শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

নাক চেপে হাঁটতে হয় সচিবপাড়ায়!

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ১৩ মে ২০২২, ০৪:২৬ পিএম

শেয়ার করুন:

নাক চেপে হাঁটতে হয় সচিবপাড়ায়!

সরকারের একাধিক মন্ত্রী, সচিব থেকে শুরু করে বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের বসবাস রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন এলাকায়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন এলাকাটি যে কারণে লোকমুখে 'এলিট' এলাকা হিসেবে পরিচিত। কেউ কেউ এটাকে ‘সচিবপাড়া’ও বলেন। কিন্তু বাসাবাড়ির ময়লা জমা করার জন্য এই এলাকায় নির্মিত সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনের (এসটিএস) অব্যবস্থাপনার কারণে পথচারীদের অনেকটা নাক চেপে চলতে হয়।

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) অফিসের পাশেই নির্মিত এসটিএসের বাইরে ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করা হয় বহুদিন ধরে। ফলে স্বাভাবিকভাবে ওই পথ দিয়ে হাঁটাচলা করাও দায়। 


বিজ্ঞাপন


দক্ষিণ সিটিতে ৪২টি থাকলেও উত্তর সিটি করপোরেশনে এসটিএস ৫৪টি। উত্তর সিটিতে এসটিএস আছে ৫৪টি। দুই সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব এসটিএস চালু হওয়ায় নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন ঘটেছে।

তবে এই এলাকায় দিনের পর দিন পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের এমন কাজে কেউ বাধাও দিচ্ছে না। কোনো তদারকিও নেই।

যদিও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দাবি, এসটিএসের ভেতরে জায়গা হয় না, তাই বাইরে ময়লা ফেলে প্লাস্টিক জাতীয় বিভিন্ন জিনিস তারা আলাদা করে রাখেন।

তবে সরেজমিন ঘুরে ভিন্ন দৃশ্য দেখা গেছে। দিনে-রাতে যখনই ময়লার ভ্যান নিয়ে আসা হয় তখন এসটিএসের ভেতরে জায়গা খালি থাকে। তখনও পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বাইরে গাড়ি থেকে ময়লা ঢেলে বাছাই করেন। এতে পুরো এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।


বিজ্ঞাপন


পাশাপাশি একাধিক ডাস্টবিন সার্বক্ষণিক এসটিএসের বাইরে রেখে দেওয়ায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আবর্জনা বাছাই করা ছাড়াও সবসময় দুর্গন্ধ ছড়ায়। 

জানে আলম নামের একজন সরকারি কর্মকর্তা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘পুরো এলাকায় প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা ছাড়া কারও বাসা নেই। অথচ এখানকার ময়লার গন্ধে অনেক সময় কোয়ার্টারেও থাকা কষ্টকর। অফিসে যাওয়া আসা গাড়িতে করে করার কারণে অনেকে দুর্গন্ধ টের পায় না। কিন্তু সকাল-বিকাল পার্কে হাঁটতে যাওয়ার সময় কষ্ট হয়।’

dust2

দীর্ঘদিন ধরে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করলেও এ যেন কেউ দেখার নেই। যদিও বিষয়টি নিয়ে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে আছেন বলে জানিয়েছেন স্খানীয় কাউন্সিলর আবুল বাশার।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘বিকল্প কোনো জায়গাও নেই। কোথায় যাবো বলেন। এটা নিয়ে মন্ত্রী, মেয়র অনেকে কথা বলেছেন। কিন্তু যাওয়ার তো জায়গা থাকতে হবে।’

কাউন্সিলর বলেন, ‘এই বিষয়টি আমার নজরে আগেও এসেছে। আমি নিজে গিয়ে আবার দেখবো ওরা আসলে কী করে। ভেতরে জায়গা ফাঁকা থাকলে কোনোভাবে ময়লা বাইরে বসে প্রসেস করা যাবে না। আর বিদ্যমান এসটিএসটি বড় করার চেষ্টা করছি। কিন্তু সেখানে গাছ কাটা পড়বে এই কারণে আপাতত কাজ বন্ধ রয়েছে। দেখবো বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না।’

১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে তার মিন্টু রোড, কাকরাইল, সার্কিট হাউস রোড, সিদ্ধেশ্বরী রোড ও লেন, মগবাজার এলিফ্যান্ট রোড, মগবাজার ইস্পাহানি কলোনি, নিউ ইস্কাটন রোড, ইস্কাটন গার্ডেন রোড, আমিনাবাদ কলোনি ও ইস্টার্ন হাউজিং অ্যাপার্টমেন্ট, বেইলি স্কোয়ার ও বেইলি রোড, বাজে কাকরাইল, ডি,আই,টি কলোনি ও পশ্চিম মালিবাগ।  

পুরো এলাকার বেশিরভাগজুড়ে আবাসিক এলাকা। এছাড়াও একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এই এলাকায়। ইস্কাটন গার্ডেনের এলাকার এই এসটিএসটি ছাড়া মগবাজারের এসপিআরসি হাসপাতালের পাশে ফ্লাইওভারের নিচে একটি এসটিএস আছে। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কোলঘেঁষে এটি স্থাপন করা হলেও এটি অন্য ওয়ার্ডে পড়েছে।  

dust3

তবে পুরো ওয়ার্ডে একটিমাত্র এসটিএসের কারণে ময়লার পরিমাণও বেশি। এগুলো সংগ্রহ করতেও কর্মীদের বেশ বেগ পেতে হয় বলে জানিয়েছেন ময়লা সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান আর কে বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের।

প্রতিষ্ঠানটির সুপারভাইজার মো. সাকিব বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেইলকে জানান, পুরো ওয়ার্ডের আবর্জনা একটি এসটিএসে জমা করা হয়। পরে সিটি করপোরেশনের গাড়িতে সেগুলো ডাম্পিং স্টেশনে নেয়। কিন্তু জায়গা সংকটের কারণে ময়লাগুলো বাইরে রেখে ওরা প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বাছাই করে। 

আবর্জনা সংগ্রহকারী এই প্রতিষ্ঠানের কর্মী সাকিব বলেন, ‘আজকে থেকে প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে থেকে যতক্ষণ ভেতরে জায়গা থাকবে ততসময় যেন বাইরে ময়লা ফেলা না হয় সেটা খেয়াল করবো। আশা করি সামনে এমন পরিস্থিতি থাকবে না। তবে পাশে যে এসটিএস বাড়ানোর কাজ চলছে সেটা শেষ হলে আর বাইরে কিছু করতে হবে না।’

বিইউ/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর