দেশে প্রতিনিয়ত ঘটছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। কিন্তু এরপরও বাড়ছে না সচেতনতা। শুধুমাত্র বেপরোয়া গতির কারণেই দুর্ঘটনাগুলো ঘটেই চলেছে। এসব দুর্ঘটনা যারা মারা যাচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই কিশোর ও তরুণ।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার বেড়েছে ১৬ শতাংশ। আর এসব দুর্ঘটনায় মৃত্যুহার বেড়েছে ৫৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। এসব দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা, ভারি যানবাহনের চাপা ও ধাক্কা দেওয়ার কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন তারা। তবে এজন্য চালকরাও কম দায়ী নয়।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডিতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে গত বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরতে গিয়ে এ তথ্য জানান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এবং কানাডা রিচার্স ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন
২০২৩ সালে সড়কে ঝরেছে ৬৫২৪ প্রাণ
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত বছর দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬ হাজার ৯১১টি। এসব ঘটনায় ছয় হাজার ৫২৪ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন ১১ হাজার ৪০৭ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৯৭৪ জন (১৪ দশমিক ৯২ শতাংশ), শিশু এক হাজার ১২৮ জন (১৭ দশমিক ২৯ শতাংশ)।
শুধুমাত্র মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার তথ্য তুলে ধরে আরও জানানো হয়, ২০২৩ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৫৩২টি। এতে নিহত হয়েছেন দুই হাজার ৪৮৭ জন এবং আহত হয়েছেন এক হাজার ৯৪৩ জন। নিহতদের মধ্যে এক হাজার ৯০৯ জন (৭৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ) ১৪ থেকে ৪৫ বছর বয়সী। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। দুর্ঘটনায় এক হাজার ৪৫২ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২২ দশমিক ২৫ শতাংশ।
বিজ্ঞাপন
২৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ (৭৪৪টি) মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে, ৪১ দশমিক ৫৮ শতাংশ (এক হাজার ৫৩টি) ঘটেছে আঞ্চলিক সড়কে, ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ (৪৩৪টি) ঘটেছে গ্রামীণ সড়কে এবং ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ (৩০১টি) দুর্ঘটনা ঘটেছে শহরের সড়কে বলেও উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুন
রাজধানীর সড়কে ঝরল ৩ যুবকের প্রাণ
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার বিশ্লেষণ তুলে ধরে বলা হয়, অন্য যানবাহনের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছে (৫৭২টি) ২২ দশমিক ৫৯ শতাংশ, মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে (৯০৪টি) ৩৫ দশমিক ৭০ শতাংশ, মোটরসাইকেলে ভারি যানবাহনের চাপা ও ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে (এক হাজার ২৫টি) ৪০ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে (৩১টি) এক দশমিক ২২ শতাংশ। ৩৬ দশমিক ২১ শতাংশ (৯১৭টি) দুর্ঘটনার জন্য মোটরসাইকেল চালক এককভাবে দায়ী ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে ১ হাজার ১১৮৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ৯৪৫ জন। ২০২০ সালে ১ হাজার ৩৮১টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিল ১ হাজার ৪৬৩ জন। ২০২১ সালে ২ হাজার ৭৮টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিল ২ হাজার ২১৪ জন। ২০২২ সালে ২ হাজার ৯৭৩টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিল ৩ হাজার ৯১ জন। যদিও ২০২২ থেকে ২০২৩ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ও মৃত্যু সংখ্যা কমেছে।
নয়টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম এবং সংস্থার নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।
এমআইকে/এমএইচটি

