সোমবার, ৬ মে, ২০২৪, ঢাকা

পাটশিল্পের উন্নয়নে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে: নানক

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৩ পিএম

শেয়ার করুন:

পাট শিল্পের উন্নয়নে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে: নানক

পাটশিল্পের উন্নয়ন ও সমস্যাসমূহ সমাধানে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর আমি এ খাতে বেশ কিছু সমস্যা দেখতে পাই। যেমন পাট বীজের মাত্র এক তৃতীয়াংশ দেশে তৈরি হয়। বাকী তিন-চতুর্থাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় যা দুঃখজনক।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী সেন্টারে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) ৪০তম বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। বিজেএমএ এর চেয়ারম্যান মো. আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কাজী নাবিল আহমেদ, এফবিসিসিআই এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন লি. ব্যবস্থাপনা পরিচালক শমী কায়সার, প্রাক্তন ও নবনির্বাচিত পর্ষদ পরিচালকগণ এবং পাট ও পাট পণ্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাবৃন্দ।


বিজ্ঞাপন


জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আমি জানতে পারলাম পাট গবেষণা কেন্দ্র পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান নয়। এটা কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান। এরকম হাজার সমস্যার কারণে পাটশিল্পে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হচ্ছে না। জুট কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে এ সকল সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। জুট কাউন্সিল গঠন করা হলে পাট উন্নয়নের সমন্বিত পথনকশা প্রণয়ন করাও সহজ হবে বলে আশা করি।

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, আজকে বিজিএমের সদস্যরা ৫০ কেজি চালের বস্তা যেগুলো পলিথিন বা প্লাস্টিকের তৈরি তা নিষিদ্ধের দাবি করেছেন। আমি আপনাদের সাথে একমত। শুধু ৫০ কেজির বস্তা নয় আমরা সকল প্রকার পলিথিন ও প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। কিন্তু গায়ের জোরে সরকারি প্রভাব খাটিয়ে করলে সেটা ঠিক হবে না। গ্রাহকের হাতে বিকল্প দিতে হবে। গতমাসে ডিসি কনফারেন্সে আমি জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছি রমজান মাসের পর প্লাস্টিক ব্যাগ বন্ধ করে পাটের ব্যাগ কার্যকরের ব্যবস্থা নিতে। ইতিমধ্যে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে পাটজাত পণ্য তৈরির জন্য ড. মোবারক সাহেবকে আমরা ১০০ কোটি টাকার তহবিলের ব্যবস্থা করেছি এবং এ খাতে আরও বিনিয়োগ নিশ্চিত করা হবে।

নানক বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর একজন বার্তাবাহক। আমি আপনাদের বার্তা তার কাছে পৌঁছে দেব। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বার বার বলেছেন, পাট ও চামড়া শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে পোশাক শিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে হবে।

পাটমন্ত্রী বলেন, একসময় পাট থেকে দেশের রফতানি আয়ের সিংহভাগ আসতো। বঙ্গবন্ধু পাট ও পাটের সাথে সম্পৃক্ত জনগণের উন্নতি চেয়েছিলেন, তিনি পাটের উন্নতির জন্য পাট মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করেছিলেন। তার সুযোগ্য কন্যা হিসেবে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাটের উন্নয়নের জন্য  বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন । তিনি পাটজাত পণ্যের রফতানির উপর ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দিয়েছেন, ৬ মার্চ জাতীয় পাট দেবস হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তিনি পাট ও পাটজাত পণ্যকে  ২০২৩ সনের ‘বর্ষ পণ্য’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। বর্তমানে সরকার পাটের উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন পাটশিল্পকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তিনি গার্মেন্টসের ন্যায় পাটশিল্পের উন্নয়ন চান এবং এজন্য যা যা করার দরকার তা করা হবে আশ্বাস দিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


অনুষ্ঠানে বিজেএমএ-এর চেয়ারম্যানসহ বোর্ড সদস্যগণ মন্ত্রীর নিকট পাটশিল্প খাতের কিছু সমস্যা তুলে ধরেন। মন্ত্রী তাদের সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান। মন্ত্রী বলেন, আমি অর্থ মন্ত্রণালয় ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে বলেছি ২৮২টি বহুমুখী পাটজাত পণ্যের তালিকাটি অর্থ মন্ত্রণালয় হতে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রেরণ করতে। তাহলে রফতানিকারকদের বহুমুখী পাটজাত পণ্য রফতানিতে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা পেতে সুবিধা হবে। পাটশিল্পের বকেয়া ঋণ সুদ-আসলসহ একটি হালনাগাদ তারিখ ভিত্তিক ব্লক হিসেবে স্থানান্তরের বিষয়ে ২ বছরের মরাটোরিয়াম সুবিধাসহ ১০ বছরে পরিশোধ এবং ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের পরিবর্তে ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট আদায় নিশ্চিত করার জন্য আমি সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি।

তাছাড়া কাঁচা পাটের উপর ২ শতাংশ উৎসে কর, প্রতিবেশী দেশ কর্তৃক পাটজাত পণ্য রফতানির উপর এন্টি-ডাম্পিং ডিউটি আরোপ রহিতকরণ, ২ শতাংশ সরল সুদে পাটশিল্পের কাঁচামাল ক্রয় করার জন্য দেশীয় মুদ্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার একটি জুট সেক্টর উন্নয়ন তহবিল গঠন, কাঁচাপাটের পাশাপাশি পাটজাতপণ্যকে কৃষিজাত পণ্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাটির প্রজ্ঞাপন জারি, পাটমিল গুলোর পুরাতন মেশিনারি স্থানান্তরের জন্য সরকারীভাবে অন্তত ৩০ শতাংশ নগদ সহায়তার বিষয়েও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাজারে পাটজাত পণ্যের বিক্রি বৃদ্ধি করাকে পাটশিল্প খাতের গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, অভ্যন্তরীণ বাজারে পাট পণ্যের বিক্রি বৃদ্ধির জন্য আমরা ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০’ শতভাগ বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। বিদেশের বাজারে পাটজাত পণ্যের বিক্রি বৃদ্ধির জন্য আমরা বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস গুলোকে পত্র দিয়েছি। বিদেশের বিভিন্ন মেলা এবং বাজারে যাতে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্য ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল সহজেই অংশগ্রহণ করতে পারেন তার চেষ্টা করছি এবং বাংলাদেশের পাটজাত পণ্য ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের মানোন্নয়নের জন্য ডিজাইন, কালারিং, নকশা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পাটশিল্প খাতকে যাতে গার্মেন্টসের ন্যায় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা যায় এবং গার্মেন্টস শিল্পের ন্যায় উন্নত করা যায় সে বিষয়েও প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

কারই/এমএইচটি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর