রোববার, ১৯ মে, ২০২৪, ঢাকা

ইজারাদারের কাছে অসহায় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ!

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪৯ পিএম

শেয়ার করুন:

ইজারাদারের কাছে অসহায় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ!
মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানা। ছবি: ঢাকা মেইল

মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ হালকা ও ভারী যানবাহন পার্কিংয়ের জন্য যে ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে, তার চেয়ে দ্বিগুণ এবং ঈদ বকশিসের নামে বাড়তি টাকাও ইজারাদার আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে নজরে আনা হলে তারা বলেছেন, লিখিত আকারে অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইজাদারের কাছে কর্তৃপক্ষ অনেকটা অসহায়। ফলে এ ব্যাপারে কঠোর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। লিখিত অভিযোগ এবং শুনানির কথা বলে কালবিলম্ব করে।

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) ঈদুল ফিতরের দিন মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানার পাশে থাকা পার্কিং অংশে সরেজমিনে বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

জাতীয় চিড়িয়াখানা ঘুরে নানা অনিয়ম দেখলেন মন্ত্রী

জানা গেছে, চিড়িয়াখানা এলাকার বাইরে ভারী যানবাহনের (বাস, ট্রাক, লরী, মিনিবাস, কার্গো, দ্বিতল বাস ইত্যাদি) ৪০ টাকা, ছোট মোটরযানের (মাইক্রোবাস, ট্যাক্সি, জিপ, কার, পিকআপ ইত্যাদি) ২০ টাকা, বেবি ট্যাক্সি, সিএনজি, অটোট্যাম্পু, মোটরসাইকেল ও মিশুকের জন্য ১০ টাকা এবং ভ্যান ও রিকশা এবং বাইসাইকেল থেকে দুই টাকা হারে ফি আদায় করতে হবে। এ সংক্রান্ত একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে পার্কিং গেটের সামনে। অথচ পাশেই পার্কিং করার জায়গাটিতে চলছে বাড়তি টাকা আদায়ের মহোৎসব।  

Chiri2

রুবেল (ছদ্মনাম) নামে একজনের সাথে মোটরসাইকেল রাখা বাবদ ৫০ টাকা নিয়ে তর্ক হচ্ছিল। এসময় এই প্রতিবেদক বিষয়টি নিয়ে ইজারাদার কর্তৃপক্ষের কর্মী সাকিবকে প্রশ্ন করলে তার জবাব ছিল- মোটরসাইকেল ফি ৪০ টাকা। আমরা ঈদের বকশিস হিসেবে ১০ টাকা মিলে ৫০ টাকা নিচ্ছি। তবে এর বেশি তিনি ও তার সাথে থাকা ব্যক্তিরা কিছু বলতে রাজি হননি। বাড়তি টাকা আদায়ের কারণে কম বেশি আজ অনেকের সাথে ইজারাদারের কর্মীদের তর্ক-বিতর্ক হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এবার চিড়িয়াখানা গেটের পাশে থাকা পার্কিংয়ে মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস এবং সাইকেল থেকে শুরু করে প্রতিটি যানবাহ রাখার জন্য বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে ইজারাদারের পক্ষ থেকে নিয়োগকৃত কর্মীদের সাব জবাব, তারা ৫৬ লাখ টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছেন। তাদের আরও অনেক খরচ আছে।

আরও পড়ুন

কম মূল্যে মিরপুর চিড়িয়াখানা ইজারা কেন বেআইনি নয়: হাইকোর্ট

সেই পার্কিং জোনে টিকিট কাটার দায়িত্বে থাকা সাকিব ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ভাই! আমাদের কিছু করার নাই। কর্তৃপক্ষ যা বলেছে আমরা তাই করছি।’

তবে কয়েকজন ভুক্তভোগী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, তারা এর আগে চিড়িয়াখানায় এসেছেন। তখনও মোটরসাইকেল ১০ টাকা ছিল। কিন্তু এবার ১০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। যা ডাকাতির সাথে তুলনা করেছেন তারা।

তারা বলছেন, ১০ টাকার জায়গায় ২০ টাকা রাখতে পারে, কিন্তু ৫০ টাকা কী করে হয়। এছাড়াও তারা যে ঈদের নামে বকশিস নিচ্ছে সেটাও তো বেআইনি। আমরা এসব কার কাছে বলব।

Chiri3

পরে পার্কিং এলাকাটি সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, সারাদিন মিলে অন্তত এক হাজার মোটরসাইকেল, শতাধিক মাইক্রোবাস পার্কিং হয়। তারা যানবাহন রাখার জন্য ফি ছাড়াও হেলমেট রাখার জন্য আলাদা টাকাও রাখছে। এটিকে তারা বাড়তি বলতে নারাজ।   

ভুক্তভোগীরা বলছেন, চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ কি ইজারাদারের কাছে অসহায়! এমন অনিয়ম জেনেও তাদের বিরুদ্ধে যদি তারা ব্যবস্থা না নেয় তাহলে জনগণ ভিন্ন বার্তা পাবেন তাদের ব্যাপারে। বাড়তি টাকা আদায়কে জুলুম বলছেন তারা। সেই সাথে ইজারাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি তাদের।

আরও পড়ুন

চিড়িয়াখানায় হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে কিশোরের মৃত্যু

ঢাকা মেইলের এই প্রতিবেদক এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জাতীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে অভিযোগের ব্যাপারে লিখিত আবেদন দিতে বলেন। তিনি বলেন, আমরা যেহেতু মৌখিক শুনলাম, লোক পাঠিয়েছি, যদি সত্যতা মেলে তবে যাচাই বাছাই শেষে উভয় পক্ষকে ডাকব। শুনানির পর তাদের ইজারা বাতিলের জন্য বলা হবে।

এই কর্মকর্তা জানান, আজ প্রায় লাখ ছাড়িয়ে যাবে দর্শনার্থী। আগামীকাল তারা আরও বেশি দর্শনার্থীর আশা করছেন।

এমআইকে/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর