রোববার, ১৯ মে, ২০২৪, ঢাকা

তীব্র গরমে কেমন কাটল পহেলা বৈশাখ

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

তীব্র গরমে কেমন কাটল পহেলা বৈশাখ

রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে রিফাত ও নাহিয়ান নামের দুই বন্ধু আইসক্রিম খাচ্ছিলেন। পরক্ষণেই তারা পাশে থাকা শরবত দোকানির কাছ থেকে দুই গ্লাস শরবতও নিয়ে খেলেন। এরপর অনেকটা যেন দম ছেড়ে বাঁচলেন! রিফাত শরবতটা শেষ করেই বলে উঠলেন, আহা! কি শান্তি! 

তখন ঘড়ির কাঁটায় প্রায় ১টা বাজছিল। আর আকাশে রোদের তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তীব্র গরমে শুধু রিফাত আর নাহিয়ানই নয়, তাদের মতো হাঁপিয়ে ওঠেছিল হাজার হাজার মানুষ। বিশেষ করে যারা বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাসার বাইরে বের হয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


রোববার (১৪ এপ্রিল) সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, শাহবাগ, রমনা, হাতিরঝিল ও সংসদ ভবন এলাকার বিপরীতে থাকা চন্দ্রিমা উদ্যানে হাজার হাজার মানুষজন জমায়েত হতে শুরু করে।

বিশেষ করে রমনায় ছায়ানটের অনুষ্ঠান ও ঢাবির চারুকলার শোভাযাত্রায় যোগ দিতে সকালে বেশির ভাগ মানুষ হাজির হয়েছিল। সকাল নয়টার পর থেকে বেলা বাড়লে সঙ্গে রোদের তীব্রতা বাড়তে থাকে। বাইরে গরম এখন চরমে। রোদের সাথে গরম বাতাস যেন শরীরে হানা দিচ্ছে। 

তীব্র গরমের মাঝেও বর্ষবরণের অনুষ্ঠানগুলোয় যোগ দিতে হাজার হাজার মানুষ বের হয়েছিল। কিন্তু গেল কয়েকবারের তুলনায় ছিল কম।

6


বিজ্ঞাপন


শোভাযাত্রা শেষে অনেকে ছুটেছেন বাসার পথে

সকালে ঢাবি থেকে বের হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ঢাকা সিটির উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাবির ভিসিসহ সংস্কৃতজনেরা। তবে এতে অনেকে অংশ নিলেও গরমের কারণে শোভাযাত্রা টিএসসিতে যাওয়ার আগেই বাসার পথে রওনা হন। 

মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষ করে রিকশা খুঁজছিলেন লিসা ও তার মা। তারা এসেছেন টিকাটুলি থেকে। মা ও মেয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নিলেও শেষে বেশিক্ষণ থাকেননি। রিকশা নিয়ে সরাসরি ছুটলেন বাসার দিকে। তাদের অনেকেই বিশেষ করে যারা সকালে বের হয়েছিলেন তারা দুপুর নাগাদ বাসার দিকে ছুটতে শুরু করেন। 

মোহাম্মদপুর থেকে এসেছিলেন রাসেল ও রিয়া দম্পতি। সাথে এসেছিল তাদের স্বজনরাও। তারা বলছিল, এবার লোকজন অন্যান্য বারের তুলনায় কম। তারা অন্য বারগুলোতে লোকজনের চাপে রাস্তায় হাঁটতে পারেননি। অবশ্য সেই অবস্থা এবার ছিল না। তারপরও লোকজন কম হয়নি।

4

পানি বিক্রেতাদের ‘পোয়াবারো’:

গরম ‘পোয়াবারো’ অর্থাৎ ভাগ্য অত্যন্ত সুপ্রসন্ন করেছে শরবত বিক্রেতাদের। সজল ঢাবির চারুকলার সামনে শরবত বিক্রি করছিলেন। একটার পর একটা গ্লাসে শরবত ভরছিলেন, অবসর পাচ্ছেন না। তার শরবত খাওয়ার জন্য হুমড়ি খাচ্ছেন অনেকে। একই চিত্রের দেখা মিলল টিএসসি, শাহবাগ, রমনার দুই গেট ছাড়াও ঢাবি ক্যাম্পাসে। 

এছাড়াও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকায় পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানস্থলগুলোতে বসেছিল শরবতের দোকান। সাথে আইসক্রিম বিক্রেতারাও জমিয়ে তুলেছেন ব্যবসা। শিশু পার্কের বিপরীতে থাকা রমনার গেটে তখন মানুষের দীর্ঘদিন লাইন। গরমে পার্কে ঢোকার লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে চলছিল আইসক্রিম বিক্রি ও কিনে খাওয়া।

দুই হাতে দুটি করে আইসক্রিম খেতে খেতে মৎস ভবনের দিকে হেঁটে আসছিলেন দুই বন্ধু রিদয় ও পল্লব। তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল- এত তীব্র গরমে ঠাণ্ডা ক্ষতি পারে কিনা?  কিন্তু তাদের জবাব ছিল- জান বাঁচানো ফরজ।

3

ঈদের ছুটির প্রভাব

ঢাকায় এবার পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানগুলোতে লোকজনের তেমন বেশি ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি। হঠাৎ কেন এমন হলো! কেউ কেউ বলছেন, ঈদের ছুটিতে লোকজন গ্রামের বাড়ি গেছে। ফলে তার প্রভাব পড়েছে ঢাকায়। আজ যারা সকাল থেকে বের হয়েছিল, তারা মূলত ঢাকা ছাড়েনি। 

আজিমপুর থেকে এসেছিল মালিয়া ও তার মেয়ে। তিনি বলছিলেন, স্বামী বাসায় ঘুমাচ্ছে। আমি আমার ছেলেকে নিয়ে বের হয়েছি কারণ ঈদে গ্রামে যাইনি। ঈদের দিন বের হয়েছিলাম আর আজ বের হলাম। 

এবার ঈদে ঢাকা ছেড়েছে কোটির বেশি লোকজন। স্মরণকালের লম্বা ছুটি পেয়ে এখনো গ্রামেই অবস্থান করছেন অনেকে। কিছু লোকজন ঢাকায় ফিরলেও তা সংখ্যায় কম।

মঙ্গলবার শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া সবুজ বলছিল, এবার আমার অনেক বন্ধু বাড়িতে গেছে ফলে তাদের মিস করছি। তারাসহ অনেকে ঢাকায় নেই। না হলে এ শোভাযাত্রা আরও বড় হতো।

5

বাইরে লোকজন কম, তীব্র গরম
 
পহেলা বৈশাখের প্রথম দিনে এমন গরম অনুভূত হবে তা ছিল অনেকের কল্পনার বাইরে। গরমের চোটে অনেকে বাসার বাইরে বের হননি। তবে যারা বের হয়েছিলেন তারা বেশিক্ষণ রোদে দাঁড়াননি। পুরো সময়টা কাটিয়েছেন কোনো গাছতলা বা ভবনে কিংবা ছায়াযুক্ত স্থানে। কম বেশি অনেকের হাতে ছিল পানির বোতল।

শোভাযাত্রা শেষে টিএসসির উত্তর পাশে থাকা যাত্রী ছাউনির নিচে বসে আরাম করছিলেন হায়দার আলী। তিনি বলছিলেন, আজ এত রোদ! হাঁটতে হাঁটতে হাঁপিয়ে গেলাম। 

রমনায় সকাল ৯টার পর থেকে ভিড় জমতে শুরু করেছে। এখনো শত শত লোক ভেতরে অবস্থান নিয়েছে। তবে বেশির ভাগ লোকজনই গাছতলার নিচে বসে বসে গল্পে মেতেছেন। অন্য বছরগুলোতে সড়কে লোকজনের ভিড় দেখা গেলেও এবার সেটা নেই। দুপুরের পর থেকে সড়কগুলোতে লোকজন কমতে শুরু করেছে।

7

জাতীয় ঈদগাহের গেটের বিপরীত পাশে দুই রাস্তার বিভাজনে থাকা ঢিবিতে বসে বসে আছেন পুলিশ সদস্যরা। তারাও প্রয়োজন ছাড়া কড়া রোদে তেমন মাথা বের করছেন না। সড়কে চলাচলকারী প্রতিটি রিকশার যাত্রীকে হুড তুলে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। 

অন্যদিকে হাতিরঝিল এলাকাতেও একই অবস্থা। সেখানে যাত্রী ছাউনি না থাকলে প্রাকৃতিক ছাউনি গাছের ছায়ায় বেড়াতে আসা লোকজনের শেষ ভরসা। তবে তীব্র গরমের কারণে বৈশাখের অনুষ্ঠানগুলোতে লোকজনও ছিল কম। হাতিরঝিল এখন লোকে লোকারণ্য। তবে বিকেলে এ ভিড় আরও বাড়বে বলে মনে করছেন অনেকে। 

গরমের তীব্রতা বুঝা যাচ্ছে সড়কে বা খোলা জায়গায় বের হলে। পহেলা বৈশাখ হলেও টিএসসি, শাহবাগ, রমনা, সংসদ ভবন এলাকা ও হাতিরঝিল ছাড়া মতিঝিল, পল্টন, গুলিস্তান, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, খিলগাঁও ও উত্তরার সড়কগুলোতে লোকজন তেমন নেই। ঢাকার বেইলি রোডে তেমন ভিড় নেই। তবে সন্ধ্যার পর লোকজন ঢাকায় বের হবেন, ঘুরবেন আর পহেলা বৈশাখের আনন্দে মেতে উঠবেন বলে মনে করা হচ্ছে। 

এমআইকে/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর