শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ঢাকা

নম্বর ক্লোন করে এসআর সেজে বিকাশ এজেন্টের অর্থ আত্মসাৎ করত প্রতারকরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫৩ পিএম

শেয়ার করুন:

বিকাশ এজেন্টের নম্বর ক্লোন করে এসআর সেজে অর্থ আত্মসাৎ করত প্রতারকরা

বিকাশ বা নগদের এসআরদের সখ্য সখ্যতা গড়ে তুলে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন নতুন এজেন্টদের নম্বরের তালিকা হাতিয়ে নিত তারা। এরপর এসআর সেজে তারা নতুন কোনো এজেন্টের নম্বরে কল করত। তাকে ফোনে বলা হতো আমি বিকাশ বা নগদের এসআর। আপনি তো শুধু টাকা পাঠান। নতুন কিছু সেবা যুক্ত করে নিলে লাভ বেশি পাবেন। তাদের এমন কথা শুনে অবিশ্বাস করলে তারা বিকাশের এসআরের সাথে যোগাযোগ করতে বলত। এরই মধ্যে সেই এসআরের নম্বর ক্লোন করে নিত। যাকে দোকানি কল দেবে। পরে দোকানি ক্লোন করা এসআরের নম্বরে কল দিলে প্রতারকরা বলত, আমাদের সিনিয়র স্যার আপনাকে হয়তো ফোন দিয়েছিল, আপনি তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন। এবার এজেন্ট দোকানির বিশ্বাস জন্মে।
 
এর পর দোকানিকে প্রতারক চক্রের সদস্যরা ফোন দিলে তারা যেভাবে তথ্য চায় সেভাবে তথ্য দিত। কিন্তু এরই মাঝে হাতিয়ে নেওয়া হত সেই বিকাশ এজেন্টের গোপন পিন নম্বর। তার বিকাশ অ্যাকাউন্ট পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে পরবর্তীতে ব্যালেন্সের সব টাকাই হাতিয়ে নিত তারা। 

চক্রটি কাজের জন্য প্রথমে পেইড অ্যাপসের মাধ্যমে নতুন বিকাশ বা নগদের অ্যাপস বানায়। এরপর চার ডিজিটের পাসওয়ার্ড দেন তারা। গত প্রায় দুই বছর ধরে এ কাজ করে আসছিল চক্রটি। এই সময়ে তারা ৬০ থেকে ৭০ জন এজেন্টের নম্বর ক্লোন করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।


বিজ্ঞাপন


মঙ্গলবার (০২ এপ্রিল) রাতে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এবং ফরিদপুরের ভাঙা উপজেলায় অভিযান চালিয়ে বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রটির চার সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১০। তাদেরকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে।

বুধবার (০৩ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের সব তথ্য জানান র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি ফরিদ উদ্দিন।  

গ্রেফতাররা হলেন- সুমন ইসলাম (২০), মাহমুদুল হাসান পলক (২০), সাব্বির খন্দকার (১৯), সাকিব (১৯) ও রাসেল তালুকদার (২৩)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ২২টি মোবাইল ফোন, ৩৫টি সিম কার্ড, ৫টি মোবাইলের চার্জার, ১টি ল্যাপটপ, ১টি ব্যাগ ও নগদ ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।


বিজ্ঞাপন


যেভাবে এজেন্টকে বোকা বানায় প্রতারকরা

অতিরিক্ত ডিআইজি ফরিদ জানান, সুমন ইসলাম মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ/নগদ) ব্যবসায় অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে এজেন্টদের কাছ থেকে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে প্রতারিত করে অর্থ আত্মসাৎকারী চক্রটির মূল হোতা। তার নেতৃত্বে চক্রটি প্রায় ৮-৯ মাস ধরে বিভিন্ন বিকাশ/নগদ ব্যবসায়ী এজেন্টদের সাথে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিল। তারা সারাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধ উপায়ে নতুন এজেন্টদের নম্বর সংগ্রহ করতো। সুমন প্রথমে বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে বিকাশ/নগদের প্রতিনিধিদের নম্বর ক্লোন করে বিভিন্ন বিকাশ/নগদ এজেন্টদের ফোন দিয়ে নিজেকে বিকাশ/নগদের প্রতিনিধির পরিচয় দিতো। তারা প্রতিদিন গড়ে ২০টা নম্বরে কল দিত। এরপর বিকাশ/নগদ এজেন্টদেরকে হাজারে ৪ টাকার পরিবর্তে ৮-১০ টাকা লাভ করার বিভিন্ন অফার সম্পর্কে অবহিত করত। এক্ষেত্রে এজেন্টরা সেই অফার সম্পর্কে অবগত নয় বললে সুমন এজেন্টদের নিকট হতে বিকাশ/নগদের এসআরের ফোন নম্বর নিয়ে ক্লোন করে ওই নম্বর হতে এজেন্টদের ফোন করে সার্ভিস রিপ্রেজেনটেটিভের (এসআর) পরিচয় দিয়ে বলতো উনি আমাদের বস উনি যা বলেন সেভাবে কাজ করেন বলে ফোন কেটে দেয়। 

তিনি আরও জানান, তারপর সুমন মোবাইলে ওটিপি প্রেরণের মাধ্যমে কৌশলে এজেন্টদের নিকট হতে বিকাশ/নগদের এজেন্ট নম্বরের পাসওয়ার্ডটি সংগ্রহ করতো। একইভাবে একাধিক ভিকটিমদের পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করে একটি মোবাইলে একাধিক বিকাশ/নগদ অ্যাপস ডাউনলোড করে এবং প্রত্যেকটি অ্যাকাউন্টে লগইন করে রাখত। সেই অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা প্রবেশ করা মাত্র সুমন মোবাইলে নটিফিকেশনের মাধ্যমে তা জানতে পারে এবং সাথে সাথে ওই টাকা তার অন্যান্য সহযোগী মাহমুদুল, সাব্বির, সাকিব ও রাসেলের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে। পরবর্তীতে রাসেল সেই টাকা তাদের আশপাশের বিভিন্ন এলাকা হতে ক্যাশআউট করে সুমনের কাছে নিয়ে আসে। এ টাকা তারা সবাই মিলে ভাগ করে নিত। এই চক্রটি ২ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৬০-৭০ জন বিকাশ/নগদ এজেন্ট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তারা সবাই স্বল্প সময়ে কোটিপতি হবার আশায় এবং মাদক সেবনের অর্থ যোগান দিতে এই প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

এমআইকে/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর