রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

অল্প দূরত্বের ভাড়া কয়েকগুণ বেশি

মো. ইলিয়াস
প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল ২০২২, ০২:৪৭ পিএম

শেয়ার করুন:

অল্প দূরত্বের ভাড়া কয়েকগুণ বেশি

ঈদযাত্রায় গণপরিবহনের ভাড়া কয়েকগুণ বেশি নেওয়া হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বাড়ানো হয়েছে অল্প দূরত্বের পরিবহনে। 

শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) রাজধানীর সায়েদাবাদ এবং যাত্রাবাড়ী বাস কাউন্টারগুলোতে ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। 


বিজ্ঞাপন


রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া ঘাট এসি গাড়ির ১২০ টাকার ভাড়া যাত্রীদের থেকে নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা এবং ননএসি ৮০ টাকার ভাড়া দুইশত টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। 

এদিকে ঢাকা থেকে কুমিল্লা, নরসিংদী, চাঁদপুর সব রুটে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। এশিয়ান ট্রান্সপোর্ট ঢাকা থেকে কুমিল্লা ১২০ টাকার ভাড়া ১৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ঢাকা থেকে নরসিংদীর রায়পুরা ৩৫০ টাকার ভাড়া বৃদ্ধি করে ৫০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

jatri 

যদিও যাত্রাবাড়ি থেকে মাওয়া ঘাটে ইলিশ পরিবহন দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। ইলিশ পরিবহন এ রেগুলার ভাড়া ৮৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা বৃদ্ধি করে ১০০ টাকা করা হয়েছে। 


বিজ্ঞাপন


রাজধানীর সায়েদাবাদ দেখা যায় শরীয়তপুর পরিবহনে ৯০ টাকার ভাড়া এখন নেওয়া হচ্ছে দুইশত টাকা। ভাড়া বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বাসের কন্ডাক্টর মো. নজরুল ইসলাম বলেন, যাওয়ার সময় ভরপুর যাত্রী থাকলেও আসতে হয় একেবারে খালি। এছাড়া খরচ অনেক বেড়ে গেছে। জায়গায় জায়গায় যে চাঁদা ছিল তা এখন দ্বিগুণ করে দিতে হয়। এখন যাত্রীদের থেকে না নিলে এই টাকা আমরা কিভাবে দেব।

যাত্রাবাড়ি থেকে মাওয়া ঘাট পর্যন্ত এসি গাড়ির ১২০ টাকার ভাড়া ঈদ উপলক্ষে নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া এর কারণ জানতে চাইলে কন্ডাক্টর মোহাম্মদ ফারুক জানান, যাত্রাবাড়ি থেকে মাওয়া ঘাট পর্যন্ত চার স্থানে চাঁদা দিতে হয়। ঈদ উপলক্ষে চাঁদার পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ কারণে অতিরিক্ত ভাড়া নিতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতাদের ঈদ বকশিস এবং পরিবহন শ্রমিকদের চাঁদা সব মিলে খরচের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। 

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আপনারা শুধু আমাদের টাই দেখেন কিন্তু যারা ঈদ উপলক্ষে চাঁদা নিচ্ছে এবং পরিবহন শ্রমিকদের সারাবছর যে টাকা দিতে হয় সেগুলো বৃদ্ধি করা হয়েছে তা কারো চোখে পড়ে না।

jatri

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণ জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ি থেকে মাওয়া রুটের ভিআইপি পরিবহনের চালক মো. আজিম জানান, ঈদ উপলক্ষে পরিবহন সেক্টরে চাঁদার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এ কারণে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে হচ্ছে। যাত্রাবাড়ী থেকে গাড়ি প্রতি রাজনৈতিক নেতাদের ঈদ বকশিস দিতে হয় এক হাজার টাকা করে। পোস্তগোলা ব্রিজ টোল ছাড়াও পরিবহন সেক্টরের চাঁদা, ধলেশ্বরী ব্রিজের টোল ছাড়াও পরিবহন চাঁদা দিতে হয়, এছাড়া মাওয়া ঘাটে প্রতিটা গাড়িতেও পরিবহন চাঁদা দিতে হয়। ঈদ উপলক্ষে চাঁদার পরিমাণ অতিরিক্ত দিতে হয়। সব মিলিয়ে গাড়ি প্রতি অতিরিক্ত খরচ দুই হাজার টাকা। মূলত অতিরিক্ত খরচের জন্য ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, এই যে আপনাকে যে সকল কথাগুলো আমি বলছি এসব জানতে পারলেও আমার সমস্যা হতে পারে। আমার জীবনের উপরে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যাত্রাবাড়ী থেকে রাজনৈতিক নেতারা প্রতিটি গাড়ি থেকে ১ থেকে দেড় হাজার টাকা করে আদায় করে প্রতিটি টিপে। ঘাটে ঘাটে পরিবহনের চাঁদাও বেড়েছে।

সৌদিয়া পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম বলেন, একদিন আগেই আমাদের সকল টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। গতকাল বিকেল থেকে যাত্রীদের চাপ অনেক বেড়েছে। অফিস শেষ করে সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। অনেককে টিকিট দিতে পারিনি। তিনি বলেন, আজ থেকে যাত্রীদের ভিড় আরও বাড়বে। 

শরীয়তপুরগামী যাত্রী মো. মেহেদী হাসান বলেন, পরিবারের সবাইকে আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। সকালে বাস কাউন্টারে এসে দেখি ভাড়া দ্বিগুণেরও বেশি নেওয়া হচ্ছে। এখন ভাড়া বেশি নিলেও তো কিছু করার নেই, আমার তো যেতে হবে। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। কিন্তু এ বিষয়ে প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপ নেই বলেও অভিযোগ করেন এই যাত্রী। 

jatri

রফিকুল ইসলাম নামে আরেক যাত্রী বলেন, গতকাল অফিস শেষ করে বাড়ি ফেরার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তাই আজ সকাল সকাল বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করেছি। ভেবেছিলাম সকাল-সকাল বেশি একটা ভিড় হবে না কিন্তু এসে দেখি প্রচুর ভিড়। একদিকে ভিড় অপরদিকে প্রচণ্ড গরম, তাই কষ্ট করেই যেতে হবে।

ভাড়ার নৈরাজ্যের বিষয়ে পুলিশ কি পদক্ষেপ নিয়েছে জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ি থানার এ এস আই কাজী উজ্জ্বল বলেন, আমরা এখানে তিনজন পুলিশ দায়িত্ব পালন করছি। আমরা চেষ্টা করছি যাতে অতিরিক্ত ভাড়া না নেওয়া হয়। সব গাড়িতে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৮০ টাকার ভাড়া ২০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে এমনকি ১২০ টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। 

তিনি বলেন, আমরা যখন কোন গাড়ির নিকটে যাই তখন মূল ভাড়া নেওয়া হয়। আবার যখন আমরা চলে আসি তখন আবার অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হয়। এখন প্রতিটি গাড়ির সামনে তো আর আমাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু যারা এগুলো করছে তাদের মধ্যে কোন মানবিকতা নেই। 

এমই/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর