বাংলা সাহিত্যের প্রাণপুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শুধু বাংলা সাহিত্যের নয়, এশিয়ার প্রথম নোবেলজয়ী কবি হলেন রবি ঠাকুর। তিনি একাধারে কবি, চিত্রশিল্পী, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, সাহিত্যিক, ছোটগল্পকার, সংগীত রচয়িতা-সুরকার, নাট্যকার ও দার্শনিক ছিলেন। হাসি বা কান্না, রাগ বা দুঃখ— সব আবেগে তার সৃষ্টি আমাদের চলার পথের সঙ্গী। আজ বুধবার ২৫ বৈশাখ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী।
১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ (ইংরেজি ১৮৬১ সালের ৭ মে) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ। তার অমর সৃষ্টি আজও বাঙালির কাছে সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। তার সৃষ্টির মধ্যেই আমরা কোথাও না কোথাও খুঁজে পাই আমাদের অনুভূতির মুক্তি।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু অবাক করার বিষয়, রবীন্দ্রনাথ যে ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তাদের প্রকৃত পদবি আসলে ‘ঠাকুর’ ছিল না। তাহলে কি ছিল ঠাকুর বংশের আসল পদবি? ঠাকুর বংশের আসল পদবি হলো ‘কুশারি’।
কুশারি থেকে কিভাবে ঠাকুর হয়ে উঠলেন তারা? কেনই বা পদবিতে আনতে হয়েছিল পরিবর্তন? তা জানতে ফিরে যেতে হবে বহু বছর আগে। প্রায় দেড় শতকের ধর্মীয় গঞ্জনা, অপমান সহ্য করে, বছরের পর বছর দরিদ্র মানুষের সেবা নিয়োজিত থেকে কুশারি বংশধরেরা হয়ে ওঠেন ঠাকুর।
জানা যায়, এক বিশেষ মাংসের গন্ধ শোঁকার অপরাধে সমাজে কলঙ্কিত হতে হয় সুন্দরবন অঞ্চলের চার ব্রাহ্মণ জমিদার ভাই রতিদেব কুশারি, কামদেব কুশারি, শুকদেব কুশারি, জয়দেব কুশারি। এদেরই পরবর্তী বংশধর হলেন জগন্নাথ কুশারী। তার বংশধর রামানন্দের মহেশ্বর আর শুকদেব নামে দুই ছেলে ছিল। তারা গোবিন্দপুরে দরিদ্রদের সেবা করা থেকে শুরু করে প্রচুর দান করে সেখানকার মানুষের মনে জায়গা করে নেন। তারা হয়ে ওঠেন দরিদ্রের ভগবান বা ‘ঠাকুর’। এইভাবেই তারা ‘কুশারি’ পদবি ত্যাগ করে গোবিন্দপুরে এসে ওখানকার মানুষদের ভালোবেসে দেওয়া নাম ‘ঠাকুর’কেই নিজেদের পদবি হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেন। শুকদেব প্রথমে ‘ঠাকুর’ পদবি ব্যবহার শুরু করেন। পরে তার ভাই মহেশ্বরের ছেলে পঞ্চাননও কাকা শুকদেবকে অনুসরণ করে ‘ঠাকুর’ পদবি ব্যবহার শুরু করেন।
বিজ্ঞাপন
পরে এই বংশেরই এক বংশধর নীলমণি তৎকালীন জোড়াবাগান অঞ্চলের বিখ্যাত ধনী ব্যবসায়ী বৈষ্ণবচরণ শেঠের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে ওঠেন। বৈষ্ণবচরণ শেঠ নীলমণিকে জোড়াসাঁকোয় দেড় বিঘা জমি বন্ধুত্বের উপহার হিসেবে দেন। তিনি চান যাতে তার পরম মিত্র সেখানেই বাড়ি করে থাকেন। এরপর সেখানেই গড়ে ওঠে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি। যা বর্তমানে রবির আলোয় উদ্ভাসিত।