মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘আলেমদের সম্মানহানি করতেই গণকমিশনের ভিত্তিহীন শ্বেতপত্র’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২২, ০৪:৪৪ পিএম

শেয়ার করুন:

‘আলেমদের সম্মানহানি করতেই গণকমিশনের ভিত্তিহীন শ্বেতপত্র’

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি (ঘাদানিক) এবং জাতীয় সংসদের আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক ককাসের উদ্যোগে গঠিত বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে ‘গণ কমিশন’ প্রকাশিত শ্বেতপত্রটি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ। এই শ্বেতপত্র প্রকাশের মাধ্যমে দেশের আলেমদের সম্মানহানি করা হয়েছে দাবি করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবিও জানান তারা।

সোমবার (১৬ মে) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে 'গণকমিশন' কর্তৃক দেশের সম্মানিত ১১৬ জন আলেম ও ১০০০ মাদরাসার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ এবং ইসলাম ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের প্রতিবাদে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সভাপতি আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজী।


বিজ্ঞাপন


সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ‘ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি (ঘাদানিক) এবং জাতীয় সংসদের আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক ককাসের উদ্যোগে গঠিত বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন নামে একটি কথিত কমিশন একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন’ শীর্ষক কথিত শ্বেতপত্রটি গত ১২ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোড়ক উন্মোচন করেছেন। এর দুই মাস পরে গত ১২ মে দুপুর বারোটায় এই শ্বেতপত্রটি দুদক চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। শ্বেতপত্র প্রকাশের সাথে জড়িতদের ভাষ্যমতে এখানে ১১৬ জন আলেম ও ১০০০ মাদরাসা সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ১১৬ জন আলেমের নাম উল্লেখ করে তাদেরকে ধর্মব্যবসায়ী বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং তাদের ভাষ্যমতে ধর্মব্যবসায়ীদের অপরাধের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।’ 

‘অথচ শ্বেতপত্র জনসাধারণে প্রকাশ করা হয়নি। ফলে এই বিষয়ে আমাদের নির্ভর করতে হয়েছে তাদের মিডিয়ায় ব্রিফিং থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ওপরে। যদি তাদের উদ্দেশ্য সৎ হতো এবং তাদের সৎসাহস থাকত তাহলে উপস্থাপিত শ্বেতপত্র জনসম্মুখে উন্মুক্ত করে দিতে পারতো। অন্তত যাদের ব্যাপারে তারা অভিযোগ উত্থাপন করেছে, তাদেরকে প্রতিবেদন পাঠাতে পারতো। কথিত শ্বেতপত্র নিয়ে তাদের একধরণের রাখঢাক-লুকোচুরি ও মিডিয়াবাজি প্রমাণ করে যে, তারা সারবত্তাহীন অভিযোগপত্র নিয়ে নাগরিকদের মাঝে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে।’

বক্তারা বলেন, ‘কথিত শ্বেতপত্রে প্রধানত লক্ষ বানানো হয়েছে জনসম্পৃক্ত উলামাদেরকে। যারা দেশব্যাপী ওয়াজ-মাহফিলের মাধ্যমে মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করেন। যারা এই ওয়াজের বিরুদ্ধে বানোয়াট শ্বেতপত্র নাটক করছে, তারা আদতে মুসলিম বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধ শক্তি। এরা বাঙালি মুসলমানের স্বতঃস্ফূর্ত সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বাইরে থেকে আমদানিকৃত সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার ঘৃণ্য চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে বলে আমরা মনে করি ‘

বক্তারা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের কওমি মাদরাসা নিয়ে এক শ্রেণির এলার্জি নতুন কিছু নয়। কিন্তু মাদরাসাসমূহের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ অতীতে কখনও প্রমাণ করতে পারেনি। আলোচিত শ্বেতপত্রে তারা নাকি ১০০০ মাদরাসার উপরে তদন্ত করেছে। আমরা চাই এই তদন্ত প্রতিবেদন জনসাধারণে উপস্থাপন করা হোক। তাহলে দেখা যাবে, মাদরাসাগুলো কত অল্প খরচে সততার সাথে হাজারো শিক্ষার্থীর দায়িত্বভার বহন করে চলছে। দেখা যাবে কতটা স্বচ্ছতার সাথে মাদরাসাগুলো সোশ্যাল সেফটিনেটের কাজ করে যাচ্ছে। দেখা যাবে কতটা অল্প বাজেটে কত বেশি মানুষকে কার্যকরভাবে সেবা দেওয়া যায় তার একটি অনন্য দৃষ্টান্ত।’


বিজ্ঞাপন


এই শ্বেতপত্র প্রকাশ সংবিধানবিরোধী দাবি করে বক্তারা বলেন, ‘এই শ্বেতপত্র প্রকাশ সংবিধানবিরোধী। নাগরিকের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত মানবিক মর্যাদা নীতির প্রতি অশ্রদ্ধা। এই কথিত কমিশনের তদন্ত ও শ্বেতপত্রের নৈতিক ও আইনত কোনো ভিত্তি নেই। বরং এটা সংবিধান, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা মানবিক মর্যাদার বিরুদ্ধে একটি পরিকল্পিত অপরাধ। তাই যারা কথিত শ্বেতপত্র প্রকাশের মাধ্যমে দেশের সম্মানিত আলেমদের সম্মানহানি করেছে, আলেমদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, দেশবাসীর সামনে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছে; তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছি।’

একইসঙ্গে দেশের সম্মানিত আলেমদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও কারাবন্দী সকল মজলুম আলেমদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান বক্তারা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সহসাধারণ সম্পাদক মাওলানা শামসুদ্দোহা আশরাফী, মাওলানা রেজাউল করিম আবরার, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা কামাল উদ্দিন সিরাজ প্রমুখ।

এসএএস/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর