বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

এক ডিআইজি দম্পতির গল্প

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২২, ০৮:৩০ এএম

শেয়ার করুন:

এক ডিআইজি দম্পতির গল্প

দুজনই উচ্চ শিক্ষা নিয়েছেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অবশ্য পড়াশোনা করেছেন ভিন্ন বিষয়ে। পড়াশোনার ফাঁকে সহপাঠিদের সঙ্গে চাকরির প্রস্তুতি নিয়ে অংশ নেন বিসিএস পরীক্ষায়। সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে দুজনের চাকরি হয় একই ক্যাডারে। ১৯৯৯ সালে দুজনই সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে যোগ দেন।

বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ শেষে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় দুজনের পেশাগত দায়িত্ব পালন শুরু হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই সার্ভিসে কাজের সুবাধে চেনাজানাও হয়ে যায়। এক পর্যায়ে পরিবারের সিদ্ধান্তে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন দুই ব্যাচমেট। শুরু হয় এক ছাদের নিচে বসবাস। কর্ম জীবনে ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেতে পেতে এবার একসঙ্গে উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদে পদোন্নতি পেলেন এই পুলিশ দম্পতি।


বিজ্ঞাপন


পুলিশের ইতিহাসে এমন নজির গড়া দুই কর্মকর্তা হলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) মো. মনির হোসেন ও ডিএমপির পরিবহন বিভাগে কর্মরত যুগ্ম পুলিশ কমিশনার শামীমা বেগম।

গত ১১ মে ৩২ জন পুলিশ কর্মকর্তা ডিআইজি পদে পদোন্নতি পান। তাদের মধ্যে বেশি আলোচনায় মনির-শামীমা দম্পতি। সহকর্মী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হওয়া এই দম্পতির মাঝেও বইছে খুশির হাওয়া।

মঙ্গলবার (১৭ মে) দুপুরে টেলিফোনে অন্যপ্রান্ত থেকে কথা শুরু করতেই আনন্দের হাসির শব্দ শোনা গেল। ঢাকা মেইলকে শামীমা বেগম বলেন, ‘এটা সত্যিই আমাদের জন্যে গর্বের ও সৌভাগ্যের। প্রথমেই সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা। ধন্যবাদ জানাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। কারণ দীর্ঘদিন পুলিশে এএসপি হিসেবে নারীদের যোগদানের সুযোগ বন্ধ ছিল। তিনি এটা আবার শুরু করায় আজকে এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। পুলিশ বিভাগে আরও অনেক নারী গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাচ্ছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ যারা আমাদের কাজের মূল্যায়ন করে সম্মানিত করেছেন তাদেরও ধন্যবাদ জানাই।’

Police


বিজ্ঞাপন


যেভাবে শুরু হয় তাদের পথচলা 
মনির হোসেনের জন্ম উত্তরের জেলা সিরাজগঞ্জে। আর শামীমা বেগমের জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র ছিলেন মনির হোসেন। আর শামীমা পড়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে।
১৮তম বিসিএসে দুজন পুলিশ ক্যাডারে সুযোগ পাওয়ার পর একসঙ্গেই রাজশাহীর সারদাতে তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ নেওয়া। পরে কাজে নেমে পড়া। তবে মাঝে দুজনের বেশ জানাশোনাও হয়ে যায়।

পরবর্তীতে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ের সিদ্ধান্ত হয়। এর পেছনে অবশ্য ব্যাচমেট ও বন্ধুবান্ধবের অনেক ভূমিকা আছে বলে জানালেন শামীমা বেগম।

দাম্পত্য জীবনে এক কন্যা সন্তান রয়েছে তাদের। ধানমন্ডির একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের স্ট্যান্ডার্ড থ্রিতে পড়ছে সে। দিনভর ব্যস্ততা শেষে এই মেয়েই যেন তাদের শান্তির ঠিকানা!

পেশাগত জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন শামীমা বেগম। দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন ডিএমপির ওমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি), সিআইডি ও সদর দফতরে পুলিশ সুপার হিসেবে।

এ ছাড়া তিনি অ্যাডিশনাল ডিআইজি হিসেবে পুলিশ সদরদ দফতর ও টাঙ্গাইলে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (পরিবহন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

২০০৬-৭ সালে আইভরিকোস্টে এবং ২০১০-১১ সালে সুদানে জাতিসংঘ মিশনে শান্তিরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শামীমা বেগম।

পেশাগত দক্ষতার জন্য তিনি প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম) পেয়েছেন। পাশাপাশি শামীমা বেগম বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের (বিপিডব্লিউএন) সহ-সভাপতি ও আইএডব্লিওপির রিজিয়ন-২২ এর কো-অর্ডিনেটর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

অন্যদিকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে সুনাম কুড়িয়েছেন মনির হোসেনও। বাহিনীর ভেতরে এই দম্পতির আলাদা ইমেজও রয়েছে। দুজনের জনপ্রিয় কর্মকর্তা হিসেবে খ্যাতি রয়েছে।

চাকরিজীবনে মনির হোসেন ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি), গোপালগঞ্জ ও নড়াইলের পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়া পুলিশ সদর দফতরের এআইজি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। পেশাগত দক্ষতার জন্য পেয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)। কঙ্গো ও দারফুরে শান্তিরক্ষা মিশনেও কাজ করেছেন মনির হোসেন।

Police

দুজনই গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন সবসময়। চাকরি-সংসার কিভাবে সামাল দিয়েছেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে শামীমা বেগম বলেন, পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর পাশাপাশি আমাদের দুজনের বোঝাপাড়া ছিল চমৎকার। পরিবারের অন্য সদস্যরাও সহযোগিতা করেছেন। ফলে এখন পর্যন্ত ভালোভাবেই সবকিছু সামলে নিতে পেরেছি।

যা বললেন ডিআইজি দম্পতি
একসঙ্গে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর থেকে পেশার সিনিয়র-জুনিয়র সহকর্মী যেভাবে অভিনন্দন জানিয়েছেন সেজন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এই দম্পতি।

গণমাধ্যমেও ইতিবাচকভাবে তাদের সুখবরটি প্রকাশ করায় ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা।

তবে এই ডিআইজি দম্পতির ভাবনা- সঠিকভাবে যেন অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারেন। কারণ পদোন্নতির পাশাপাশি দায়িত্বও যে বেড়ে গেছে।

ডিআইজি শামীমা বেগম বলেন, আমাদের নিশ্চয়ই দায়িত্ব বেড়েছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য আমার জায়গা থেকে বেশি কাজ করার চেষ্টা থাকবে।

এমন অর্জনে নিজের খুশির কথা জানিয়ে ডিআইজি মনির হোসেন বলেন, সবার দোয়া ও শুভ কামনায় আমার এই অর্জন। আগামীতেও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যেতে চাই। মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।

বিইউ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর