বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

কেনা দামে বিক্রি, মুহূর্তে ফাঁকা তরমুজের পিকআপ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২২, ০৪:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

কেনা দামে বিক্রি, মুহূর্তে ফাঁকা তরমুজের পিকআপ

গ্রীষ্মকালে পছন্দের অন্যতম ফল তরমুজের দাম নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় বাজার ঘুরে তরমুজ না কিনে বাসায় ফেরার ঘটনাও আছে অনেকের। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এটি কেনা অনেকটা বিলাসিতার পর্যায়ের চলে গিয়েছে। কৃষকের বদলে তরমুজের অধিক মুনাফার টাকা মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে যাওয়ার অভিযোগ আছে।

তরমুজ নিয়ে যখন এত এত অভিযোগ তখন ঢাকার গুলশানে সরাসরি ক্ষেত থেকে তরমুজ কিনে খরচের দামে তা বিক্রি করে তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন আবদুল্লাহ আল জহির স্বপনের নামের এক ব্যক্তি। বড় আকৃতির একেকটি তরমুজ ঘোষণা দিয়ে একশ টাকা করে বিক্রি করায় মাত্র দেড় ঘণ্টায় পুরো পিকআপ খালি হয়ে যায় তার।


বিজ্ঞাপন


সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এমন একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ক্রেতাদের মধ্যে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি চাকরিজীবীও অনেকে তরমুজ কিনে নিজেদের স্বস্তির কথা জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমন উদ্যোগের পেছনে যে মানুষটির ইচ্ছা কাজ করেছে তিনি গুলশান সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ আবদুল্লাহ আল জহির স্বপন। ব্লু ফ্লাইং একাডেমির চেয়ারম্যানের পাশাপাশি তিনি বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকেরও পরিচালক।

গত বুধবার তরমুজ বিক্রির সময় ফেসবুক লাইভে এমন উদ্যোগের নেপথ্যে গল্পের কথাও বলেছেন তিনি। জানান, পরিচিত একজন তরমুজ কিনতে গিয়ে দামের কারণে ফিরে আসার ঘটনায় নিজের মধ্যে জেদ চেপে বসে জহির স্বপনের। পরে খুলনায় গিয়ে কিনে ফেলেন পুরো তরমুজ ক্ষেত। সেখান থেকে পিকআপ ভরে নিয়ে আসেন গুলশানে। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তদারকি করে ১০০ টাকা করে বিক্রি করেন বড় আকৃতির তরমুজ। যেগুলো ঢাকার বাজারে সাধারণত ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

একশ টাকায় তরমুজ কেনার সময় একজন বলেন, রমজানে আমার বাচ্চা তরমুজ খাওয়ার জন্য বললে বাজারে গিয়ে দাম বেশির কারণে কিনতে পারিনি। বাচ্চার জন্য মন খারাপ হয়েছে। আজকে এখান থেকে ১০০ টাকায় তরমুজ কিনতে পারছি। এখন বাচ্চাকে নিয়ে খেতে পারবো। যিনি এমন ব্যবস্থা করছেন তাকে ধন্যবাদ।


বিজ্ঞাপন


শরীরে পানির চাহিদা পূরণে মানুষের পছন্দের ফল তরমুজ। গ্রীষ্মকালীন সুস্বাদু এই ফলটি ভিটামিন সমৃদ্ধও। প্রতি বছর দেশের একাধিক জেলায় ব্যাপকহারে ফলটির চাষ হয়। চাহিদার তুলনায় উৎপাদনও হয় অনেক। কিন্তু সবার প্রিয় এই ফলটি বেশিরভাগ সময় দাম থাকে অনেক বেশি। বিশেষ করে কৃষকের কাছ থেকে পাইকারি ব্যবসায়ী, পরবর্তী সময়ে খুচরা বিক্রিতে দামের আকাশ-পাতাল পার্থক্য থাকে। পিস হিসেবে আড়ৎ থেকে তরমুজ কিনে বেশি লাভের আশায় অনেকে কেজি দরে বিক্রি করে এটি।

ক্রেতাদের অভিযোগ, কৃষক দাম না পেলেও মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে চলে যায় তরমুজ বিক্রির অতিরিক্ত মুনাফা। তাই তরমুজের লাগাম টানতে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে অভিযানও চালাতে হয়েছে।

99

ফেসবুকে পোস্ট করা ভিডিওর ক্যাপশনে আবদুল্লাহ আল জহির স্বপন লিখেছেন, সরাসরি ক্ষেত থেকে তরমুজ ঢাকায় নিয়ে এসে গুলশান দুই নম্বর গোল চত্বরে বিক্রি করা হলো। দেড় ঘণ্টায় এক ট্রাক তরমুজ শেষ।

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমার প্রতি পিস তরমুজ খুলনা ক্ষেত থেকে আনতে খরচ মোট খরচ হয়েছে ১০০ টাকা। আমি সেই ১০০ টাকায় সবাইকে খাওয়ার সুযোগ করে দিলাম। যে তরমুজ প্রতি পিস ঢাকায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।’

আবদুল্লাহ আল জহির স্বপনের এমন কাজের প্রশংসা করে অনেকে মন্তব্য করেছেন। মিজানুর রহমান নামের একজন মন্তব্য করেছেন, অত্যন্ত সুন্দর উদাহরণ। রেফারেন্স হিসেবে কাজ দেবে। তেল-পেঁয়াজ নিয়েও একটা উদাহরণ তৈরি করুন। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিন কী পরিমাণ মুনাফা, চাঁদা মধ্যস্বত্বভোগীরা আদায় করে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হর্টিকালচার বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এবছর ৬৭ হাজার ৯৫২ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষাবাদ হয়েছে। গত মৌসুমে ৪৩ হাজার ৩৪৭ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছিল, ফলন উঠেছিল ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৯৮৯ টন। তার আগের বছর ৩৮ হাজার ৮২৪ হেক্টর জমিতে ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টন তরমুজ উৎপাদিত হয়েছিল।

তরমুজ সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে ওঠে। এটাই তরমুজের প্রধান মৌসুম। কিন্তু সম্প্রতি এ দেশের বাজারে এ সময় ছাড়া অন্য সময়েও তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ তরমুজ বেশি পাওয়া যায়। এ তরমুজকে ‘বারোমাসি তরমুজ’ বলা হয়ে থাকে।

ঢাকায় যেসব তরমুজ আসে, তার বড় অংশ আসে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী ও বরিশাল থেকে। খুলনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনাসহ অন্যান্য জেলাতেও তরমুজের আবাদ হয়।

বিইউ/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর