• সাড়ে ১৩ ঘণ্টা ছুটছে মেট্রোরেল।
• যাত্রীদের মুখে চওড়া হাসি।
• দুর্ভোগ লাঘবে মেট্রোরেল যুক্ত হবে নতুন কোচ
• প্রতিদিন হাজারেরও বেশি এমআরটি পাস নিচ্ছেন যাত্রীরা
• যাত্রীরা সচেতন না হলে দুর্ভোগ কমানো কঠিন
মেট্রোরেলের উত্তরা স্টেশনের কাছেই পরিবার নিয়ে থাকেন মহসিন হোসেন। দৈনন্দিন কাজে তাকে আসতে হয় মতিঝিল-পল্টন, জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায়। এছাড়া দুই সন্তানের লেখাপড়ার কারণে প্রতিদিন আসতে হয় মতিঝিলের দিকে। এতদিন মোটরসাইকেলে চলাচল করলেও এতদূর আসতে বেশ ধকল পোহাতে হতো। সময়ও লাগত অনেক। এমন ভোগান্তি লাঘবে মেট্রোরেল স্বস্তি নিয়ে নিলেও কয়েকদিনের অবস্থা দেখে স্বস্তি পাচ্ছেন না তিনি।
বিজ্ঞাপন
যাত্রীচাপের কারণে সকালে আসতে উত্তরা স্টেশনে অনেক সময় অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে মহসিন হোসেনকে। তার মতো হাজারো যাত্রীকে দীর্ঘসময় অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
একই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বিকেলের দিকে মতিঝিল থেকে গন্তব্যে যাওয়া যাত্রীদের। তাই নিয়মিত মেট্রোরেলে চলাচলকারীদের দাবি দ্রুত যাতে কোচের সংখ্যা বাড়িয়ে ভোগান্তি কমানোর ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি নানা কারণে ট্রেন বিলম্ব করার যে ঘটনা ঘটছে তাও দূর করতে কার্যকর ব্যবস্থা চান যাত্রীরা।
মেট্রোরেলের নিয়মিত যাত্রী মহসিন হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমার বাসা উত্তরা স্টেশনের কাছে। দিনের বেলা নানা কাজে মতিঝিল, প্রেসক্লাব এলাকায় যেতে হয়। মেট্রোরেলের কারণে আমার যাতায়াত অনেক সহজ হয়েছে। আমার দুই ছেলের কলেজ ও ইউনিভার্সিটি যাতায়াত সহজ হয়েছে। কয়েকদিন ধরে দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছে। পিক আওয়ারে অনেক মানুষ উঠতে পারে না। এটা বিবেচনা করা উচিত।'
বিজ্ঞাপন
যাত্রীদের এমন সমস্যার কথা জেনে সমাধানের চেষ্টা করছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় বসার পাশাপাশি দ্রুত কোচ বাড়ানোর কথাও চিন্তা করছে কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে যাত্রী পরিস্থিতিসহ সার্বিক তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সমস্যা সমাধানে উদ্যোগের কথা জানিয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কোম্পানি সচিব (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, 'আমাদের বগি বাড়ানোর চিন্তাও আছে। যে সিস্টেমে আছে সেখানে প্রত্যেক কোচে আরও দুটি বগি যুক্ত করতে পারব। এছাড়া নতুন কোচ প্রয়োজন হলে ভাবা হবে।'
২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু হয়। প্রথমে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলাচল করলেও
গত ৩১ ডিসেম্বর সবশেষ মেট্রোরেলের শাহবাগ ও কারওয়ানবাজার স্টেশন চালু হয়। এর মধ্য দিয়ে এমআরটি-৬ লাইনের উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬ স্টেশনে চালু হয় মেট্রোরেল।
শুরুর দিকে ভাড়া নিয়ে অনেকে আপত্তি তুললেও যানজটের কষ্ট লাঘব হওয়ায় ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে এখন তেমন অভিযোগ নেই। তবে ভোগান্তি যেন না হয় সেজন্য কোচের সংখ্যা বাড়ানো আর সিডিউল বিপর্যয় বন্ধের দাবি জানান তারা।
অবশ্য মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ সিডিউল বিপর্যয়ের জন্য যান্ত্রিক কিছু সমস্যার পাশাপাশি যাত্রীদেরও দায় দেখছে। তাই নির্দেশনা মেনে চলার পাশাপাশি মেট্রোরেল ব্যবহারে অভ্যস্ত হলে এই সমস্যার অনেকটা সমাধান সম্ভব হবে বলে মনে করেন কর্তৃপক্ষ।
যে নিয়মে চলছে মেট্রোরেল
২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে গত ৪ নভেম্বর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করেন তিনি। গত ৩১ ডিসেম্বর সর্বশেষ মেট্রোরেলের শাহবাগ ও কারওয়ানবাজার স্টেশন চালু হয়। এর মধ্য দিয়ে এমআরটি-৬ লাইনের উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬ স্টেশন চালু হয়।
গত ২০ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো সময় বাড়িয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উত্তরা-মতিঝিল রুটে চলছে মেট্রোরেল। এখন থেকে সকাল ৭টা ১০ মিনিট রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করছে।
নতুন সূচি অনুযায়ী সকাল ৭টা ১০ মিনিটে উত্তরা থেকে মেট্রোরেল ছাড়ে। শেষ ট্রেনটি মতিঝিল থেকে ছেড়ে যায় রাত ৮টা ৪০ মিনিটে। তবে এ সময়ে শুধু এমআরটি ও র্যাপিড পাসধারীরা যাতায়াত করতে পারছেন। আর কাউন্টার থেকে সাধারণ টিকিট কিনে যাত্রীরা সকাল ৭টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলাচল করতে পারছেন।
তবে সকালে উত্তরা থেকে আসার পথে, বিকেলের দিকে মতিঝিল থেকে যাওয়ার পথে দেখা যায় যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। দিনভর চলার কারণে বাকি সময়েও যাত্রীতে ঠাসা থাকা মেট্রোরেল। এতে অনেকে ট্রেনে উঠতে পারেন না।
এছাড়া অনেক সময় মেট্রোরেলে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। ত্রুটির কারণে ওই ট্রেন সরিয়ে অন্য ট্রেন আনতে হয়। এতে মেট্রোরেলের চলাচলের সময় ঠিক থাকছে না। ৮ থেকে ১০ মিনিট অন্তর মেট্রো ট্রেন চলাচলের কথা থাকলেও ২০ থেকে ২৫ মিনিট অন্তর মেট্রো ট্রেন চলাচল করে।
সিডিউল বিপর্যয় নিয়ে যা বলছে কর্তৃপক্ষ
শিডিউল বিপর্যয়ের বিষয়ে ডিএমটিসিএল'র কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, প্রত্যেকটা ট্রেন তার যাত্রীর ওজন ক্যালকুলেট করে ওই অনুযায়ী প্রত্যেক স্টেশনে অটো ব্রেক করে। এই সিস্টেম সিগন্যালে কোনোও মেসেজে টেকনিক্যাল ইস্যু যদি হয়, তাহলে সেটা স্টেশনের ট্রেনে ঢোকার জন্য যেসব দরজা আছে তার আগে অথবা পরে থেমে যায়। তখন সেটাকে ম্যানুয়ালি সঠিক জায়গায় সেট করতে হয়। তখন দুই তিন মিনিট লাগে।
এই সমস্যা সমাধানে কাজ করার কথা জানিয়ে আবদুর রউফ বলেন, ‘এটা এড্রেস করানোর জন্য আমরা আমাদের কনট্রাকটরসহ আরও যারা আছে তাদের সঙ্গে মিটিং করেছি। শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হবে।’
ডিএমটিসিএল'র কোম্পানি সচিব আরও বলেন, ‘অতিরিক্ত যাত্রীর কারণেও ট্রেনের দরজা খোলা বন্ধ নিয়ে সমস্যা হয়। তখন স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়তে দেরি হয়। অনেক সময় যাত্রীরা গেটে দাঁড়িয়ে থাকেন। এতে দরজা বন্ধ হতে সময় লাগে। তবে ধীরে ধীরে সবাই অভ্যস্ত হলে সমস্যা অনেকটা কেটে যাবে।’
তিন দিনে ২০ হাজার এমআরটি পাস
ভোগান্তি থেকে বাঁচতে এবং বাড়তি সময় চলাচলের সুযোগ নিতে গত কয়েকদিনে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে এমআরটি পাস নেওয়া।
ডিএমটিসিএল'র কোম্পানি সচিব (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ আবদুর রউফ জানিয়েছেন, পুরো রুট চালু হওয়ার পর ২০ হাজারেরও বেশি এমআরটি পাস কিনেছেন যাত্রীরা।
তিনি বলেন, নতুন অনেকে মেট্রোরেল ব্যবহার শুরু করায় ভিড় বেশি হচ্ছে। এতদিন একক টিকিট কেটে যারা যাতায়াত করেছেন তাদের অনেকে এমআরটি পাস কিনেছেন। বাকিরাও কিনবেন। তখন আর লাইনে দাঁড়ানোর ঝামেলা থাকবে না।
বিইউ/এমআর