সড়ক ও সড়ক পরিবহন খাতে অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্যের কারণে শিশুরা অস্বাভাবিক হারে দুর্ঘটনাকবলিত হচ্ছে। দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুহার উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ২০২০ থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় এক হাজার ৬৭৪ শিশু নিহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ মে) সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে শিশু নিহতের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ২৮ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী হিসেবে নিহত হয়েছে ৩৩১ শিশু। এ সময় রাস্তা পারাপার ও রাস্তা ধরে হাঁটার সময় যানবাহনের চাপায় বা ধাক্কায় নিহত হয়েছে এক হাজার ২৭ শিশু। ট্রাক, পিকআপ, ট্রাক্টর ও ড্রাম ট্রাক ইত্যাদি পণ্যবাহী যানবাহনের চালক ও সহকারী হিসেবে নিহত হয়েছে ৪৮ শিশু। অন্যদিকে, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী হিসেবে নিহত হয়েছে ২৬৮ শিশু।
যাত্রী হিসেবে শিশু নিহতের যানবাহনভিত্তিক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বাসযাত্রী হিসেবে নিহত হয়েছে ৭২ শিশু, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্স যাত্রী হিসেবে ২৫ শিশু, থ্রি-হুইলার (সিএনজি, অটোরিকশা, ইজিবাইক ইত্যাদি) যাত্রী হিসেবে ১৮৩ শিশু, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের (নসিমন, ভটভটি, মাহিন্দ্র, টমটম ইত্যাদি) যাত্রী হিসেবে ৫১ শিশু নিহত হয়েছে।
এছাড়াও পণ্যবাহী যানবাহনের (ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ, ড্রাম ট্রাক, ট্রাক্টর ও ট্রলি ইত্যাদি) চাপায় বা ধাক্কায় নিহত ২৫৮ শিশু, বাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্সের চাপায় বা ধাক্কায় নিহত ১৪৩ শিশু, থ্রি-হুইলারের (সিএনজি, অটৈারিকশা ও ইজিবাইক ইত্যাদি) চাপায় বা ধাক্কায় নিহত ৩২১ শিশু, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের (নসিমন, ভটভটি, মাহিন্দ্র ও টমটম ইত্যাদি) চাপায় বা ধাক্কায় নিহত ২০৮ শিশু, বেপরোয়া মোটরসাইকেলের ধাক্কায় নিহত হয়েছে ৯৭ শিশু।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, শিশুরা গ্রামীণ সড়কে বেশি হতাহত হচ্ছে। কারণ গ্রামীণ সড়কগুলো বসতবাড়ি ঘেঁষা এবং এই সড়কের যানবাহনসমূহ কোনো প্রকার নিয়ম-নীতি মেনে চলে না। সড়ক নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিও থাকে না। আবার শিশুরাও সড়ক ব্যবহারের কোনো নিয়ম-নীতি জানে না।
বিজ্ঞাপন
দুর্ঘটনায় শিশু নিহত হওয়ায় সড়কের ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, মহাসড়কে নিহত ২৮৭ শিশু, আঞ্চলিক সড়কে নিহত হয়েছে ৩২৮, গ্রামীণ সড়কে নিহত হয়েছে ৮৮৯ শিশু, শহরের সড়কে নিহত হয়েছে ১৪৭ শিশু এবং অন্যান্য স্থানে নিহত হয়েছে ২৩ শিশু।
সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুহার কমাতে সড়ক ও সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা শিশুদের জন্য নিরাপদ করাসহ সুপারিশ করা হয়। তার মধ্যে, নিরাপদে সড়ক ব্যবহার বিষয়ে পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের সচেতন করা, অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক কর্তৃক যানবাহন চালানো বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, জেলা পর্যায়ের হাসপাতালসমূহে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার সুযোগ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় বিশেষ সরকারি তহবিল গঠন করা, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বাস্তবায়ন করা।
এএম/এমআর

