রোববার, ১৯ মে, ২০২৪, ঢাকা

গভীর রাত পর্যন্ত বিপণিবিতানে মানুষের উপচেপড়া ভিড়

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪১ এএম

শেয়ার করুন:

গভীর রাত পর্যন্ত বিপণিবিতানে মানুষের উপচেপড়া ভিড়

রাত দেড়টা। যেদিকে চোখ যায় মানুষ আর মানুষ। মাঝে মাঝে জ্বলছিল তাদের হাতে থাকা শত শত মোবাইল। দশ গজ সামনে যেতেই একেকজনের লেগে যাচ্ছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট। পা ফেলানোর জায়গা নেই। এতো মানুষের ভিড় যে কেউ একজন দুর্ঘটনাবশত নিচে পড়ে গেলেই তার অবস্থা কাহিল হয়ে যাবে। প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি সব জায়গায় মানুষে ঠাসা। মানুষের জটে যানবাহনে ঠিকভাবে চলাফেরা করতে পারছে না। বাস রিকশা ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে। তবে হাজার হাজার মানুষের এই জট কোনো সভা সমাবেশের নয়, ঈদের কেনাকাটার।

রোববার রাত আটটার পর থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত রাজধানীর নিউ মার্কেট, গাউছিয়া, চন্দ্রিমা ও চাঁদনীচকসহ আশপাশের সড়ক অলিগলি ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। 


বিজ্ঞাপন


আফসানা বেগম একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। সন্ধ্যায় ধানমন্ডি থেকে বের হয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিউ মার্কেটে কেনাকাটা করতে শুরু করেন। কেনাকাটা করতে প্রায় রাত ১২টা পার বেজে যায়। বের হয়ে দেখতে পান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে মার্কেটের আশপাশের সকল রাস্তায় মানুষ গিজগিজ করছে। উপায় না পেয়ে আধা ঘণ্টা বসেছিলেন মার্কেটের সিঁড়িতে। ধীরে ধীরে ধীরে তিনি বিকল্প পথে রওনা হন।

তিনি জানান, ঢাকা নিউ মার্কেটের দক্ষিণ পাশে থাকা সিঁড়ি থেকে নেমে তিনি প্রধান সড়কে গিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু আর এগোতে পারছিলেন না। বাধ্য হয়ে ফিরে আসেন আবার মার্কেটে।

Dhaka-4আফসানা বলেন, এত মানুষের ভিড় যে কেউ পায়ের নিচে পড়লে পিষ্ট হয়ে যাবে! এক কদম পা বাড়াতেই কয়েক মিনিট লেগে যাচ্ছে। এ যেন মানুষের যানজট! 

রাত একটা পর্যন্ত নিউ মার্কেটে এলাকায় দেখা গেছে, সিটি কলেজ থেকে নীলক্ষেত মোড় আসা ও নীলক্ষেত থেকে সিটি কলেজ যাওয়ার সড়কটি মানুষে ঠাসা। গাউছিয়া মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, চাঁদনী চক এবং ঢাকা নিউ মার্কেটের সামনের সড়কে হাজার হাজার মানুষ। তবে বেশিরভাগ ক্রেতা উঠতি বয়সের। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ। দোকানগুলোতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কর্মীরা। বিক্রি বাট্টাও জমে উঠেছে। এর ফাঁকে বিভিন্ন দোকানের কর্মীরা ক্রেতা জমাতে হাঁকডাঁক করছেন।


বিজ্ঞাপন


রোববার নিউমার্কেট এলাকায় দিনভর যানজট ছিল। সন্ধ্যার পর থেকে তা বাড়তে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট, নীলক্ষেত মোড়, ইডেন কলেজ ও নিউমার্কেট এলাকার ছোট ছোট রাস্তাগুলোতে যানজট ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সেই যানজট নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয়েছে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। একপাশ ছেড়ে দিয়ে আরেক পাশ ধরতেই যানবাহনের চালকরা বিরক্ত হয়ে হর্ণ শুরু করছিলেন।

নীলক্ষেত থেকে সিটি কলেজ পর্যন্ত দুই পাশে যানবাহন ছিল হাতেগোনা। কিন্তু মানুষ ছিল হাজারে হাজার। ইফতারের পর মার্কেটগুলোতে বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী-পুরুষেরা দলে দলে আসতে শুরু করেন। ফলে অল্প কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই এলাকার মার্কেটগুলো ভরে যায় হাজার হাজার ক্রেতায়।

Dhaka-3প্রধান সড়ক ছাড়াও মার্কেটের ভেতর-বাহির কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। অনেকে তো ভিড়ে মার্কেটে ঢুকতে রীতিমতো হিমশিম খেয়েছেন। 

যাত্রাবাড়ী থেকে ছোট ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন কোরিয়া প্রবাসী আমিনুল ইসলাম। রাত বারোটার দিকে তিনি মার্কেট শেষ করে বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু মার্কেট থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাজারো মানুষের এই দৃশ্য দেখে দাঁড়িয়ে যান। সেখানে অনেকক্ষণ থেকে ধীরে ধীরে বউ বাচ্চাকে নিয়ে বেরিয়ে যান।

যেতে যেতে আমিনুল বলেন, এমন অবস্থা হবে কল্পনা করতে পারি নাই। এখান থেকে বের হব কখন আর বাসায় যাব কখন! এমন হবে জানলে সন্ধ্যায় মার্কেট করে বাসায় চলে যেতাম। 

কলেজ পড়ুয়া আসিফ আহমেদ পাঞ্জাবি কেনার জন্য নিউমার্কেটে এসেছিলেন। পাঞ্জাবিও কেনেন কিন্তু মার্কেট এলাকার ভিড় দেখে তিনি বিরক্ত। বলেন, আসার সময় সিটি কলেজ থেকে চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট পর্যন্ত আসতে প্রায় ৫০ মিনিট লেগেছে। এবার কতক্ষণ লাগে আল্লাহ ভালো জানে।

Dhaka-5প্রতি বছর নিউ মার্কেট ও গাউছিয়া এলাকায় ঈদের আগে ক্রেতাদের এমন উপচেপড়া ভিড় জমে। ঈদে আগে এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদের এখনো তিনদিন বাকি। আগামীকাল সোমবার বিকেল থেকে গ্রামের উদ্দেশ্যে ছুটবেন অনেকে। তাই এই কেনাকাটার ব্যতি ব্যস্ততা। অন্যদিকে ক্রেতা ধরতে দোকানদারদের হাঁকডাঁক। 

চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় অধিকাংশ পুরুষদের দোকান। সেখানেও ভিড়। কেউ কিনেছেন জুতা, কেউ পাঞ্জাবি। বাদ যায়নি হাল ফ্যাশনের বাজারে আসা বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও ডিজাইনের ঘড়িও।

মোহাম্মদপুর থেকে আসা সিফাত নামে এক যুবক জানালেন, তিনি তার চাচাতো ভাই মারফতে জানতে পেরেছেন নিউমার্কেটে পাঞ্জাবি,প্যান্ট এবং টি-শার্টে অফার চলছে। তাই তিনি ছুটে এসেছেন।

Dhaka

সৌদি প্রবাসী রফিকুল ইসলাম বলছিলেন, গত তিন বছর আগে যেসব কাপড় কিনেছি সেগুলো এখন  দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ দাম চাচ্ছেন দোকানিরা। ফলে বাধ্য হয়ে স্ত্রী ও সন্তানের জন্য কয়েক সেট কাপড় কিনেছেন। প্রতি বছর নিউ মার্কেট ব্যবসায়ীরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে গলাকাটা দাম নেন বলে অভিযোগ তার। 

অন্যদিকে দোকানিরা জানান, বর্তমানে সুতা এবং শ্রমিক মজুরি বেড়েছে। ফলে কাপড়ের দামও বেড়েছে। তারা স্বল্প লাভ রেখে কাপড় বিক্রি করছেন বলে দাবি করেছেন অধিকাংশ বিক্রয়কারী। 

এমআইকে/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর