বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেবে কবে

তানভীর আহমেদ
প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২২, ১২:৪০ পিএম

শেয়ার করুন:

সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেবে কবে

সাব-রেজিস্ট্রার অফিস। দায়িত্ব ভূমি নিবন্ধনের। তবে জমি নিবন্ধনের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী প্রায় সব কার্যক্রমই পরিচালিত হয় সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় থেকে। মাঝখানে দলিল সম্পাদন ছাড়া আইন ও বিচার বিভাগের আওতাধীন সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের অন্য কোনো কাজ নেই। এতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের। হয়রানির শিকারও হচ্ছেন অনেকে। এ প্রক্রিয়াকে সহজ করতে সাব রেজিস্ট্রার অফিসকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনতে সংসদীয় কমিটি সুপারিশ করলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইন মন্ত্রণালয়ের গাফিলতির কারণে বিষয়টি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে হাল না ছেড়ে আলোর মুখ দেখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ভূমি মন্ত্রণালয়।

২০১৯ সালে ২২ আগস্ট সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনার সুপারিশ করে এই মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। কমিটি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। এ অবস্থায় সংসদীয় কমিটির সদস্যরা বিষয়টি দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দেন।

এর আগে, ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভীকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন তৎকালীন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ। ওই চিঠিতে বলা হয়, এক সময় আইন ও ভূমি মন্ত্রণালয় একসঙ্গে ছিল। পরবর্তীকালে পৃথক হওয়ার সময় ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিস আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থেকে যায়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, সহকারী কমিশনার ভূমি, সেটেলমেন্ট অফিস ও সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে জমির মালিকানা পরিবর্তনের কাজ হচ্ছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা কাজে গতি আনতে এই তিন শাখাকে একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মকবুল হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনার বিষয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি দুই বছর আগে সুপারিশ করলেও তা এখনও আলোর মুখ দেখেনি।

তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের গাফিলতির কারণে বিষয়টি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। মূলত তারা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসকে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাখতে চায়। তবে আমরাও হাল ছাড়ি নাই আশা করি এটি আলোর মুখ দেখবে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব খলিলুর রহমান বলেন, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তার আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় মাঠপর্যায়ে ভূমি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি)-র কার্যালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সাব-রেজিস্ট্রি অফিস একই ছাতার নিচে আনার লক্ষ্যে প্রায় দু দশক আগে ভূমি মন্ত্রণালয় অস্ট্রেলিয়ান একটি সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। সে সময়ে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতি কর্তৃক তীব্র বিরোধিতা এবং নানামুখী তদবিরের ফলে সে উদ্যোগ থেমে গিয়েছিল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুটি দফতরই স্ব স্ব ক্ষেত্রে যে আইন এবং বিধি দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে সেভাবেই থাকবে, শুধু ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পরিবর্তন হওয়ার ক্ষেত্রে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তই হয়তো যথেষ্ট। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দুটি বিভাগ রয়েছে। তার একটি আইন ও বিচার বিভাগ, অপরটি লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ। তার মধ্যে আইন ও বিচার বিভাগের আওতাধীন নিবন্ধন অধিদফতরের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি অফিসগুলো পরিচালিত হয়।

এ অধিদফতরের আওতাধীন মাঠ পর্যায়ে জেলা রেজিস্ট্রার, সাব রেজিস্ট্রার, নিকাহ রেজিস্ট্রার এবং বিবাহ রেজিস্ট্রারগণ কাজ করে থাকেন। এ অবস্থায় পৃথকীকরণের ক্ষেত্রে যে সুবিধাটি বিদ্যমান, জেলা রেজিস্ট্রার এবং সাব-রেজিস্ট্রারদের ভূমি মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হলেও যেহেতু নিকাহ রেজিস্ট্রার ও বিবাহ রেজিস্ট্রারদের কার্যক্রম থাকছে সেহেতু নিবন্ধন অধিদফতর পুরোপুরি বিলুপ্ত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে না।

 
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে এ বিভাগ। তবে আইন বিভাগের অধীনে এ ধরনের বিভাগ নেই। কোনো কোনো দেশে এটি রাজস্ব মন্ত্রণালয়ের অধীন, আবার কোনো কোনো দেশে এটি গৃহায়ন মন্ত্রণালয়, রুরাল ও আরবান বিভাগের অধীনে রয়েছে। যেখানেই এটি থাকুক না কেন, ভূমি ক্রয়-বিক্রয় থেকে শুরু করে রেজিস্ট্রেশন পুরো প্রক্রিয়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটি মন্ত্রণালয় দেখভাল করে। বাংলাদেশের মতো ১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন আইনে ভারতে জমির রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া পরিচালিত হলেও সেটিকে তারা আধুনিকায়ন করেছে। আমাদের এখানে ভূমি ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজেশন করার প্রক্রিয়া শুরু হলেও সম্পন্ন হয়নি সেটি।

টিএ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর