রোববার, ১৯ মে, ২০২৪, ঢাকা

গরমের প্রভাব পড়েছে পর্যটনে

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪৬ এএম

শেয়ার করুন:

গরমের প্রভাব পড়েছে পর্যটনে

বৈশাখের খরতাপে অতিষ্ঠ জনজীবন। গরমের কারণে ঘরে-বাইরে কোথাও নেই স্বস্তি। তেতে উঠেছে ভূপৃষ্ঠ। বৃষ্টির জন্য হা-পিত্যেশ শুরু হয়েছে দেশজুড়ে। ইতোমধ্যে দেশের কোথাও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। সামনে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। কয়েকদিন ধরে বয়ে যাওয়া এমন দাবদাহের প্রভাব পড়েছে দেশের পর্যটন খাতেও। তাপমাত্রা বাড়ায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে কমেছে পর্যটকের সংখ্যা। দুই দিন আগেও বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে পর্যটকে ঠাসা ছিল। গতকাল সেই সংখ্যাটা অর্ধেকে নেমেছে। ঈদের ছুটি শেষের পাশাপাশি অতিরিক্ত গরমের কারণেও পর্যটকের এমন ভাটা পড়েছে বলে মনে করছেন হোটেল ব্যবসায়ীসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

দুই দিন আগে কক্সবাজার, সিলেট, কুয়াকাটা ও উত্তরের বিনোদনকেন্দ্র ও পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। কিন্তু গত সোমবার দুপুরের পর থেকে সেই ভিড় অনেকটা কমেছে।


বিজ্ঞাপন


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজারে ঈদের পরদিন থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত পর্যটকের প্রচুর ভিড় ছিল। কিন্তু সোমবার দুপুরের পর থেকে কমতে শুরু করে সেই সংখ্যা। গতকাল মঙ্গলবার কক্সবাজারে পর্যটকের সংখ্যা ছিল অনেক কম। যারা আছেন তারাও সমুদ্রে স্বস্তি খুঁজতে ব্যস্ত।

coxs-2হোটেল সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার পাশাপাশি গরমের কারণে পর্যটক কমে গেছে। যারা এখনও আছেন দুপুর ১২ টার পর কেউ তেমন প্রয়োজন ছাড়া সমুদ্র সৈকতে বের হচ্ছেন না। বিকেলে কিছুটা ঠাণ্ডা আবহাওয়া বিরাজ করলে লোকজন বের হচ্ছেন।

জানা যায়, শুধু কক্সবাজারেই আবাসিক হোটেল আছে প্রায় চার শ। এসব হোটেলে ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ থাকতে পারেন। তবে এর বেশি লোকজন সেখানে বেড়াতে যান। সবমিলিয়ে হোটেলগুলোতে প্রায় দেড় লাখ মানুষ থাকতে পারেন। এর বাইরে আবার কেউ কেউ আত্মীয়স্বজন, বিভিন্ন সরকারি ও বেরসরকারি কাজে যান। তারা থাকেন নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের আবাসিকে।

ট্যুরিস্ট পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ঈদের পরদিন থেকে এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন লাখেরও বেশি পর্যটক কক্সবাজারে ভ্রমণে গিয়েছিলেন। অন্যদিকে কুয়াকাটায়ও লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তবে সারাদেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে কত সংখ্যক মানুষ ভ্রমণ করেছেন তার পরিসংখ্যান বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের কাছে নেই। বোর্ডের মহাপরিচালকও তা স্বীকার করেছেন।


বিজ্ঞাপন


গরমে পর্যটক কমে যাওয়ার তথ্য জানিয়ে কক্সবাজার জেলার রেইন ভিউ রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাইয়ুম খান বলেন, ঈদের পরদিন থেকে প্রতিটি হোটেলে টানা চারদিন ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যটক ছিল। মঙ্গলবার তা অর্ধেকে নামে।

আরও পড়ুন

তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪২ ডিগ্রিতে

ঢাকা মেইলকে কাইয়ুম খান বলেন, অতিরিক্ত গরমের কারণে পর্যটক কমে গেছে। বুধবার থেকে এই সংখ্যা আরও কমে যাবে। তবে সামনের দিনগুলোতে আরও ভালো হবে বলে আমরা আশা করছি।

শুধু কাইয়ুমই নন, তার মতো কক্সবাজারের আরও কয়েকটি রিসোর্ট ও হোটেল ব্যবসায়ীরাও একই কথা জানান।

কক্সবাজার পর্যটন সমিতির সভাপতি বেলাল আবেদীন ভুট্টো ঢাকা মেইলকে বলেন, মঙ্গলবারও অনেক পর্যটক আছেন। কিন্তু বুধবার থেকে কমে যাবে।

কক্সবাজার হোটেল মালিকরা জানান, রমজানে পুরো এক মাস হোটেলগুলো ফাঁকা ছিল। সেখানে তারা বড় ক্ষতির সম্মুখীন হন। কিন্তু ঈদে সেই ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিতে নিতে পারবেন বলে মনে করেছিলেন। কারণ ঈদের পর দুই সপ্তাহ পর্যটক আসা যাওয়া করবে। তাছাড়া এবার সেন্টমার্টিন যাওয়া বন্ধ থাকায় কক্সবাজারে ভিড় হবে তা আগেই অনুমান করেছিলেন তারা। ঈদে টানা চারদিন অনেক ভিড়ও ছিল কক্সবাজারে। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে সেই ভিড় কমে গেছে।

coxs-1বাংলাদেশ টুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ ঢাকা মেইলকে বলেন, সোমবার দুপুরের পর থেকে পর্যটক কম ছিল। তবে তার আগের কয়েকদিন ঢল নেমেছিল।

কক্সবাজারের মতো কুয়াকাটাতেও ঈদের পর পর্যটকের ভিড় বেড়েছিল। কিন্তু গরমের কারণে সোমবার থেকে পর্যটকের অনেকটা ভাটা পড়েছে। বিশেষ করে মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল কুয়াকাটায়। এর প্রভাব পড়ে পর্যটনের ওপর।

কুয়াকাটার খান হোটেল প্যালেসের মালিক রাসেল খান ঢাকা মেইলকে বলেন, ঈদের ছুটি শেষ হয়েছে। অনেকে আনন্দ করতে এসেছিলেন। ছুটি শেষ হওয়ায় তারা কর্মস্থলে ফিরে যাচ্ছেন। পাশাপাশি প্রচণ্ড গরমের কারণে অনেকটা প্রভাব পড়েছে।

কক্সবাজার, সিলেট ও চট্টগ্রামের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে যারা যায় তাদের অনেকেই যায় আকাশপথে। ঈদের ছুটি শেষ ও গরমের প্রভাবে এই পথে যাত্রী কমেছে। ঈদের পরদিন ঢাকা থেকে কক্সবাজার ও সিলেট এবং চট্টগ্রাম রুটে ব্যাপক ভিড় থাকলেও আজ থেকে ঢাকায় ফেরা যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে। অন্যদিকে কিছুটা কমেছে এসব রুটে যাওয়া যাত্রীর সংখ্যা।

এ বিষয়ে ইউএস-বাংলার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, এখনো যাত্রীর চাপ আছে। সেটা ঢাকাকেন্দ্রীক। তবে ঢাকা থেকে পর্যটন শহরগুলোতে যাত্রী যাওয়ার সংখ্যা কিছুটা কমেছে।

coxs-3শুধু কক্সবাজার-কুয়াকাটাই নয়, উত্তরবঙ্গের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে গতকাল থেকে দর্শনার্থী কমে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গরমের কারণে দর্শনার্থী কমেছে উত্তরের বিনোদনকেন্দ্র স্বপ্নপুরী, ভিন্নজগৎ, তাজহাট জমিদার বাড়ি, চিকলির বিল এবং রামসাগরসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলোতে। অথচ ঈদের ছুটিতে পা ফেলার জায়গা ছিল না এসব বিনোদন কেন্দ্রে।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবেরও স্বীকার করেছেন গত কয়েক দিনের চেয়ে সোমবার থেকে পর্যটক কমতে শুরু করেছে।

ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘আমরা পর্যটনের উন্নয়নে মাস্টারপ্লান তৈরি করেছি। সেই অনুযায়ী ভিজিবল স্টাডি হচ্ছে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কাজ করতে পারলে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকের সংখ্যা আরও বাড়বে।

এমআইকে/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর