বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৪, ঢাকা

এমপি আনার হত্যায় জড়িত কতজন, কে কোথায়?

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২৪, ০২:৫৬ পিএম

শেয়ার করুন:

এমপি আনার হত্যায় জড়িত কতজন, কে কোথায়?
ফাইল ছবি

চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে প্রথমে নিখোঁজ হয়েছিলেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। পরে পশ্চিমবঙ্গ ও ঢাকার পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে— নিউটাউন এলাকার একটি ফ্ল্যাটে হত্যা করা হয়েছে এমপি আনারকে। এরপর গুম করতে লাশটির চামড়া ছাড়িয়ে ৮০ টুকরো করা হয়। হাড়গুলো আলাদা করে ফেলে দেওয়া হয়েছে খাল ও বিভিন্ন জায়গায়। যদিও দাবির পক্ষে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি উভয় দেশের পুলিশ।

পশ্চিমবঙ্গ ও ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের সমন্বিত তথ্যের ভিত্তিতে উভয় দেশে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজনের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এরমধ্যে হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশি আমেরিকান আখতারুজ্জামান শাহিন। হত্যায় সরাসরি অংশগ্রহণ করেন ৬ জন। তাদের মধ্যে আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী। এছাড়া শিমুলের ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া, জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদ, সিয়াম, ফয়সাল গাজী ও মুস্তাফিজুর রহমান হত্যায় সরাসরি অংশ নেন। এ সময় ওই ফ্ল্যাটে উপস্থিত ছিলেন শিলাস্তি রহমান।


বিজ্ঞাপন


তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর দাবি— হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে তিনজনকে বাংলাদেশ থেকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি)। বাংলাদেশে গ্রেফতার আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও তানভীর ভূঁইয়াকে আটদিন করে রিমান্ড দিয়েছেন ঢাকার আদালত। গ্রেফতার অপর আসামি হলেন জিহাদ হাওলাদার। তাকে ভারতের কলকাতা থেকে গ্রেফতার করে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি। তাকে ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত আদালত।

তথ্য বলছে, হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড শাহিন, সিয়াম, ফয়সাল আলী সাজী ও মো. মুস্তাফিজুর রহমান ফকির এখন পর্যন্ত পলাতক রয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে— তাদের মধ্যে শাহিন ঘটনার পরদিনই নেপালে চলে যান। সেখান থেকে দুবাই হয়ে আমেরিকায় পাড়ি জমান। তবে তার সঠিক অবস্থান এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

অপর দিকে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি বলছে— হত্যাকাণ্ডের সময় এমপির কাছে থাকা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা ও মোবাইল নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন হত্যায় সরাসরি জড়িত সিয়াম। পশ্চিমবঙ্গে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাটি ধারণা করছে তিনি বর্তমানে নেপালে অবস্থান করতে পারেন। এজন্য ঘটনার তদন্তে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির একটি টিমকে নেপালে পাঠানো হচ্ছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বাহিনীর সূত্র বলছে, আনার হত্যায় সরাসরি জড়িত অপর দুই আসামি ফয়সাল ও মুস্তাফিজুর বাংলাদেশে আত্মগোপনে রয়েছেন। তারা দুজনই খুলনার ফুলতলার বাসিন্দা এবং এলাকায় শিমুল ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। 

এর আগে ভারতের কলকাতা থেকে ভিন্ন ভিন্ন সময় আটক করা হয়েছিল জোবায়ের ও রাজা নামে দুজনকে। তারা দুজনই ওই হত্যাকাণ্ডে বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িত। এরমধ্যে হত্যার পর মরদেহ লোপাটে ব্যবহৃত সাদা কারটির চালক ছিলেন জোবায়ের। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এছাড়া এমপিকে সঞ্জীভা গার্ডেন নামের ফ্ল্যাটটিতে নেওয়া লাল গাড়িটির চালক ছিলেন রাজা। তাকেও আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। 


বিজ্ঞাপন


এদিকে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে— মাস্টারমাইন্ড শাহিন ও শিমুলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে এমন বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। যেখানে রয়েছেন স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের ব্যবসায়ী, দুজন সাবেক সংসদ সদস্য ও বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের একাধিক রাজনৈতিক নেতার নাম। তাদের মধ্যে অন্তত আটজনকে এরই মধ্যে গোয়েন্দা নজরদারিতে আনা হয়েছে। 

তারই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (২৮ মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে যশোরের রায়পাড়া বাবলাতলা এলাকার একটি মৎস্য হ্যাচারি থেকে গ্রেফতার করা হয় শিমুল ভূঁইয়ার ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ সাইফুল আলম মেম্বারকে। এরপর তাকে ১০ দিনের জন্য রিমান্ডে চেয়েছে যশোর ডিবি। জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে সাইফুল মেম্বার ভারতে ছিলেন। গত ২০ মে তিনি অবৈধ পথে দেশে ফিরে আসেন। তিনি ভারতীয় মোবাইল নম্বর দিয়ে সেখানে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততা আছে কি না সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

তদন্ত সূত্রের বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শাহীনের গুলশান, বসুন্ধরা ও বারিধারার ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বেশ কয়েকজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা শাহীনের ফ্ল্যাটে যাতায়াত করতেন। এছাড়া তার কোটচাঁদপুরের এলেঙ্গি গ্রামের আলীশান বাগানবাড়িতে যাদের যাতায়াত ছিল তাদেরও চিহ্নিত করা হচ্ছে। শাহীন ও শিমুলের মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড (সিডিআর) বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের আগে-পরে তারা কাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তা খতিয়ে দেখে সম্ভাব্য সন্দেহভাজনদের একটি তালিকা করা হয়েছে। এই তালিকায় দুইজন সাবেক সংসদ সদস্য, কয়েকজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারি, চরমপন্থী নেতা, প্রশাসনের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাও রয়েছেন। একইসঙ্গে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আসা-যাওয়ার সময় তাদের সফরসঙ্গী কারা ছিলেন সেটারও পর্যালোচনা চলছে।

উল্লেখ্য, গত ৮ মে ঢাকা থেকে কলকাতায় যান ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। এরপর থেকে বেশ কয়েকদিন নিখোঁজ থাকার পর ১৩ মে নিউটাউনের একটি আবাসনে খুন হন তিনি। হত্যার পর লাশ গুম করতে দেহের চামড়া ছাড়িয়ে হাড়—মাংস আলাদা করে ফেলা হয়। চার টুকরো করা হয় মাথার খুলি। এরপর দেহাংশ ট্রলি ব্যাগে ভরে কলকাতা লাগোয়া বিভিন্ন জায়গায় জলাশয়ে ফেলে দেওয়া হয়। 

এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর