পাবনার রূপপুরেই দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছি। আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য চেষ্টা করেছিলাম দক্ষিণে। কিন্তু দক্ষিণে আমাদের যে মাটি, সে মাটি এতো নরম; প্রত্যেকটা দিন আমরা দেখেছি আসলে সেখানে করা সম্ভব নয়। এখন যেখানে আমরা করেছি, এটা বাস্তবায়ন সম্পন্ন হওয়ার পর দ্বিতীয়টাও আমরা রূপপুরে করতে পারব।
সোমবার (১১ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শাপলা হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, এনএসটি ফেলোশিপ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক/বিজ্ঞানীদের বিশেষ গবেষণা অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ার সহযোগিতায় ১২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয়ে রূপপুরে তৈরি হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই কেন্দ্র দুটি ইউনিট নিয়ে গঠিত। ভিভিইআর-১২০০ প্রযুক্তির এই পারমাণবিক কেন্দ্রের ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিটের কাজ প্রায় শেষ। চলতি বছরেই সেখান থেকে জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বিদ্যুৎ।
গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর রাশিয়া থেকে প্রথমবারের মতো দেশে আসে নিউক্লিয়ার ফুয়েল বা পারমাণবিক জ্বালানি। এরপর ৫ অক্টোবর এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে পারমাণবিক জ্বালানি হস্তান্তর অনুষ্ঠান হয়। ওই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের প্রত্যেকটি দ্বীপে অ্যাটমিক এনার্জি থেকে লোক পাঠিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, মাটির দেখা হয়েছে। আসলে যেখানে মাটি খুব নরম, সেখানে করা সম্ভব হবে না। আমি এখনই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রীকে বললাম যে, এটার কাজ আমাদের শেষ হবে; সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয়টা যাতে শুরু করতে পারি এখন থেকে, আমাদের সেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
সরকারপ্রধান জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞানকে খুব গুরুত্ব দিতেন। তিনি সদ্য স্বাধীন দেশে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এবং বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত পরমাণু শক্তি কমিশন মানুষের স্বাস্থ্য পরিচর্যা অত্যাধুনিক নিউক্লিয়ার মেডিসিন প্রচলন করেছে।
বিজ্ঞাপন
পঁচাত্তরের পর সামরিক স্বৈরশাসকরা বিজ্ঞানকে গুরুত্ব দেয়নি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতা ছিলো তাদের কাছে ভোগের বস্তু। আর ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার আসার আগে গবেষণায় কোনো বরাদ্দ ছিলো না এবং কোনো প্রতিষ্ঠানও করা হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গবেষণা ছাড়া কোনো উৎকর্ষতা অর্জন করা যায় না। কৃষিতে গবেষণার কারণে ১৯৯৯ সালে মাত্র তিন বছরের মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয় বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞান শিক্ষায় গুরুত্ব বাড়াতে এবং সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ওপর আলোকপাত করেন তিনি। বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা অনেক মেধাবী। আমরা নিজেরাই অর্জন করব, কারো কাছে হাত পেতে চলব না। প্রত্যেক বিভাগীয় শহরেই নভোথিয়েটার করা হবে। ছেলেমেয়েরা যাতে আরও বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে গড়ে ওঠে সে লক্ষ্য সরকারের।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ৫৪ গবেষকের হাতে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, এনএসটি ফেলোশিপ ও বিশেষ গবেষণা অনুদানের চেক দেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে ১০ জনকে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, ১৯ জনকে বিশেষ গবেষণা অনুদান এবং ২৫ জনকে ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ফেলোশিপ দেওয়া হয়।
এমআর