শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ঢাকা

৯ মাসে শতাধিক রিকশা ছিনতাই করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫ মে ২০২৪, ০৩:৪০ পিএম

শেয়ার করুন:

৯ মাসে শতাধিক রিকশা ছিনতাই করে চক্রটি, ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর রামপুরা, বনশ্রী, বাসাবো, সবুজবাগ এলাকা ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন জায়গা থেকে চালকদের চা ও খাবারের সাথে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে রিকশা ছিনতাই ও চুরি করে আসছিল একটি চক্র। চক্রটি গত নয় মাসে শতাধিক রিকশা ছিনতাই করেছে। যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও ছিল অজানা। তবে সম্প্রতি রামপুরা এলাকায় শাহ আলম নামে এক রিকশাচালকের রিকশা হারানোর ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

চক্রটিতে তিনজন এই কাজ করে আসছিলেন। তাদের শনিবার (৪ মে) অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


রোববার (৫ মে) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের ডিসি হায়াতুল ইসলাম খান। 

এ ঘটনায় রাজধানীর মুগদা মানিক নগর ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোট চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- শরীফুল ইসলাম (৩২) ও তার অন্যতম সহযোগী চান্দু (৪০) এবং চোরাই রিকশা কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত ফুল মিয়া (৫৯) ও মো. আল আমিন (৩৮)। এসময় তাদের কাছ থেকে সাতটি চোরাই রিকশা উদ্ধার করা হয়।

হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, নিরীহ রিকশা চালক শাহ আলম মারা না গেলে আমরাও হয়ত এই রিকশাটি গুরুত্ব দিয়ে খুঁজে বের করতাম না। আর খুঁজে বের করা না গেলে হয়ত এই চক্রটির সন্ধান পেতাম না। এমন ঘটনা ঘটতেই থাকত। সাধারণ নিরীহ রিকশাচালকরা শিকার হতেন। তারা গত নয় মাসে শতাধিক রিকশা চুরি ও ছিনতাই করেছে। 

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, গত ৮ এপ্রিল রামপুরার বনশ্রী এলাকায় শাহ আলম নামে একজন রিকশাচালককে অজ্ঞান করে তার রিকশাটি নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনাটি আসলে আমাদের কাছে রেকর্ডেট ছিল না।  পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৭ এপ্রিল তিনি মারা যান। পরে আমরা ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে পারি। মূলত তাকে অজ্ঞান করে রিকশাটি ছিনতাইয়ের জন্যই এমন ঘটনা ঘটনানো হয়েছে। সাত দিন পর জেনে আমরা এটি নিয়ে কাজ শুরু করি। তদন্তে নেমে শতাধিক সিসি ক্যামেরা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গ্রুপটিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হই। এরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তারা গত নয় মাস ধরে প্রতারণার মাধ্যমে রিকশা চুরি করে আসছিল। তারা চালকদের অজ্ঞান করে শতাধিক রিকশা ছিনতাই করেছে।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

জাল দলিলে ব্যাংকের শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করে চক্রটি

চিনি-লবণ মিশিয়ে নকল প্যাকেটে তৈরি হচ্ছিল টেস্টি ও ওরস্যালাইন

চক্রটির মূলহোতা শরীফুল ইসলাম। তিনি এক সময় কাভার্ডভ্যান চালক ছিলেন জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েক মাস আগে তার মালিক কাভার্ডভ্যানটি বিক্রি করে দেন। পরে তিনি নড়াইলে তার এক গুরুর মাধ্যমে এই কাজে জড়িয়ে পড়েন। তার দেওয়া তথ্যমতে, গত নয় মাসে প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি করে রিকশা চুরি ও ছিনতাই করেছেন তিনি। শুধু গত সপ্তাহেই তিনি এমন চারটি কাজ করেছেন বলে স্বীকার করেছেন।

Riksha2

ডিসি হায়াতুল ইসলাম বলেন, তারা যেসব ঘটনা ঘটিয়েছে তার কোনোটাই কিন্তু থানায় অভিযোগ করা নয়। চুরি ও ছিনতাই হওয়া রিকশাগুলোর কাগজপত্র না থাকায় হয়ত থানায় রিপোর্ট বা জিডি আকারে হয়নি। ফলে গ্রুপটি ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। তারা একধরনের আনন্দ নিয়েই এই কাজ করে যাচ্ছিল।

যেভাবে রিকশা চুরি ও ছিনতাই করা হতো

ডিসি হায়াতুল ইসলাম জানান, তারা তিনজনের একটি টিম। তারা প্রথমে টার্গেটকৃত চালকের রিকশায় ওঠত। এরপর মাঝপথে তারা কোনো জায়গায় চা খাওয়ার কথা বলে থামাত। পরে তাকে চায়ের সাথে অজ্ঞান করা ওষুধ খাইয়ে অচেতন করত। এক পর্যায়ে রিকশাটি নিয়ে তারা পালিয়ে যেত।

পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তারা এই চোরাই রিকশাগুলো নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিঝিতে নিয়ে যেত। সেখান থেকে আমরা সাতটি রিকশা উদ্ধার করেছি। মিরপুরে আরেকটি গ্রুপের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান।

তবে এ ধরনের ঘটনা কারও সঙ্গে ঘটলে দ্রুত থানায় জানানোর অনুরোধ করেন নগর পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এমআইকে/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর