ঢাকাসহ সারাদেশে জেঁকে বসেছে শীত। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলে এর তীব্রতা সবচেয়ে বেশি। হিমবাতাসের সঙ্গে ঘন কুয়াশা যোগ হওয়ায় শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। এর ফলে জনজীবন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। শিশু ও বৃদ্ধরা ঠান্ডাজনিত নানা রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে।
ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক, নৌ ও আকাশপথে চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। শীতের এমন অবস্থার মধ্যেই বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এরপর আবার শীত বাড়বে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিজ্ঞাপন
কয়েকদিন ধরেই সারাদেশে হাড় কাঁপাচ্ছে শীত। রাত থেকে শুরু করে দিনের অধিকাংশ সময় কুয়াশায় ঢাকা থাকছে চারপাশ। ঘনকুয়াশার কারণে দেখা মিলছে না সূর্যের। দেশেও কোথাও কিছু সময়ের জন্য সূর্য উঁকি দিলেও তা উত্তাপ ছড়াতে পারছে না।
শীতের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। অসহায় মানুষেরা কাজের জন্য ছুটতে পারছেন না। সহায়তার জন্য আবেদন করেছেন তারা।
কয়েকটি জেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর
মৌলভীবাজার: দুই দিন ধরে সূর্যের দেখা নেই চায়ের রাজ্য মৌলভীবাজারে। হিমশীতল বাতাস আর ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে গোটা জনপদ। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তীব্র ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষ।
বিজ্ঞাপন
সোমবার শ্রীমঙ্গলস্থ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তবে জেলার কোথাও আকাশে রোদের দেখা না মেলায় ঠান্ডা বিরাজমান রয়েছে।
বেলা বাড়ার সঙ্গে কিছুটা কুয়াশা কাটলেও কমেনি শীত, মেলেনি সূর্যের দেখা। সন্ধ্যায় মৃদু শীতল বাতাসে শীতের তীব্রতা বাড়তে পরে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। আগামী দুই একদিনের মধ্যে তাপমাত্রা আরও নিচে নামতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শ্রীমঙ্গলের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার পর্যবেক্ষক আনিস আহমেদ জানান, সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ধরা হয়েছে। এমন আবহাওয়া আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
রাজশাহী: রাজশাহীতে হাড় কাঁপানো শীত পড়েছে। কয়েকদিন ধরেই শীতের তীব্রতা বেড়েছে। হিমেল বাতাসে বেড়ে গেছে শীতের তীব্রতা। কয়েকদিন ধরে সূর্যের মুখ দেখতে পায়নি রাজশাহীর মানুষ। গত দুদিনের তুলনায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বাড়লেও বেশি ঠান্ডা অনুভূত হয়েছে সোমবার। সকালে ঘন কুয়াশায় ঢেকে ছিল মাঠ ঘাট। বেলা বাড়ার পর কুয়াশা কাটলেও সূর্যের দেখা না পাওয়ায় রাস্তায় লোকজনের চলাচল কমেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঠান্ডায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে জেলার মানুষ। রাত থেকে কনকনে ঠান্ডায় শীত নিবারণের জন্য তারা খড়কুটো জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিচ্ছেন। বোরো মৌসুমকে সামনে রেখে ঠান্ডা উপেক্ষা করে মাঠে কাজ করছেন অনেক কৃষক। কনকনে ঠান্ডায় সময়মতো কাজে বের হতেও পারছেন না তারা। চারিদিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ফোটার মতো পড়ছে কুয়াশা। এমন অবস্থায় শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছেন বিপাকে।
শীতজনিত রোগ সর্দি-কাশি, ঠান্ডা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানিসহ শীতজনিত নানা রোগ নিয়ে শিশু এবং বয়স্করা ভর্তি হয়েছেন জেলা-উপজেলার বিভিন্ন সরকারি ও প্রাইভেট হাসপাতালে।
নীলফামারী: ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা উত্তরের জেলা নীলফামারী। কুয়াশার সঙ্গে ঝরছে বরফের শিশির। থার্মোমিটারের স্কেলে তাপমাত্রা বাড়লেও কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এই জেলা। শীতের দাপটে বেশ কাবু হয়ে পড়েছেন দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষেরা। সপ্তাহজুড়ে দেখা মেলেনি সূর্যের। ঘন কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সেই সঙ্গে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হাসপাতালে।
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে নীলফামারীর সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সপ্তাহ ধরে জেলার তাপমাত্রা ৯ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। দিনের অধিকাংশ সময় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় সূর্য উত্তাপ ছড়াতে না পারায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা।
এমন অবস্থায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন ঘরের বাইরে বের না হওয়ায় রাস্তাঘাট, হাটবাজার, রেলস্টেশন বাস টার্মিনালসহ লোকালয়ে মানুষজনের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। সরকারি-বেসরকারি অফিসে চাকরিজীবীরা আসলেও কাজকর্মে চলছে স্থবিরতা। জীবিকার তাগিদে নিম্ন আয়ের মানুষরা বের হলেও কাজ না পেয়ে পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। রিকশা-ভ্যানচালক, দিনমজুর, কৃষি শ্রমিকরা পড়েছেন চরম বিপাকে।
শহরের কালীতলা এলাকার রিকশা একরামুল হক বলেন, কয়েক দিন থেকে খুব ঠান্ডা। মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। শহরে লোকজনও অনেক কম, রিকশার যাত্রী হচ্ছে না। শীতের কারণে আমরাও বিপদে পড়ছি। পেট খায় তাই ঠান্ডা সহ্য করি বাহিরে বের হইছি।
সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হোসেন বলেন, এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে এ অঞ্চলের তাপমাত্রা ৯ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। গতকালের থেকে আজকে তাপমাত্রা একটু বেড়েছে। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়তে পারে।
এদিকে ঠান্ডা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের হার বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালগুলোয় রোগীর চাপও বেড়েছে।
নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা টুপামারী এলাকার শিশু রায়হানের মা সালমা খাতুন ঢাকা মেইলকে বলেন, তিন দিন ধরে আমার বাচ্চার জ্বর শ্বাসকষ্ট তাই হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ডাক্তারের চিকিৎসায় এখন ভালো আছে।
নীলফামারীর জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আউয়াল ঢাকা মেইলকে বলেন, শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিদিন যেখানে চার থেকে পাঁচজন শিশু ভর্তি হতো সেখানে বর্তমানে ২০ থেকে ২৫ জন ভর্তি হচ্ছে। শিশুদের সকালে ঘর থেকে বের না করে কুসুম গরম পানি খাওয়ানো ও সতেজ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
নীলফামারীর জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, শীত মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা প্রস্তুত রয়েছে। শীতবস্ত্র হিসেবে জেলার ছয় উপজেলা ও চার পৌরসভায় তিন দফায় ৩৬ হাজার ৮৮০টি কম্বল পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শীতার্ত মানুষের কথা চিন্তা করে আরও শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশা করি দ্রুত শীতবস্ত্র পাওয়া যাবে। তা পেলেই শিগগিরই বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে।
এমআর

