শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

সেতু দিয়ে পদ্মা পাড়ি দিতে কত টাকা বেশি গুনতে হবে?

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৭ মে ২০২২, ০৫:৩৮ পিএম

শেয়ার করুন:

সেতু দিয়ে পদ্মা পাড়ি দিতে কত টাকা বেশি গুনতে হবে?
ফাইল ছবি

স্বপ্নের পদ্মা সেতু আগামী মাসেই যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরইমধ্যে কাজ শেষের দিকে। অন্যদিকে চূড়ান্ত করা হয়েছে যানবাহন পারাপারের টোল। যদিও টোলের পরিমাণ নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। এতদিন ফেরিতে চলাচলে যানবাহনের যে খরচ হতো সেতু দিয়ে পদ্মা পার হতে এর প্রায় দেড় গুন খরচ হবে।

মঙ্গলবার (১৬ মে) সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পরিবহনের জন্য আলাদা আলাদা টোলের হার নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।


বিজ্ঞাপন


গত ২৮ এপ্রিল পদ্মা সেতুর জন্য টোলের হার প্রস্তাব করে অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠায় সেতু মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অনুমোদনের পর আজ তা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়।

প্রজ্ঞাপন অনুসারে, সেতু বিভাগ থেকে যে টোলের হার প্রস্তাব করা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রীর দফতর তা হুবহু অনুমোদন দিয়েছে।

সরকারের নির্ধারণ করা টোলের হার অনুসারে, বর্তমানে ফেরিতে পদ্মা নদী পার হতে যে টাকা লাগে, সেতু পার হতে এর চেয়ে গড়ে দেড় গুণ বেশি টাকা খরচ করতে হবে। আর দ্বিতীয় দীর্ঘতম বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলের সঙ্গে তুলনা করলে তা হবে প্রায় দ্বিগুণ।

টোল কমানোর দাবি নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন তাদের দাবি, যেহেতু নিজেদের টাকায় সেতু নির্মাণ হয়েছে সেক্ষেত্রে কিছুটা কম টোল ধার্য করা হলে স্বস্তি পাওয়া যেত।


বিজ্ঞাপন


পদ্মা সেতুর টোল আদায়কারী ও সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগ করেছে সেতু বিভাগ। এ কাজ পেয়েছে কোরিয়া এক্সপ্রেস করপোরেশন (কেইসি) ও চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি)।

এর মধ্যে এমবিইসি বর্তমানে মূল সেতুর নির্মাণকাজ এবং কেইসি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। আগামী পাঁচ বছরের জন্য এই দুটি প্রতিষ্ঠান টোল আদায়, সেতু ও সেতুর দুই প্রান্তে যানবাহন চলাচল ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পদ্ধতি চালু এবং সেতু ও নদীশাসনের কাজ রক্ষণাবেক্ষণ করবে। এর জন্য পাঁচ বছরে তাদের দিতে হবে ৬৯৩ কোটি টাকা।

এদিকে গত ৭ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল সেতুর টোল আদায় নিয়ে বলেছেন, পদ্মা সেতু থেকে পূর্ণমাত্রায় টোল আদায় করা হবে। অন্যান্য প্রকল্প থেকেও টোল আদায় করা হয়েছে। এখান থেকেও টোল আদায় করা হবে। শুধু টোল আদায় হবে না, মুনাফাও হবে। এ প্রকল্পের জন্য যে পরিমাণ খরচ হয়েছে, তার চেয়ে বেশি অর্জন করা হবে। সারা বিশ্ব তা–ই করে।

ফেরি আর সেতুর টোলের পার্থক্য

সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পদ্মা সেতু পার হতে মোটরসাইকেলের টোল ১০০ টাকা। বর্তমানে ফেরিতে দিতে হয় ৭০ টাকা। কার ও জিপের জন্য গুনতে হবে ৭৫০ টাকা। বর্তমানে ফেরিতে দিতে হয় ৫০০ টাকা।

99

পিকআপের টোল দিতে হবে এক হাজার ২০০ টাকা। ফেরিতে দিতে হয় ৮০০ টাকা। মাইক্রোবাসের টোল হবে এক হাজার ৩০০ টাকা। ফেরিতে গুনতে হচ্ছে ৮৫০ টাকা।

ছোট বাস (৩১ আসন বা এর কম) এক হাজার ৪০০ টাকা দিতে হবে সেতুর টোল। ফেরিতে দিতে হয় ৯৫০ টাকা।

মাঝারি বাস (৩২ আসন বা এর বেশি) দুই হাজার টাকা দিতে হবে সেতুর টোল। আর ফেরিতে দিতে হয় এক হাজার ৩৫০ টাকা। আর বড় বাসের (৩ এক্সেল) টোল হবে দুই হাজার ৪০০ টাকা। ফেরিতে দিতে হয় এক হাজার ৫৮০ টাকা।

ছোট ট্রাক (৫ টন পর্যন্ত) এক হাজার ৬০০ টাকা। ফেরিতে এই ট্রাকের টোল এক হাজার ৮০ টাকা। মাঝারি ট্রাক (৫ টনের অধিক থেকে ৮ টন পর্যন্ত) দুই হাজার ১০০ টাকা। আর ফেরিতে গুনতে হয় ১৪০০ টাকা। ট্রাক (৮ টনের অধিক থেকে ১১ টন পর্যন্ত) দুই হাজার ৮০০ টাকা। এই ট্রাককে ফেরিতে গুনতে হয় এক হাজার ৮৫০ টাকা। ট্রাক (৩ এক্সেল পর্যন্ত) পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা। বর্তমানে ফেরিতে দিতে হয় তিন হাজার ৯৪০ টাকা। ট্রেইলার (৪ এক্সেল পর্যন্ত) সেতুতে দিতে হবে ছয় হাজার টাকা। ট্রেইলার (৪ এক্সেলেরও উপরে) ছয় হাজার টাকার সঙ্গে আরও টোল যোগ হবে। তবে পরিমাণ প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়নি।

এ আদেশ পদ্মা বহুমুখী সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার দিন থেকে কার্যকর হবে।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর একে একে ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর। একইসঙ্গে চলতে থাকে রোডওয়ে, রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোসহ অন্যান্য কাজ।

বর্তমানে সেতুর কাজ অনেকটা শেষ পর্যায়ে। প্রমত্তা পদ্মার বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো স্বপ্নের সেতুটি আগামী জুনেই উদ্বোধন করা হবে বলে ওবায়দুল কাদের বেশ কয়েকবার জানালেও চূড়ান্ত তারিখের কথা বলেননি।

আগামী ২৫জুন সেতুর উদ্বোধন করা হবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। তবে এটি সঠিক নয় বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী জুন মাসেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হবে। হঠাৎ কেউ কেউ পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের তারিখ বলে বেড়াচ্ছেন। এতো অধৈর্য হবেন না। চূড়ান্ত তারিখ দেবেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।

বিইউ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর