাঁকা। যারা এসেছেন তারাও সমুদ্রে স্বস্তি খুঁজতে ব্যস্ত।

এদিকে, পর্যটক কম হওয়ায় অনেক হোটেলের রুম পাওয়া যাচ্ছে এক হাজার টাকাতেই। তবে একটু দামাদামি করলে আরও কমে মিলছে। এমনকি আটশত টাকাও মিলছে রুম।


বিজ্ঞাপন


বৃহস্পতিবার (১৯ মে) সকাল থেকে কক্সবাজারের লাবনী বিচ, সুগন্ধা বিচ ঘুরে দেখা গেছে পর্যটক খুবই কম। যারা এসেছেন, তারা সমুদ্রে নেমে ঝাঁপাঝাঁপি করছেন। কড়া রোদের কারণে উঠতেও চাচ্ছেন না।

স্থানীয় হোটেল ও পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে পর্যটক কমায় তাদের মুখে আফসোসের সুর শোনা গেছে। যেখানে চলতি মাসের শুরু থেকেই  ব্যস্ত ছিল পুরো কক্সবাজার। ঈদের ছুটিতে কয়েক লাখ মানুষের ঢল নেমেছিল। ১০-১১ মে পর্যন্ত মানুষে গম গম করেছিল এই পর্যটন নগরী।

Cox's Bazar

ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্যমতে, এবার ঈদে সাত দিনের ছুটিতে প্রতিদিন কক্সবাজারে দুই লাখের বেশি পর্যটকের সমাগম হয়েছে। তাদের তথ্যমতে, ১০ লাখের মানুষ এই ঈদের ছুটিতে ঘুরে গেছেন কক্সবাজার। অথচ সপ্তাহের ব্যবধানে সেই সংখ্যা অনেক কমে গেছে।


বিজ্ঞাপন


এদিকে, বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের তাপমাত্রা ছিল ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের প্রধান আবহাওয়াবিদ আবদুল হামিদ মিয়া বলেছেন, কক্সবাজারে প্রতিদিন তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি ওপরে। কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে বৃষ্টিপাত হলেও এই গরমটা থাকবে।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন- এই মাসের শেষে মৌসুমী বায়ু শুরু হতে পারে। এই মৌসুমী বায়ু শুরু হলে গরম কমে যাবে।

অন্যদিকে, গরমের প্রভাবে জেলার কয়েক শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসের বেকার সময় কাটছে।

Cox's Bazar

কক্সবাজার থেকে টুরিস্টদের বিভিন্ন সেবা দেওয়া একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক নাসির হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, এক সপ্তাহ আগে প্রতিদিন যে টুরিস্ট ছিল এখন পাঁচ ভাগের এক ভাগ। পুরো শহরে মাত্র ২০ হাজার টুরিস্ট হতে পারে। কাল শুক্রবার (২০ মে) খুব একটা বাড়বে না। যে গরম, খুব কষ্ট হচ্ছে সবার।

কক্স বিচ হোটেলের ম্যানেজার আবু সাইদ ঢাকা মেইলকে বলেন, রুম অর্ধেকের বেশি খালি। অবশ্য এক সপ্তাহ আগেই ঈদের ছুটিতে ভরপুর মানুষ ছিল। এখনও থাকতো গরমে অনেকেই ঘুরতে আসছেন না।

লং বিচ হোটেল, সপ্নালয় স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট, হোয়াইট বিচ হোটেল, মারমেইডসহ কমপক্ষে ১০টি হোটেল-মোটেল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। যাদের অনেকের মুখে আফসোসের সুর শোনা গেছে। হোটেলের ম্যানেজাররা জানান, তাদের অর্ধেকের বেশি রুমে টুরিস্ট নেই। এক হোটেলে ম্যানেজার বলেন, ৮০টা রুমের মধ্যে টুরিস্ট আছেন ১০ জন। কাল শুক্রবার আরও আটটা হবে।

এদিকে, অনেক হোটেলে অর্ধেকেরও কম মূল্যে দেওয়া হচ্ছে রুম ভাড়া। প্রধান সড়কের পাশে রুম ভাড়ার চেয়ে ভেতরে গলিতে ভাড়া আরও কম।

Cox's Bazar

হোয়াইট অর্কিডের দায়িত্বরত একজন নাম প্রকাশ না করে বলেন, ভাড়া সিজনে মানুষের সমাগমের ওপরও নির্ভর করে। এখন মানুষ কম, অনেকেই নামমাত্র মূল্যে দিয়ে কিছুটা খরচ ওঠাচ্ছে। যার যে রকম পোষায় ওইরকমই ভাড়া দেয়। ভালো মানের হোটেলও ডিসকাউন্ট দিচ্ছে, তবে তাদের একটা স্তর আছে।

এদিকে, টুরিস্ট কম থাকায় এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবকিছুতেই ভাটা দেখা গেছে। বিচপাড়ের দোকানগুলোতে নেই মানুষের পদচারণা। এ সময় বসে বসে মোবাইল চাপতে দেখা যায় অনেক দোকান কর্মীদের।

ছবি উঠানোর মানুষের ভিড় না থাকায় বিচপাড়ের ফটোগ্রাফারদের ব্যস্ততা কম, আয়ও কম। গল্প করে অলস সময় কাটাতে দেখা যায় তাদের। সেই সঙ্গে কোনো পর্যটক বিচে প্রবেশ করলে একসঙ্গে ১০ জন এগিয়ে জানতে চায় ছবি উঠাবে নাকি।

বিচ বাইক, ওয়াটার বাইকেও মানুষ কম। তবে বিচে প্রচুর ঘোড়া দেখা যায়। অনেকেই শখের বশে ঘোড়ায় উঠেন। তবে টুরিস্ট না থাকায় ঘোড়সওয়ার নিজেই চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

Cox's Bazar

সুজন নামের এক ঘোড়সওয়ার বলেন, দুপুর পর্যন্ত একজন উঠেছে ১৫০ টাকা পাইছি। অন্য সময় হলে দুই হাজার হতো। মানুষ কম, কি আর করার।

তবে ব্যতিক্রম ছিল কিটকট বা বিচ পাড়ে বসানো ছাতাচেয়ারের ক্ষেত্রে। প্রচণ্ড রোদ আর গরমের স্বস্তি হিসেবে যারা বসছেন আর উঠতেই চান না।

এদিকে, টুরিস্ট কম থাকলেও দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় টুরিস্ট পুলিশদের। সুগন্ধা বিচে দায়িত্ব পালন করা এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমরা-স্যারেরা সবাই সবসময় টুরিস্টদের সার্বিক খোঁজ রাখি। কয়েকদিন ধরে মানুষ কমছে, কিন্তু ডিউটিতো ডিউটিই।

Cox's Bazar

কুমিল্লা থেকে কক্সবাজারে আসা তরিকুল বলেন, এত গরম হবে বুঝতে পারিনি। তবে মানুষ কম ভালো লাগছে। ঈদের পরপর এ কারণেই আসিনি। বেশি মানুষ থাকলে ছবি উঠাতে ঝামেলা হয়, হোটেলের ভাড়া বেশি। সাতশত টাকায় রুম ভাড়া নিয়ে থাকছি। ম্যানেজার জানান- এক সপ্তাহ আগে তিন হাজারের নিচে কোনো রুম ছিল না।

আফতাব উদ্দিন সকালের ফ্লাইটে আসেন কক্সবাজার। গরমে কিছুটা অস্বস্তি থাকলেও তিনি বলেন, শুক্র-শনিবার ছুটি কাটাতে পরিবার নিয়ে এলাম। কম মানুষের আলাদা একটা পরিবেশ, বেশি মানুষের আরেকটা পরিবেশ।

ভেজা বালুর দিয়ে নিজের শরীর ঢাকতে দেখা যায় খলিল নামের একজনকে। বিচে আসা সঙ্গী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) তার শরীর ঢেকে দিচ্ছেন বালু দিয়ে। খলিল বলেন, অনেককেই এভাবে বালুর নিচে থাকতে দেখেছি, এবার নিজে করে দেখলাম। গরমের কারণে বেশ আরামই লেগেছে।

কক্সবাজারের পর্যটন সংশ্লিষ্ট কয়েক লাখ মানুষ। তারা সবসময় প্রত্যাশা করেন ভরপুর থাকুক এই শহর। করোনার পর্যটক আসা যখন বন্ধ ছিল, তখন থেকেই ভয় ঢুকেছে তাদের মনে। কেননা এখানে ঘুরতে আসা টুরিস্টদের জন্য নানাজন বিভিন্নভাবে আয় করতে পারছেন। কেউ মালা-দুল বিক্রি করে, কেউবা খাবার বিক্রি করে। টুরিস্ট কম থাকলে দৈনিক আয় করা মানুষের মুখভার হয় বেশি। তাইতো এই খাতের সবাই চায় লোকারণ্য থাকুক কক্সবাজার।

ডব্লিউএইচ/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর